নারায়ণগঞ্জে ‘৩৫০ বাস রিজার্ভ করেছে আ. লীগ’, ভোগান্তিতে সাধারণ যাত্রী

সমাবেশের জন্য একটিও বাস আগে থেকে রিজার্ভ করতে পারেনি বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহানগর আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব আবু আল ইউসূফ খান।
সাইনবোর্ড এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সকাল থেকেই দূরপাল্লার বাস চলাচল প্রায় নেই বললেই চলে। ছবি: সৌরভ হোসেন সিয়াম/স্টার

রাজধানীতে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সমাবেশকে ঘিরে নারায়ণগঞ্জে পরিবহন সংকট দেখা দিয়েছে। সমাবেশের জন্য আগে থেকেই বাস রিজার্ভ করে রেখেছে রাজনৈতিক দলগুলো।

নারায়ণগঞ্জ থেকে বন্ধন, উৎসব, হিমাচল, শীতল, মৌমিতাসহ কয়েকটি পরিবহনের বাস ঢাকায় চলাচল করে। আজ শুক্রবার সকাল থেকে এসব বাসের কাউন্টারগুলো বন্ধ পাওয়া যায়। 

বাস মালিক সমিতির তথ্যমতে, প্রায় দেড় শতাধিক বাস রিজার্ভ করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। তবে অধিকাংশ বাসই রিজার্ভ করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এতে নিয়মিত যাত্রী পরিবহনের বাসের সংকট দেখা দিয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি দিদারুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি যে ৩টি পরিবহনের দেখাশোনা করি সেখানকার ৭৫টি বাস রিজার্ভ করা হয়েছে। সবমিলিয়ে দেড়শর বেশি হবে।'

জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নারায়ণগঞ্জ থেকে সমাবেশে যোগ দিতে আমরা ৩৫০টি বাস ও ১৫০ ট্রাক ভাড়া করেছি।'

অন্যদিকে, সমাবেশের জন্য একটিও বাস আগে থেকে রিজার্ভ করতে পারেনি বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহানগর আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব আবু আল ইউসূফ খান।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা ৩-৪ দিন আগে থেকে বাস রিজার্ভের জন্য চেষ্টা করেছি। কিন্তু পারিনি। আমাদের নেতাকর্মীরা অটোরিকশায় ভেঙে ভেঙে, পিকআপে, ট্রাকে, বাসে বিভিন্নভাবে সমাবেশে যাচ্ছেন।'

শুক্রবার সকালে সরেজমিনে চাষাঢ়ার শীতল বাস কাউন্টারের সামনে অপেক্ষা করতে দেখা যায় বিএনপি কর্মী আব্দুল মজিদ ও লোকমান হোসেনকে। তারা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পল্টনের সমাবেশে যাব কিন্তু ঢাকামুখী কোনো বাস নেই। শহরের ২ নম্বর গেট থেকে বাসগুলোকে আর বের হতে দিচ্ছে না। যেগুলো বের হচ্ছে তল্লাশি চালাচ্ছে। আধ ঘণ্টা ধরে বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছি। হেঁটেই রওনা দিতে হবে মনে হচ্ছে।'

গণসংহতি আন্দোলনের নেতা, নারায়ণগঞ্জ মহানগর কমিটির নির্বাহী সমন্বয়কারী পপি রানী সরকার বলেন, '৩ দিন ধরে চেষ্টা করে একটা বাসও রিজার্ভ করতে পারিনি। কেউ আওয়ামী লীগের বাইরে অন্য কোনো দলকে বাস ভাড়া দিতে রাজি না। তাদের নাকি নির্দেশনা দেওয়া আছে।'

ঢাকামুখী কোনো বাস দেখলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন যাত্রীরা। ছবি: সৌরভ হোসেন সিয়াম/স্টার

ঢাকায় আসতে ভোগান্তি

সকাল ১০টায় চাষাঢ়ায় বাসস্ট্যান্ডে স্ত্রীকে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন ব্যবসায়ী আমিরুল ইসলাম। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মাতুয়াইল শিশু-মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে যাব। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও বাস পাইনি। এখন সিএনজি খুঁজছি।'

চাষাঢ়া বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষমান অন্তত ১৫ জন জানান, বাস না পেয়ে অতিরিক্ত ভাড়ায় বিকল্প পরিবহন খুঁজতে হচ্ছে তাদের।

বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা অপু সরকার বলেন, 'সিনেপ্লেক্সে অগ্রিম টিকিট কিনেছি সিনেমা দেখব বলে। সমাবেশ ছিল বৃহস্পতিবার তাই শুক্রবারের টিকেট কিনেছি। কিন্তু পরে সমাবেশ পিছিয়ে দিল। এখন বাসও পাচ্ছি না।'

একই পরিস্থিতি দেখা যায় সাইনবোর্ড এলাকাতেও। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সকাল থেকেই দূরপাল্লার বাস চলাচল প্রায় নেই বললেই চলে। তাই ঢাকামুখী কোনো বাস দেখলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন যাত্রীরা। দুপুর ১১টায় সরেজমিনে সাইনবোর্ডের চট্টগ্রামমুখী লেনে দূরপাল্লার কোনো বাস দেখা যায়নি। যদিও এ স্থানে অন্য সময় নরসিংদী, সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতের দূরপাল্লার বাসের সারি দেখা যায়।

\আজ শুক্রবার সকাল থেকে বাস কাউন্টারগুলো বন্ধ পাওয়া যায়। ছবি: সৌরভ হোসেন সিয়াম/স্টার

প্রায় দেড় ঘণ্টা সাইনবোর্ডে দাঁড়িয়ে থেকেও গাজীপুরের কালিয়াকৈরের বাস না পেয়ে বিকল্প বাহন খুঁজছিলেন কামরুল ইসলাম। বিরক্তির সুরে তিনি বলেন, 'এদেশে সবকিছুতেই বাড়াবাড়ি। রাজনৈতিক দলগুলো প্রোগ্রাম রেখেছে ঠিক আছে কিন্তু বাস বন্ধ রাখার যৌক্তিকতা কী? আসলে কেউই পাবলিকের ভোগান্তির কথা ভাবে না।'

তবে এ বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকারি পরিবহন বিআরটিসির বাস চলাচল করতে দেখা গেছে। বাসের কাউন্টারে থাকা মো. শাকিল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ছুটির দিন হলেও আমাদের বাস চালু রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অন্তত ১২টি বাসে নারায়ণগঞ্জ-গুলিস্তানে যাত্রী পরিবহন চলছে সকাল থেকে। অন্যসব বেসরকারি যাত্রীবাহী বাস যাত্রী পরিবহন না করায় আমাদের চাপ বেশি।'

সমাবেশকে ঘিরে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সাইনবোর্ড, মৌচাক, চিটাগাং রোড, কাঁচপুর, ভুলতা, তারাব, গাউছিয়া, ৩০০ ফিট, পাগলাসহ কয়েকটি স্থানে তল্লাশিচৌকি বসিয়েছে পুলিশ। এসব স্থানে যাত্রীবাহী বাসসহ বিভিন্ন পরিবহনে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। মহাসড়কে পুলিশের জলকামান, সাঁজোয়া যানও দেখা গেছে।

বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকারি পরিবহন বিএরটিসির বাস চলাচল করতে দেখা গেছে। ছবি:সৌরভ হোসেন সিয়াম/স্টার

জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) চাইলাউ মারমা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জেলার কয়েকটি স্থানে আমাদের চেকপোস্ট রয়েছে। পুলিশ সেসব স্থানে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সমাবেশকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা যাতে না হয় সে ব্যাপারে পুলিশ তৎপর।'

Comments

The Daily Star  | English

Hilsa remains a luxury

Traders blame low supply for high price; not enough catch in rivers even after 2-month ban

57m ago