‘আমেরিকায় আসতে না পারলে আসবে না, আমার দেশে যথেষ্ট কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে’

‘আমেরিকায় আসতে না পারলে আসবে না, আমার দেশে যথেষ্ট কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে’
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা | ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি প্রসঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তারা স্যাংশন দিচ্ছে, আরও স্যাংশন দেবে—দিতে পারে, এটা তাদের ইচ্ছা কিন্তু আমার দেশের মানুষের ভোটের অধিকারসহ সব মৌলিক অধিকার আমরা নিশ্চিত করেছি।

আজ শনিবার ভয়েস অব আমেরিকা সাক্ষাৎকারটি প্রচার করে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ভয়েস অব আমেরিকার সাংবাদিক শতরূপা বড়ুয়া। দ্য ডেইলি স্টার পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারের একটি অংশ হুবহু প্রকাশ করছে।

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন; বাংলাদেশের মানবাধিকার এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে নিয়মিত তাগিদ দিয়ে আসছে। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসও বিভিন্ন সময় এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আমরা দেখেছি, গত সপ্তাহে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বাংলাদেশিদের যে ভিসা নীতি আরোপের কথা বলেছিল, তার প্রথম পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে। আমরা এ-ও জানি, র‌্যাবের ওপর ২০২১ সালে যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তা এখনো বহাল আছে। এই বিষয়গুলো অ্যাড্রেস করাসহ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের যে বন্ধুত্বপূর্ণ ও অংশীদারত্বের সম্পর্ক তা জোরদার করার জন্য আপনারা কী ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছেন—জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, 'আমার এটাই প্রশ্ন যে, হঠাৎ কথা নেই-বার্তা নেই তারা আমাদের ওপর ভিসা স্যাংশন দিতে চাচ্ছে কী কারণে?

'আর মানবাধিকারের কথা যদি বলে বা ভোটের অধিকারের কথা যদি বলে, আমরা আওয়ামী লীগ; আমরাই তো এ দেশের মানুষের—বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে সংগ্রাম করেছি। আমাদের কত মানুষ রক্ত দিয়েছে এই ভোটের অধিকার আদায় করার জন্য। অবাধ, ‍সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন যাতে হয়, তার জন্য যত রকমের সংস্কার দরকার সেটা আমরাই তো করেছি। আজকে ছবিসহ ভোটার তালিকা; স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স; মানুষকে ভোটের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা; আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো এই স্লোগান তো আমার দেওয়া। আমি এভাবে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছি। কারণ আমাদের দেশে বেশির ভাগ সময় মিলিটারি ডিকটেটররা দেশ শাসন করেছে। মানুষের ভোট দেওয়া লাগেনি। তারা ভোটের বাক্স ভরে নিয়ে জাস্ট রেজাল্ট ঘোষণা দিয়েছে,' বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, 'এরই প্রতিবাদে আমরা আন্দোলন-সংগ্রাম করে আজকে আমরা নির্বাচন সুষ্ঠু পরিবেশে নিয়ে আসতে পেরেছি। এখন মানুষ তার ভোটের অধিকার সম্পর্কে অনেক সচেতন। সেটা আমরা করেছি। সে ক্ষেত্রে হঠাৎ এ ধরনের একটা স্যাংশন দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা আছে বলে আমি মনে করি না।

'দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী, আমার কোনো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা—সেটা র‌্যাব হোক, পুলিশ হোক, যেটাই হোক; কেউ যদি কোনো রকম অন্যায় করে আমাদের দেশে কিন্তু তাদের বিচার হয়। এই বিচারে কিন্তু কেউ রেহাই পায় না,' বলেন প্রধানমন্ত্রী।

অনেক সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য কোনো কাজ অতিরিক্ত করে, করতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'করলে সেটা কিন্তু আমাদের দেশের আইনেই বিচার হচ্ছে। যেখানে এ রকম বিচার হচ্ছে, এ ধরনের ব্যবস্থা আছে সেখানে এ স্যাংশন কী কারণে!'

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, 'এই যে আমরা ২০০৮ এর নির্বাচনে জয়ী হয়ে ২০০৯-এ সরকার গঠন করলাম। তার থেকে এ পর্যন্ত যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, ন্যাশনাল ইলেকশন অথবা লোকাল গভর্নমেন্ট ইলেকশন সুষ্ঠুভাবে হয়েছে এবং মানুষ তো তাদের ভোট দিয়েছে সতঃস্ফূর্তভাবে। এটা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তোলার চেষ্টা করেছে কিন্তু বাস্তবতাটা কী? বাংলাদেশের মানুষ তার ভোটের অধিকার নিয়ে সব সময় সচেতন। কেউ ভোট চুরি করলে তাদের ক্ষমতায় থাকতে দেয় না।

'৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া ভোট চুরি করেছিল। সে কিন্তু দেড় মাসও টিকতে পারেনি। ৯৬ সালের ৩০ মার্চ পদত্যাগে বাধ্য হয় জনগণের রুদ্ররোষে, আন্দোলনে। আবার ২০০৬ সালে এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে ভোটার লিস্ট তৈরি করেছিল। সেই ভোটার লিস্ট নিয়ে ইলেকশন করে ঘোষণা দিলো, তখন ইমার্জেন্সি ডিক্লিয়ার হলো। সেই ইলেকশন বাতিল হয়ে গেল। কাজেই আমাদের দেশের মানুষ কিন্তু ভোট সম্পর্কে এখন যথেষ্ট সচেতন,' বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

তিনি আরও বলেন, 'একটা ইলেকশন অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু হবে—এটা তো আমাদেরই দাবি ছিল এবং আন্দোলন করে আমরাই সেটা প্রতিষ্ঠিত করেছি। আজকে এখন তারা স্যাংশন দিচ্ছে, আরও স্যাংশন দেবে—দিতে পারে, এটা তাদের ইচ্ছা কিন্তু আমার দেশের মানুষের যে অধিকার; তাদের ভোটের অধিকার, তাদের ভাতের অধিকার, তাদের বেঁচে থাকার অধিকার, তাদের শিক্ষা-দীক্ষা সব মৌলিক অধিকারগুলো কিন্তু আমরা নিশ্চিত করেছি। ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল, বাংলাদেশ কিন্তু বদলে যাওয়া বাংলাদেশ।

'এখন আর বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ নেই। এখন মানুষের সে রকম হাহাকার নেই। এমনকি আমাদের যে বেকারত্ব, সেটা কমিয়ে এখন মাত্র তিন শতাংশ। সেটাও মানুষ ইচ্ছা করলে কাজ করে খেতে পারে। আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। ওয়াই-ফাই কানেকশন সারা বাংলাদেশে, প্রত্যেক ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ। রাস্তা-ঘাটের অভূতপূর্ব উন্নয়ন আমরা করে দিয়েছি, মানুষ যাতে কাজ করে খেতে পারে। আমরা কারিগরি শিক্ষা, ভোকেশনার ট্রেইনিংয়ের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। এভাবে দেশের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সেখানে এভাবে স্যাংশন দিয়ে মানুষকে ভয়-ভীতি দেওয়া; ঠিক আছে আমেরিকা যদি স্যাংশন দেয়, আমেরিকায় আসতে পারবে না, আসবে না। না আসলে কী আসে-যাবে! আমার দেশে এখন যথেষ্ট কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে। কাজেই আমরা দেখি, কী করে তারা। কেন তাদের এই স্যাংশন জানি না,' যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
Prof Yunus in Time magazine's 100 list 2025

Prof Yunus named among Time’s 100 Most Influential People of 2025

A tribute article on Prof Yunus was written by Hillary Clinton for the magazine

1h ago