‘কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে বছরে ৫৪ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য আমদানি কেন?’

‘সরকার যদি কোনোভাবে ওইসব দিকে ঠেলে দেয়, সেটা সরকারের দায়। শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনটা করছি, শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনে আমরা চূড়ান্ত পর্যায়ে যেতে চাই’
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত

সরকার পদত্যাগের এক দফার আন্দোলনের ধরন ভিন্ন রকম হবে বলে জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ শনিবার বিকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়কালে চলমান আন্দোলন সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব এ কথা জানান।

তিনি বলেন, 'তারুণ্যে সমাবেশ হচ্ছে, সামনে আমাদের পদযাত্রার কর্মসূচি শুরু হবে। আমরা আশা করি, এক দফাতে আমরা আন্দোলন শুরু করব। অর্থাৎ আমাদের যে ১০ দফা, অন্যান্য যুগপৎ আন্দোলনকারী দলগুলো আছে তাদের দফাগুলো মিলিয়ে একটা দফায় আন্দোলনে যাবো। সেটা হচ্ছে, এই অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং নতুন নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠান। এগুলোকে নিয়ে আমরা একটা জায়গায় আসছি, সেটা হচ্ছে—মূলত এই সরকারের পদত্যাগ।'

তিনি আরও বলেন, 'সেটা নিঃসন্দেহে গত আন্দোলনগুলোর চেয়ে ধরনেও হবে একটু ভিন্ন এবং জনগণের সম্পৃক্ততাও বাড়বে। একটা ব্যাপারে আমরা নিশ্চয়তা দিতে পারি, আমাদের এই আন্দোলন প্রথম থেকেই শুরু করেছি জনগণকে সম্পৃক্ত করে। এই আন্দোলনে জনগণের অনেক বেশি সম্পৃক্ততা আসবে। আমি বিশ্বাস করি, এই আন্দোলনের মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে সরকার বাধ্য হবে নতি স্বীকার করে পদত্যাগ করে একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে।'

এক দফা আন্দোলনের ধরন কেমন হবে, হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি থাকবে কি না—জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমরা আগেই বলেছি, আমরা হরতাল-অবরোধের মতো কোনো কর্মসূচি সচেতনভাবে চাচ্ছি না। আমাদের ভায়োলেন্সে যাওয়ার প্রশ্নই উঠতে পারে না।'

'সরকার যদি কোনোভাবে ওইসব দিকে ঠেলে দেয়, সেটা সরকারের দায়। শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনটা করছি, শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনে আমরা চূড়ান্ত পর্যায়ে যেতে চাই,' যোগ করেন তিনি।

'সরকারের উন্নয়ন বিভ্রম'

মির্জা ফখরুল বলেন, 'এই সরকারের সবচেয়ে বড় অপরাধ, জনগণকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করা। কয়েকটা বইয়েও বেরিয়েছে, বাংলাদেশের উন্নয়নের যে একটা ব্যাপার বারবার বলা হচ্ছে, এটা আসলে উন্নয়ন বিভ্রম। এতে মানুষকে বোকা বানানো হয়, প্রতারণা করা হয়। পরিসংখ্যানের তথ্যে অনেক কিছু সরবরাহ করা হয়, যে তথ্যগুলো সঠিক নয়। এটা আজ থেকে নয়, এই সরকার আসার পর থেকেই।'

তিনি বলেন, 'আপনাদের মনে আছে, কৃষি মন্ত্রণালয়ে তখন মন্ত্রী ছিলেন মতিয়া চৌধুরী। তার নির্দেশ ছিল বাংলাদেশ পরিসংখ্যার ব্যুরোতে তার সঙ্গে কথা না বলে কোনো তথ্য দেওয়া যাবে না। অর্থাৎ উনারা যেটা বলবেন সেটাই পরিসংখ্যান ব্যুরোতে দিতে হবে। যার ফলে এই গ্রোথের রেট (প্রবৃদ্ধির হার), ইনকাম, প্রাইভেট ইনভেস্টমেন্ট-ফরেন ইনভেস্টমেন্ট—সবক্ষেত্রেই গভীরে গেলে এবং অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে কথা বললে দেখবেন যে, প্রতিদিনেই আপনাকে ভ্রান্ত ধারনা দেওয়া হচ্ছে, ভুল ধারনা দেওয়া হচ্ছে।'

প্রশ্ন রেখে সাবেক এই কৃষি প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'এতোই যদি উন্নয়ন হয়ে থাকে, কৃষি ক্ষেত্রে যদি স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে থাকে, তাহলে আজকে কেনো প্রতি বছর প্রায় ৫৪ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য আমদানি করতে হয়? মরিচের দাম বেড়েছে, আদার দাম তো একদিনে ২০০ টাকা কেজিতে বেড়ে গেছে। এরকম প্রত্যেকটা আইটেমের দাম বেড়েই চলেছে।'

তিনি বলেন, 'দেশটাকে তারা আমদানিনির্ভর করে ফেলেছে। এর কারণ একটাই, আমদানি করলে কমিশন পাওয়া যায়। এই সরকারের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে লুট করা। আমি বলি, বর্গীদের মতো। বাংলাদেশে বর্তমানে যে অবৈধ সরকার ক্ষমতায় চেপে বসে আছে, তাদের আচরণ পুরোপুরি বর্গীদের মতো। আসবে, লুট করে নিয়ে চলে যাবে। সমস্ত জায়গায় চুরি, সমস্ত জায়গায় দুর্নীতি—এটাকে তারা উন্নয়ন বলে। সেজন্য ওরা বাগাড়ম্বর করে কথা বলে।'

'সরকার মিথ্যা তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'যখন অর্থনীতি ভেঙে পড়ছে, ধসে পড়ছে, যখন অর্থনৈতিক বিপর্যয় শুরু হয়েছে। যখন জনগণ তাদের দুঃখের কথাগুলো বলতে শুরু করেছে, ইনফ্লেশন এমন একটা পর্যায় পড়ে গেছে যে, মানুষের নাগালের মধ্যে থাকছে না, তখন সরকার উল্টো কথা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। এতে কোনো লাভ হচ্ছে না। কিছুদিন আগে ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়াতে এসেছিলো, সেই উন্নয়নের স্বপ্ন যেগুলো তারা (সরকার) দেখাচ্ছিল সেগুলো মরীচিকায় পরিণত হয়েছে।'

'সেজন্য আমরা মনে করি, এনাফ ইজ এনাফ। এখনো সময় আছে, এই সরকার পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা দিয়ে চলে যাওয়া উচিত। এটা তাদের জন্য ভালো হবে, দেশের জন্য মঙ্গল হবে,' যোগ করেন তিনি।

'সংকট উত্তরণ সরকারেই হাতে'

নির্দলীয় সরকারের বিষয়টি সংবিধানে সংযোজন 'সরকারের দায়িত্ব' উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'তাদের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। এটা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করছে সরকারের সদিচ্ছার উপর। সরকারের জনগণের প্রতি যদি ভালোবাসা থেকে থাকে, দেশের প্রতি যদি কোনো প্রেম থাকে, তাহলে নিঃসন্দেহে তাদের দায়িত্ব হচ্ছে, এই রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলা করার জন্য সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাদের আলোচনা করতে হবে।'

তিনি বলেন, 'আলোচনা করেই তারা একটা পথ বের করতে পারে। এটা অতীতে বাংলাদেশে হয়েছে, দুইবার-তিনবার-চারবার হয়েছে। এটা খুব কঠিন কাজ না। এর জন্য তাদের একটা গুড ইনটেনশন থাকতে হবে, দেশের প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে। প্রয়োজনীয় সংশোধনী করতে হবে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে হবে, তাহলে একটা পথ তৈরি হবে।'

ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য প্রসঙ্গে

'জামায়াতে ইসলাম বিএনপির বি-টিম'—আওয়ামী লীগ নেতার এই বক্তব্য প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, 'এগুলো বাজে কথা। তারা ইচ্ছা করে এসব বলে। আমরা এসব কথা উত্তর দিতে চাই না। জনগণই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তাদের কথাগুলোর উত্তর দিয়ে দেবে।'

জামায়াতে ইসলাম নিয়ে বিএনপির অবস্থান জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, 'জামায়াত একটা রাজনৈতিক দল। অনেক ধরে তারা রাজনীতি করছে। জাতীয় পার্টিও রাজনৈতিক দল। যদিও এখন জামায়াতের নিবন্ধন নেই। আমি ঠাকুরগাঁওয়ে যে কথাটা বলেছিলাম, জামায়াতে ইসলামী একটা রাজনৈতিক দল, তারা নিজস্ব ধারায় রাজনীতি করছে।'

তিনি বলেন, 'আমাদের মূল কথা হচ্ছে, সরকারের বিরুদ্ধে যারাই আন্দোলন করবে, তাদেরকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত, সেটা তারা নিজেরাই করবে। আমরা যুগপৎ আন্দোলন করছি, জোটবদ্ধ আন্দোলন না। প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দল—যারা মনে করে, এই সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলা উচিত—তারা আন্দোলন করতে পারে। এটা স্বাভাবিক। কমিউনিস্ট পার্টি নিজস্ব জায়গা থেকে আন্দোলন করছে, বাসদ নিজস্ব জায়গা থেকে আন্দোলন করছে, জামায়াতে ইসলাম নিজস্ব জায়গা থেকে আন্দোলন করছে। আরও অনেক দল যুগপৎ আন্দোলনে নেই, কিন্তু তারা আন্দোলন করছে। আমরা সকলকে ওয়েলকাম জানিয়েছি।'

Comments