রাজনীতি

‘না. গঞ্জে ডিসি-এসপিরা চলেন ২ এমপির কথায়, আমার কথা শোনেন না’

আইভী বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে ডিসি-এসপি সাহেবরা চলেন ২ এমপির কথায়। নগরবাসীর কথা তারা শোনেন না। আমি অনুরোধ করার পরও তারা আমার কথা শোনেন না। সরকারি দপ্তরগুলো সিটি করপোরেশনকে সহযোগিতা করলে কাজ করা অনেক সহজ হতো।’
সেলিনা হায়াৎ আইভী। ছবি: স্টার

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, 'নারায়ণগঞ্জ শহরের কোনো ভাগাভাগির মধ্যে আমি নেই। আমার কোনো বাহিনী নেই। আমি তো কাউকে পিস্তল ঠেক দিতে পারব না। না পারব টাকা দিতে, না পারব পিস্তল দিতে, না পারব বাহিনী নিয়ে অ্যাটাক করতে। আমি তো আপনাদের মতো, আপনাদের নিয়েই প্রতিবাদ করতে পারব।'

আজ সোমবার দুপুরে সিটি করপোরেশনের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ কথা বলেন।

নতুন কোনো কর সংযোজন না করে আগামী অর্থবছরের জন্য ৬৯৫ কোটি ৭ লাখ ৫৮ হাজার ৯১৯ টাকার বাজেট ঘোষণা করেন মেয়র আইভী। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১২তম বাজেট ঘোষণা করেন টানা ৩ বারের এই মেয়র। গত বছরের তুলনায় বাজেটের পরিমাণ বেড়েছে ১০৭ কোটি টাকা। বছর শেষে ঘোষিত বাজেটে ২২ কোটি ৯৩ লাখ ২৫ হাজার ৫ টাকা উদ্বৃত্ত থাকবে।

এবারের বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ডেঙ্গু নিধন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন খাতে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানান মেয়র আইভী।

বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানে তিনি নগরবাসীকে নিয়মিত কর পরিশোধের অনুরোধ জানান।

তিনি বলেন, 'পৃথিবীর সব দেশের সব সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন ও নাগরিক সুবিধা প্রণয়ন নাগরিকদের পরিশোধিত কর থেকেই হয়। নিয়মিত কর পরিশোধ না করলে সিটি করপোরেশনগুলো চলতে পারবে না।'

গত ৩ বছর যাবত অর্থনৈতিক সংকট চলছে বলে জানান নাসিক মেয়র।

তিনি বলেন, 'সরকারের পক্ষ থেকেও অনুদান দেওয়া বন্ধ রয়েছে। এখন অনুদান নয়, ২ শতাংশ সুদে ঋণ হিসেবে টাকা নিতে হবে। এরপরও যদি নিয়মিত কর পরিশোধ না করেন তাহলে কাজ করা যাবে না।'

বাজেট ঘোষণা শেষে নগরবাসীর প্রশ্নোত্তর পর্বে যানজট, ফুটপাত দখল, গৃহকর বৃদ্ধি, জলাবদ্ধতাসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গ উঠে আসে। এসব সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে সবগুলো সরকারি দপ্তর ও নগরবাসীর অংশগ্রহণ জরুরি বলে উল্লেখ করেন মেয়র আইভী।

যানজট নিরসন প্রসঙ্গে করা প্রশ্নের জবাবে আইভী বলেন, 'যানজট নিরসনের কাজ সিটি করপোরেশনের না। এটা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্ব।'

তবে নারায়ণগঞ্জ শহরের যান চলাচল বিষয়ে বড় পরিকল্পনা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

শহরের সংকটগুলো নিরসনে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার তাগিদ দেন তিনি।

আইভী বলেন, 'নারায়ণগঞ্জে ডিসি-এসপি সাহেবরা চলেন ২ এমপির কথায়। নগরবাসীর কথা তারা শোনেন না। আমি অনুরোধ করার পরও তারা আমার কথা শোনেন না। সরকারি দপ্তরগুলো সিটি করপোরেশনকে সহযোগিতা করলে কাজ করা অনেক সহজ হতো।'

সিটি করপোরেশনের মেয়রের চেয়ে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সহজ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, 'আমি এমপির নমিনেশন চাইলে আবার এই শহরের অনেকের মাথা গরম হয়ে যাবে। আমি কারও মাথা গরম করতে চাই না। আমি ঠান্ডা মাথায় আপনাদের (নগরবাসী) নিয়ে কাজ করতে চাই।'

'আমার মতো একজন সৎ মানুষ এই চেয়ারে আপনারা খুঁজে পাবেন না। চেয়ারে বসলে আমি আপন মায়ের পেটের ভাইকে পর্যন্ত চিনি না। যেহেতু আমি এত সততার সঙ্গে কাজ করি, সুতরাং আমাকে সাপোর্ট করা, আমার পাশে থাকা আপনাদের ঈমানি দায়িত্ব', যোগ করেন তিনি।

দলীয় একটি পক্ষ তার বিরুদ্ধে কাজ করে বলে মন্তব্য করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সেলিনা হায়াৎ আইভী।

'আমার দলেরই শক্তিশালী একটি বলয় আমার কথাকে সংযোজন-বিয়োজন করে বিভিন্নভাবে প্রচার করে। অনেক হয়রানির শিকার হয়ে আমাদের কাজ করতে হয়। তারপরও আমি থেমে নেই। কথা বলার চেষ্টা করি, কাজ করে যাই', বলেন তিনি।

২০১৮ সালের হকার ইস্যুতে হামলার কথা উল্লেখ করে আইভী বলেন, 'সিটি করপোরেশন এখন আর উচ্ছেদ করতে যায় না। কারণ ২০১৮ সালে হকার নামধারী কতিপয় লোক কীভাবে আমাদের মারপিট করল। সংসদ সদস্য শামীম ওসমান প্রকাশ্যে হকারকে সাপোর্ট দিয়ে ফুটপাতে বসতে বললেন। আমি, আমার কর্মচারী, কাউন্সিলররা তখন মারপিটের শিকার হয়েছি। ৪ আসনের এমপি (শামীম ওসমান) আমাদের রাস্তায় ফেলে পিটিয়েছেন। আপনাদের চোখের সামনে আহত পড়ে রইলাম, প্রেসক্লাবে গিয়ে আশ্রয় নিলাম। সাংবাদিকরাও আহত হলেন। এই ঘটনায় মামলাও নিলো না। হাইকোর্টের নির্দেশে পরে মামলা হলো, কিন্তু লাভ কিছুই হয়নি। এমনকি এক হকার আরেক হকারকে মেরে ফেলল, তারপরও তো হকারমুক্ত হয়নি।'

বাজেট অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

Comments