‘পাল্টাপাল্টি না, গণতন্ত্র শক্তিশালী ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এই সমাবেশ’
রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটের সামনে আজ বুধবার বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত 'শান্তি সমাবেশ' করবে ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ-উত্তর) আওয়ামী লীগ। একইদিনে এক দফা দাবিতে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আজ বুধবার দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সমাবেশ করবে বিএনপি।
বিষয়টি নিয়ে আজ সকালে টেলিফোনে দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের সঙ্গে।
দ্য ডেইলি স্টার: আপনাদের আজকের এই সমাবেশ বিএনপির পাল্টা সমাবেশ কি না?
আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম: আমরা শান্তি সমাবেশগুলো দেড় বছরের কাছাকাছি সময় ধরে করে যাচ্ছি। পাল্টাপাল্টি কোনো সমাবেশ না। আমরা শান্তি-সম্প্রতি অক্ষুণ্ণ রাখা, সাম্প্রদায়িক সংঘাত বন্ধ রাখার লক্ষ্যে, গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য এই সমাবেশ করছি। এটি কারো বিপক্ষে নয়। একই দিনে তো আমরা একই জায়গায় মিটিং ডাকতে পারতাম, সেটা তো আমরা করিনি। কেউ বলে একচেটিয়াভাবে বিদেশিদের দেখাবে, মানুষকে আতঙ্কের মধ্যে রাখবে, সেটা একচেটিয়া করতে চায়। জনগণকে তো আমরাও দেখাব যাতে জনমত আমাদের পক্ষে থাকে।
ডেইলি স্টার: বিএনপি তো আগেই সমাবেশের তারিখ ঘোষণা করেছিল। আপনারা একই দিনে প্রায় একই সময়ে কাছাকাছি জায়গায় সমাবেশ করছেন। এর কারণটা আসলে কী?
বাহাউদ্দিন নাছিম: পাশাপাশি সমাবেশ করছি না। আমরা বিএনপির পাশে যাইনি। আমরা পুরানা পল্টনে তো সমাবেশ করছি না। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কারো ওপর হামলা করে না, যদি না তাদের ওপর আঘাত না আসে। এই শহরে ১০টা সমাবেশ হলেও কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না, সংঘাত হওয়ার কথা না, যদি না কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মারামারি না করে। আওয়ামী লীগ সবসময় শান্তি প্রিয় দল। আমরা শান্তির পক্ষে।
ডেইলি স্টার: সমাবেশস্থল হিসেবে বায়তুল মোকাররমকে বেছে নেওয়ার কারণ কী?
বাহাউদ্দিন নাছিম: আমরা মানুষকে কষ্ট দিতে চাই না। অযথা মানুষকে ভোগানো কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড হতে পারে না। আমাদের এই মিটিংয়ে অনেক নেতাকর্মী আসবে। ছোট জায়গার মধ্যে রাখলে তাদের কষ্ট হয়। মানুষেরও কষ্ট হয়। তাই আমরা একটু মাঝামাঝি জায়গায় করেছি। আগামীতে বড় বড় সমাবেশ হবে। সেগুলো বড় ময়দানে করব।
ডেইলি স্টার: এই সমাবেশের মাধ্যমে আপনারা কী বার্তা দিতে চান?
বাহাউদ্দিন নাছিম: আমাদের বার্তাটি হলো নির্বাচনে সবাই অংশগ্রহণ করবে, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে, জনগণ অংশগ্রহণ করুক, নির্বাচনে নিরাপত্তা আছে, স্বস্তি আছে। আমরা অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চাই। জনগণ নির্ভয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। শান্তি সম্প্রীতির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে চাই। একটি অনন্য উচ্চতায় দেশকে নিয়ে যেতে চাই, এই বার্তা দিতে চাই। আমরা মাঠে আছি, সজাগ আছি। আমরা উচ্ছৃঙ্খলার বিপক্ষে, নৈরাজ্যের বিপক্ষে, গণতন্ত্রের পক্ষে, দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি, লুটেরাদের রাজনীতি এবং দুর্নীতিবাজদের রাজনীতির কবর রচনা করে, সাম্প্রদায়িক শক্তির উৎখাতের মধ্য দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠন করতে চাই—এই বার্তা দিতে চাই।
ডেইলি স্টার: বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সমাবেশস্থল খুব কাছে। কোনো ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন কি না?
বাহাউদ্দিন নাছিম: এই ধরনের কোনো কিছু আশঙ্কা করছি না। এগুলো নিয়ে আমরা ভাবি না। আওয়ামী লীগ কোনো সংঘাত সৃষ্টিকারী দল না। আওয়ামী লীগ ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করে না।
ডেইলি স্টার: পুলিশ যে ২৩ শর্ত দিয়েছে, সেসব শর্ত মেনে কি বড় ধরনের সমাবেশ করা সম্ভব?
বাহাউদ্দিন নাছিম: এ ধরনের শর্ত তো দেয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনেক শর্ত দেয়। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা। সেজন্য তারা এই শর্তগুলো দিয়েছে। পুলিশের ২৩ দফার মূল বিষয় হলো শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা। আমরা শান্তি-শৃঙ্খলার বিষয়গুলো দেখছি। কত দফা সেটি তেমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না।
ডেইলি স্টার: বিএনপিসহ অন্যান্য দলগুলো যে এক দফা দাবিতে আজকে মাঠে নামছে, তাদের এই আন্দোলনকে আপনারা কীভাবে দেখছেন?
বাহাউদ্দিন নাছিম: আগে দেখতে হবে কারা আন্দোলন করছে। এই দলগুলো আসলে কারা। তাদের কি নিবন্ধন আছে? তাদের রাজনৈতিক অবস্থা কী? তাদের কমিটি আছে কি না? এগুলো মানুষ জানতে চায়। দলের সংখ্যা দিয়ে কিছু হয় না। আর এক ধরনের নৈরাজ্য সৃষ্টি করাই বিএনপির মূল লক্ষ্য। তাদের এক দফা হলো বিএনপিকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেওয়া। দেশি-বিদেশি যেকোনো শক্তি তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। এটা তাদের লক্ষ্য। ভোটে অংশগ্রহণ করা, জনমত গঠন, জনগণের সমর্থন এই লক্ষ্যে তারা কোনো সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড করেছে বলে আমরা দেখি না। তারা নমিনেশন বাণিজ্য করে। তারা নির্বাচনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না। তারা বাণিজ্য ও দুর্নীতি করে। নির্বাচনে জয়লাভ তাদের লক্ষ্য না।
ডেইলি স্টার: আজকের সমাবেশে কত সংখ্যক লোক হতে পারে?
বাহাউদ্দিন নাছিম: আমরা বিশাল জনসভা চিন্তা করিনি। আমরা সারাদেশ থেকে লোকজন ভাড়া করে আনি না। যারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করবে, তারাই আসবে। ঢাকা জেলা ও মহানগরের নেতাকর্মীরা আসবে। ভালোই লোকজন হবে আশা করছি।
Comments