বিএনপি নেতার সাজা, একই ধরনের মামলায় আ. লীগ নেতা খালাস: ফখরুল

একই ধরনের মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা খালাস পেয়েছেন এবং বিএনপি নেতাদের সাজা দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

একই ধরনের মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা খালাস পেয়েছেন এবং বিএনপি নেতাদের সাজা দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ বুধবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'মৃত্যু যখন ঘনিয়ে আসে। যখন আর কোনো আশা থাকে না, তখন অনেকে চেষ্টা করেন যে কোনো রকমে কোনো কিছু ধরে যদি টিকে থাকা যায়। আজকে এই যে রায় সেটা তাদের পরিকল্পনা; রাজনীতিকে একেবারে তিরোহিত করা, বিরাজনীতিকরণ, রাজনীতিবিদদের একদম রাজনীতির মাঠ থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া, আবার যদি এককভাবে আগের মতো করে পার পেয়ে যাওয়া যায়।'

'এই যে ভয়াবহ পরিকল্পনা নিয়ে তারা মাঠে নেমেছে, আমাদের কানে এসেছে—প্রায় ১ হাজার ৩৫০ মামলা চিহ্নিত করা হয়েছে যে মামলাগুলো নির্বাচনের পূর্বেই শুনানি শেষ করে সাজা দিয়ে দেওয়া হবে। তার সবগুলো হচ্ছে রাজনৈতিক মামলা। প্রত্যেকটি মামলার আসামি হচ্ছেন বিএনপির-বিরোধী দলের শীর্ষ নেতারা,' বলেন ফখরুল।

তিনি আরও বলেন, 'অত্যন্ত চমৎকার উদ্দেশ্য! এদেরকে যদি মামলায় আটক করে ফেলা যায়, সাজা দিয়ে দেওয়া যায়। তাহলে তাদের সেই কথা মতো "সংবিধান অনুযায়ী" এরা তো নির্বাচন করতে পারবে না। সব সময় সেই সংবিধানের উল্লেখই তারা করছে। যে সংবিধান তারা তৈরি করেছে। ১৯৭২ সালে যে সংবিধান পরবর্তীতে জনগণের জন্য সংশোধন হয়েছে, সেসব বাদ দিয়ে তারা নিজেরা শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এই সংবিধানকে কাটাছেঁড়া করে তাদের মতো করে নিয়েছে। সেই সংবিধান অনুযায়ী তারা এখন একা খেলার মাঠে খেলবে আর গোল দিয়ে দেবে। প্রতিপক্ষ কেউ থাকবে না। ওই লক্ষ্যে তারা যাচ্ছে।'

ফখরুল বলেন, 'কাল যে দুটি মামলার রায় হয়েছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে এই মামলাটি ইতোপূর্বে হাইকোর্টে খারিজ হয়ে গিয়েছিল। সেই মামলাকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে এবং সাজা দেওয়া হয়েছে। তাকে (টুকু) দেওয়া হয়েছে ৯ বছর ও তার স্ত্রীকে দেওয়া হয়েছে ৩ বছরের সাজা।'

'অথচ একই ধরনের মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার বিরুদ্ধে (ফৌজদারি আপিল নম্বর ৩৫৩৬/২০০৯) দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের একই ধারায় সম্পদের বিবরণীতে সম্পত্তি গোপন করার অভিযোগ রয়েছে। তার নামে আয়ের অজ্ঞাত উৎসের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পত্তি এবং তার স্ত্রী ও সন্তানের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। সেই মামলা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া সাহেবকে এই সরকার, এই হাইকোর্ট বেঞ্চ, এই বিচারক খালাস দিয়েছেন,' বলেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি আরও বলেন, 'ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান ও তার স্ত্রীর মামলায় কোনো সম্পদ গোপন করার অভিযোগ করা হয়নি। সব সম্পদ বিবরণীর সঙ্গে মিল পাওয়া গেছে, যা বাদীপক্ষের দুদকের সাক্ষীরা বলছে। সব সম্পদ আয়কর রিটার্নে দেখানো হয়েছে এবং ট্যাক্স প্রদান করা আছে। তা সত্ত্বেও আমান ও তার স্ত্রী সাবেরা আমানের সাজা বহাল রাখা হয়েছে।'

মির্জা ফখরুল বলেন, 'ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সাহেবের মামলা দায়ের করা হয়েছিল ২০০৭ সালের মার্চ মাসে। মামলাটি হাইকোর্টে খারিজ করে দেওয়া হয়েছিল ২০১১ সালে। একই ধরনের মামলা ছিল মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও মোহাম্মদ নাসিম সাহেবের বিরুদ্ধে। সেটা খারিজ করে দেওয়া হয়েছে।'

'২০০৭ সালে মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দীন সরকার এসে যে মামলাগুলো দিয়েছিল সেখানে শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের সব নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা ছিল। আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ কয়েকটি মামলা ছিল। আওয়ামী লীগের সব মামলা খারিজ করা হয়েছে; হয় খারিজ হয়েছে, না হয় বাতিল হয়েছে নয়তো কোয়াশমেন্টে নিয়ে চলে গেছে কিন্তু বিএনপির একটি মামলায় খারিজ করা হয়নি,' বলেন তিনি।

Comments