মন্ত্রীর এলাকার মানুষ কষ্টে নেই, সারা দেশের অবস্থা আলাদা

আমার এলাকার মানুষের কষ্ট নাই, ৩ বার করে লিপস্টিক লাগাচ্ছে: বাণিজ্যমন্ত্রী
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির ফাইল ফটো| ছবি: সংগৃহীত

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতেও নিজ নির্বাচনী এলাকার মানুষ ভালো আছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

আজ বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয় সভাকক্ষে ন্যাশনাল ট্যারিফ পলিসি মনিটরিং ও রিভিউ কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। এর প্রভাব কাটানো সম্ভব হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, 'এই প্রভাব অবশ্যই কাটানো সম্ভব হবে, আপনারা যদি পজিটিভ হন। সংবাদ মাধ্যমের প্রচার যদি পজিটিভ হয় যে, বৈশ্বিক পরিস্থিতিসহ সার্বিক কারণে এটি হয়েছে। অতএব এটাকে বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচনে প্রভাব ফেলা ঠিক হবে না। নির্ভর করে আপনারা কতটুকু ইতিবাচক হবেন।'

আপনাদের তো এলাকায় গিয়ে ভোট চাইতে হবে, তারা তো দ্রব্যমূল্য নিয়ে অস্বস্তিতে আছে—এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'ধরেন, আমার এলাকা, আমার এলাকার মানুষের কষ্ট নেই। কারণ তারা আলুর দাম পাচ্ছে। আমার তো কৃষি বেইজ এলাকা। একেকটা এলাকা একেক রকম। ঢাকা শহরে যে নির্বাচন করবে, তার অনেক সমস্যা।  

'আজকে থেকে ২০ বছর আগে আমার এলাকায় ১০টা মোটরসাইকেল ছিল, ২০০১ সালে আমি প্রথম ভোট করি। আজকে হাজার হাজার মোটরসাইকেল। তারা প্রত্যেকে অ্যাফোর্ড করছে। আলু বেইজ তো আমার, কৃষি বেইজ তো! তাদের কোনো কষ্ট নেই। তারা তিনবার করে লিপস্টিক লাগাচ্ছে দিনে মহিলারা। চার বার করে স্যান্ডেল বদলাচ্ছে। অতএব আমার ভোট, আমি খুব ভালো জানি—আমার কোনো সমস্যা নাই কিন্তু সারা দেশের অবস্থাটা ডিফরেন্ট। এটা আমি বুঝি, বিশেষ করে শহরে যারা দিনমজুর, লো আর্নার গ্রুপ তাদের কষ্ট হচ্ছে,' বলেন তিনি।

গতকাল পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়েছে। এখানে যারা শ্রমিক নেতা ছিলেন তারা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন কিন্তু আরও কয়েকটি সংগঠনের নেতারা সন্তুষ্ট না, শুক্রবার সমাবেশ ডেকেছে—এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, 'দেখেন, ১০০ ভাগ কি ঠিক করা যায়? কেউ না কেউ খুশি হবে, কেউ না কেউ...কথা হলো একটা অবস্থান থেকে জাস্টিফাই করা। যারা অখুশি তারা যদি ২০ হাজার পেত তাহলে তারা খুশি হতো কিন্তু সমস্ত গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলো বন্ধ করে দেওয়া হতো। আমাদের একটা জায়গায় আসতে হবে যেখানে দুই পক্ষ রক্ষা হয়। সেখানে ১০০ ভাগ স্যাটিসফাই করা যায় না।

খালি বেতন যে সাড়ে ১২ হাজার হয়েছে তা নয়। তাদের বেসিক অ্যামাউন্ট বাড়ানো হয়েছে। সাড়ে ১২ হাজার বেতন যদি এন্ড অব দ্য মান্থ, দুই ঘণ্টা ওভারটাইম যদি তারা করে, একটা হাজিরা বোনাস পায় তারা। সব মিলিয়ে কিন্তু সাড়ে ১২ হাজার যার বেতন, সে কিন্তু ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা তুলবে। এই কথাটা কিন্তু সাধারণভাবে জানা যায় না।

তাছাড়া এবার নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে, প্রতিটি পরিবারকে একটা ফ্যামিলি কার্ড দেওয়া হবে। তাতে অন্তত আরও ৫০০ টাকা তাদের সাশ্রয় হবে। ওভারঅল সিচুয়েশন যেটা আছে, তাতে মনে হচ্ছে যা দেওয়া হয়েছে—ইটস ফাইন। আমার মনে হয়, মোস্টলি এটা একসেপ্ট করে নেবে। হয়তো সামান্য কিছু থাকতে পারে, দে উইল আন্ডারস্ট্যান্ড।

ফ্যামিলি কার্ড এক কোটি থেকে বাড়ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এ রকম সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন আমরা ঠিক করব কোন প্রক্রিয়ায় যাবে এটা; আমাদের মাধ্যমে যাবে নাকি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যাবে। তবে এটা করা হয়েছে, এর সুফল তারা পাবে।'

আমরা দেখি নিত্যপণ্য—পেঁয়াজ, আলুর দাম যখন বাজারে বেড়ে যায় তখন আপনারা আমদানির সিদ্ধান্ত নেন। বাজার মনিটরিং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় করে। আগে থেকেই তো জানেন, এ প্রসঙ্গে টিপু মুনশি বলেন, 'আলু আমদানি করতে গেলে কৃষিমন্ত্রী অনুমোদন লাগে। আমরা আজকে থেকে দুই মাস আগে আনতে চেয়েছি। তখন তাদের কাছে পারমিশন...তারা একটা চিন্তা করে স্বার্থ। একইভাবে আসি ডিমের কথায়, মৎস্য মন্ত্রণালয়। আমরা বাইরে কিন্তু পেছনের ব্যাকআপে যদি আমরা সাপোর্ট না পাই তাহলে তো আমরা অনেক সময় করতে পারি না। ক্রাইসিস যখন অ্যাকিউট হয়ে যায় তখন তারা মেনে নেয় কিন্তু তখন তো অনেক দেরি হয়ে যায়। যার জন্য সমস্যাটা আসে।'

আমদানি হলে স্বস্তির খবর আসে বা আলুর মৌসুম-পেঁয়াজের মৌসুমে স্বস্তির খবর আসে। বাকি বছরজুড়ে তো অস্বস্তিই থেকে যাচ্ছে! এ ব্যাপারে মত জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, 'সারা পৃথিবীজুড়ে সমস্যা, তবে সাপ্লাই যদি ভালো থাকে। ধরেন আজকে যে, যদি আলু সারপ্লাসে ফেলে দেয় তখন কিন্তু উল্টো কথা শুনতে হয় যে, আলুর দাম পাচ্ছে না আপনি কী ব্যবস্থা করছেন?'

Comments

The Daily Star  | English
Hilsa fish production in Bangladesh

Hilsa: From full nets to lighter hauls

This year, fishermen have been returning with lesser catches and bigger losses.

14h ago