‘আ. লীগ ভোট চোরের মূলনীতি, টাকা পাচার আর দুর্নীতি’

সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতিতে দেশ ‘ফোকলা’ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রাজধানীতে সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: পলাশ খান/স্টার

সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতিতে দেশ 'ফোকলা' হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীতে আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এই মন্তব্য করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'ভারতে একটা শ্লোগান ছিল- অলি-গলি ম্যায় শোর হ্যায়, অমুক নেতা চোর হ্যায়, নাম বললাম না। আজকে আমাদের শ্লোগান হচ্ছে, আওয়ামী লীগ ভোট চোরের মূলনীতি, টাকা পাচার আর দুর্নীতি। একমত আছেন আপনারা।'

'আওয়ামী লীগের দুর্নীতি গোটা বাংলাদেশকে একটা ফোকলা অর্থনীতিতে পরিণত করেছে, গোটা দেশ ফোকলা হয়ে গেছে। এরা ভোট চোর, বাংলাদেশের অর্থনীতির চোর… এদের সরিয়ে সত্যিকার অর্থে একটা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে', বলেন তিনি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'আমাদের কথা পরিষ্কার, আওয়ামী লীগ সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়ে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করে তার মাধ্যমে নিরপেক্ষ নির্বাচনে সব দলের একটি নির্বাচন করতে হবে। সেই নির্বাচনে একটি নির্বাচিত পার্লামেন্ট হবে, একটি জনপ্রতিনিধির সরকার হবে। তারাই দেশ চালাবে।'

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'এই সরকার যারা বিনা নির্বাচনে জোর করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে, যারা রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করছে অন্যায়ভাবে, তাদের জনগণের শক্তি দিয়ে সরে যেতে বাধ্য করতে হবে। আজ তাই সারাদেশ উত্তাল হয়ে উঠেছে।'

'আমরা আগস্ট মাস থেকে আন্দোলন শুরু করেছি। ১৭ জন নিরীহ ভাই প্রাণ দিয়েছেন, অসংখ্য মানুষ আহত হয়েছেন, অসংখ্য নেতাকর্মী কারাগারে গেছেন, এখনো যারা কারাগারে আছেন তাদের যে ঋণ সেই ঋণ শোধ করতে, জনগণের দাবি আদায় করতে, স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বেঁচে থাকতে এই সরকারকে অবশ্যই সরাতে হবে। সেজন্য আমাদের সবাইকে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে', যোগ করেন তিনি।

শনিবার বিকেলে সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদে এবং সরকার পদত্যাগের ১০ দফা দাবিতে মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপির যৌথ উদ্যোগে এই সমাবেশ হয়।

ফকিরেরপুল থেকে কাকরাইল পর্যন্ত নয়াপল্টন সড়কজুড়ে হাজার হাজার নেতাকর্মী সমাবেশে অংশ নেন।

যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে রাজধানীতে বিএনপি ছাড়াও পুরানা পল্টন মোড়ে গণতন্ত্র মঞ্চ, বিজয় নগর পানির ট্যাংকের সামনে ১২ দলীয় জোট, আল-রাজী কমপ্লেক্সের সামনে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, আরামবাগে গণফোরাম চত্বরে গণফোরাম-পিপলস পার্টি, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য এবং তেজগাঁওয়ে দলের কার্যালয়ের সামনে এলডিপি আলাদা আলাদা সমাবেশ করেছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর জানায়, ঢাকা ছাড়াও সব মহানগরে বিএনপির উদ্যোগে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। এতে কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেন।

টিআইবিসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সরকারের দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, 'আজকে যত সমস্যা দেখতে পান, এই বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, চাল-ডাল-তেল-লবণ-রসুনের দাম বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য, ব্যাংকিং খাত, অবকাঠামো খাত... সব কিছুর মূলে রয়েছে আওয়ামী লীগের দুর্নীতি।'

'এগুলো আমাদের কথা নয়, এ কথাগুলো কিছুদিন আগে পশ্চিমা বিশ্বের একটি বিখ্যাত পত্রিকা দি ইকোনোমিস্টের। সেই পত্রিকা বলেছে যে, বাংলাদেশকে নিয়ে কিছুদিন আগেও পশ্চিমা রাজনীতি-অর্থনীতিবিদরা খুব জোরেশোরে বলতেন যে, বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের মধ্যে একটা মডেল- মডেল অব ডেভেলপমেন্ট। সেই পত্রিকা এখন বলছে যে, এই মডেল অব ডেভেলপমেন্টের যে ফানুস, যে বেলুন উড়ছিল আকাশে, তা দুর্নীতির কারণে চুপসে পড়ে গেছে', বলেন তিনি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'এ দেশ আর নেই, এ দেশের কিছু আর অবশিষ্ট নেই। এই রাষ্ট্রকে ওরা ধ্বংস করে ফেলেছে। গত দুইদিন আগে সুপ্রিম কোর্টে যে ঘটনা ঘটিয়েছে তা আপনারা দেখেছেন। তারা রাষ্ট্রের সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে একে একে ধ্বংস করে ফেলেছে। এ দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করে ফেলেছে।'

তিনি বলেন, 'আজকে আমাদের প্রধান কথা- এই দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে এই সরকারকে সরাতে হবে, তাদের রেখে এ দেশ টিকবে না। একসঙ্গে আওয়াজ তুলতে হবে- আওয়ামী লীগের মূলনীতি, মুদ্রাপাচার, টাকা পাচার আর দুর্নীতি, অলি-গলি ম্যায় শোর হ্যায়… কোন চোর হ্যায়।'

এসময় নেতাকর্মীরা সমস্বরে শ্লোগান দিয়ে তার জবাব দেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'ওরা শুধু ভোট চুরি না... ওরা জনগণের পকেট কেটে বিদেশে টাকা পাচার করছে। বিদ্যুতের দাম বেড়েছে সেটাও তাদের দুর্নীতির জন্য। এভাবে তারা সব কিছু খেয়ে ফেলেছে।'

৮০'র দশকে মুনতাসির মামুনের লেখা চোরের নাটকের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, 'আজকে আওয়ামী লীগ ওই জায়গায় গেছে, তারা মানচিত্রটাও খেয়ে ফেলতে শুরু করেছে।'

মির্জা ফখরুল বলেন, 'হজের ব্যাপারে দুষ্টামি করা ওদের পুরনো অভ্যাস। সাধারণ মানুষ যারা হজে যেতে চান তাদের ৭ লাখ টাকা দিতে হবে। অথচ ভারতে আড়াই লাখ টাকা আর পাকিস্তানে ৪ লাখ টাকা। তাহলে বাংলাদেশে কেন ৭ লাখ টাকা হবে?'

'ওই যে চুরি করেছে। বাংলাদেশ বিমানকে চুরি করে একেবারে শেষ করে ফেলেছে। সেই চুরিকে সমন্বয় করার জন্য তাদের এখন বেশি করে টাকা নিতে হবে', যোগ করেন তিনি।  

মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, জয়নুল আবদিন ফারুক, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ফজলুল হক মিলন, নাজিম উদ্দিন আলম, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

Comments