রাশিয়ার মুখপাত্রের বিবৃতি বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সাংঘর্ষিক: বিএনপি

আজ শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথা বলেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
আওয়ামী লীগের কিংস পার্টি
রুহুল কবির রিজভী। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্র ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার চেষ্টার অভিযোগ তুলে যে বিবৃতি দিয়েছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা, তা গণতন্ত্রকামী বাংলাদেশিদের অনুভূতিকে আঘাত করেছে বলে মনে করে বিএনপি।

আজ শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথা বলেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

বিবৃতিতে রিজভী বলেন, 'গত ২২ নভেম্বর রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক (এফএমএ) মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা তার এক্স (টুইটার) হ্যান্ডেলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করে যে টুইট করেছেন, তা বাংলাদেশের জনগণ এবং বিএনপির দৃষ্টিগোচর হয়েছে।

'এই টুইটে তিনি বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বিরুদ্ধে ফ্যাসিস্ট সরকারবিরোধী মহাসমাবেশ আয়োজনে বিরোধী দলের সাথে পরিকল্পনার অভিযোগ তুলেছেন। এর মাধ্যমে তিনি মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের অভিযোগও করেছেন।'

বিবৃতিতে বলা হয়, 'এফএমএ মুখপাত্রের মন্তব্য একটি স্বচ্ছ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও অবস্থানের সাথে সাংঘর্ষিক। বিএনপি এই ভ্রান্ত তথ্য তথা অপব্যাখ্যার সাথে ভিন্নমত পোষণ করে।'

২০১৪ এবং ২০১৮ সালের 'প্রহসনমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে' আওয়ামী লীগ 'জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে, ভোট ডাকাতির অভিনব সব পন্থা অবলম্বন করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি কলঙ্কিত ইতিহাস তৈরি করেছে' বলেও উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।

বলা হয়, 'শেখ হাসিনার অধীনে অতীত নির্বাচনের অভিজ্ঞতা, চলমান সর্বগ্রাসী মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের জনগণ ও গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তিসমূহ একটি সর্বজনীন সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে। আমরা সবাই বিশ্বাস করি অবৈধ ও অনির্বাচিত বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন ফ্যাসিস্ট সরকারকে রাষ্ট্রক্ষমতায় রেখে বাংলাদেশে কোনো অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়।

'তাই গণতন্ত্রের পক্ষের সকল রাজনৈতিক দলকে সাথে নিয়ে, যুগপৎ আন্দোলনের মাধ্যমে, জনগণের লুন্ঠিত ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের আন্দোলন করে আসছে বিএনপি। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার তথা নিরপেক্ষ প্রশাসনের অধীনে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে দেশের জনগণ আজ রাজপথে নেমে আসছে। আমাদের আন্দোলনে প্রেরণা যোগাচ্ছে।'

বিবৃতিতে বিএনপির 'শান্তিপূর্ণ ও অহিংস' কর্মসূচিগুলোতে জনগণের অকুণ্ঠ নৈতিক সমর্থন আছে বলেও মন্তব্য করেন রিজভী। বলেন, 'বিগত কয়েক মাস ধরে, রাজধানী ঢাকাসহ সকল বিভাগীয় শহর তথা বাংলাদেশজুড়ে আমাদের সকল কর্মসূচিতে ধারাবাহিকভাবে বিপুল জনসমাগম হয়েছে। বিএনপি'র ডাকে সাড়া দিয়ে প্রতিটি সমাবেশে বহুমাত্রিক প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতাকে প্রতিহত করে লক্ষ লক্ষ মানুষ যোগ দিয়েছেন।'

এমন পরিস্থিতিতে সমাবেশ আয়োজনে কোন বিদেশি কূটনীতিক সহায়তা করেছেন—এমন অনাকাঙ্খিত অভিযোগ এর আগে উত্থাপিত হয়নি বলেও মন্তব্য করেন রিজভী। বলেন, 'এই ধরণের বাস্তবতা বিবর্জিত বক্তব্য বাংলাদেশের জনগণের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আকাঙ্ক্ষার বিরোধী বলে প্রতীয়মান। কার্যত মিস জাখারোভার দৃষ্টিভঙ্গি গণতন্ত্রকামী জনগণের স্পৃহাকে অবমূল্যায়নের মাধ্যমে দুর্নীতিগ্রস্ত আওয়ামী লীগ সরকারের ফ্যাসিস্ট শাসনব্যবস্থাকেই সমর্থন করে।'

রিজভী আরও বলেন, 'স্পষ্টতই রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক মুখপাত্রের বিবৃতি গণতন্ত্রকামী বাংলাদেশিদের অনুভূতিকে আঘাত করেছে।'

বিবৃতিতে রিজভী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, 'দেশের মানুষ এও প্রত্যাশা করে যে, গণআকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে গিয়ে অন্য কোন রাষ্ট্র, ফ্যাসিস্ট সরকারের জনবিচ্ছিন্ন ও গণবিরোধী অপশাসনকে অযাচিত সমর্থন করবে না।'

মুক্তিযুদ্ধে রাশিয়ার অবদানকে স্মরণ করে বিবৃতিতে বলা হয়, 'আমাদের প্রত্যাশা—রাশিয়া বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, স্বাধীনতার সংকল্প ও মহান আত্মত্যাগকে উপযুক্ত সম্মান করবে।'

 

Comments