আওয়ামী লীগ থেকে আসন ছাড়ের দাবিতে অনড় জাতীয় পার্টি

নির্বাচনে আসন ছাড়

একাদশ জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি আসন্ন নির্বাচনে অন্তত ২৩টি আসন থেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দাবিতে অনড় থাকবে বলে জানা গেছে দলটির অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে।

এই দাবি পূরণ না হলে জাতীয় পার্টি নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তও নিতে পারে বলে ব্যাপক আলোচনা চলছে দলটির ভেতরে।

আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে জাতীয় পার্টির জন্য আসন ছাড়ের সিদ্ধান্ত দু-একদিনের মধ্যে চূড়ান্ত হতে পারে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা, বিশেষ করে দলটির শীর্ষ নেতারা নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে চিন্তিত। কেননা, আওয়ামী লীগ এখনো আসন ছাড়ের বিষয়ে তাদের সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি।

জাতীয় পার্টির একাধিক নেতা বলেছেন, দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের মিডিয়া থেকে দূরে থাকা এবং নির্বাচন নিয়ে প্রায় এক মাস নীরব থাকা এটাই ইঙ্গিত দেয় যে তারা রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।

জাতীয় পার্টির এক কো-চেয়ারম্যান দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছিলেন, গত ৬ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টির এক উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল আসন ছাড়ের বিষয়ে আলোচনা করতে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখানে ক্ষমতাসীন দলের কাছ থেকে ৭০টি আসন চায় দলটি।

তবে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি আনুষ্ঠানিকভাবে এ ধরনের আলোচনার কথা স্বীকার করেনি।

গতকাল শনিবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, 'আসন ছাড় নিয়ে সমঝোতা শুধু বাংলাদেশে নয়, অন্যান্য দেশেও হয়।'

তিনি আরও বলেন, 'ভারতে বিজেপি অনেক নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থী দেয়নি। তারা জোটের অংশীদারদের জন্য সেই আসনগুলোয় কোনো প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়নি কিংবা শরিক দলগুলোর মধ্যে অনানুষ্ঠানিক বোঝাপড়া অনুসারে অন্যান্য দলের মনোনীত প্রার্থীদের সমর্থন দিয়েছে।'

তার মতে, 'বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও অন্যান্য দেশে এ ধরনের বোঝাপড়া হয়।'

আসন ছাড়ের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কবে হবে জানতে চাইলে চুন্নু বলেন, 'নির্বাচন বা রাজনীতিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বলে কিছু নেই। যেকোনো সময় যেকোনো সিদ্ধান্ত হতে পারে।'

নির্বাচনী প্রচারণার কৌশল সম্পর্কে তিনি জানান, তারা তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে বেকারত্ব দূরীকরণ, রাজধানী থেকে সেবার বিকেন্দ্রীকরণ, স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি ও শিশু অধিকার সুরক্ষার ওপর গুরুত্ব দেবে।

আওয়ামী লীগ ২৯৮ আসনে ও জাতীয় পার্টি ২৮৭ আসনে মনোনীত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে।

২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনী ফলাফল অনুসারে, জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা কেবল ওই আসনেই জয় পেয়েছে যেখানে সমঝোতা অনুযায়ী আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেয়নি।

এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার শক্তি জাতীয় পার্টির নেই।

জিএম কাদেরের মুখে কুলুপ

জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৪ নভেম্বর থেকে প্রায় একমাস ধরে দলটির প্রধান জিএম কাদের মিডিয়ার সামনে আসছেন না। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ছাড় নিয়ে দলটি সংকটময় পরিস্থিতির মুখে আছে। এটিও জিএম কাদেরের নীরব থাকার অন্যতম কারণ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় পার্টি এক নেতা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দেশ-বিদেশের মানুষ আমাদের সমালোচনা করছে। কারণ, এক মাস আগেও আমাদের চেয়ারম্যান দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেছিলেন যে দেশে নির্বাচনের পরিবেশ নেই। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে আমরা নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অর্থাৎ, আমাদের আগের অবস্থানের ঠিক বিপরীতে অবস্থান নিয়ে ফেলেছি।'

তিনি আরও বলেন, 'এমন পল্টি দেওয়ায় মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমাদের নিয়ে ট্রোল করছে।'

বিতর্ক এড়াতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মিডিয়াকে এড়িয়ে চলছেন এবং জনসম্মুখেও আসছেন না বলে দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে।

জাতীয় পার্টির এক জ্যেষ্ঠ নেতা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দলের চেয়ারম্যান যদি আমাদের প্রার্থীদের জয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত না হতে পারেন, তাহলে আমরা কেন দৌড়াবো?'

'জিএম কাদের আসলে মুখে কুলুপ এঁটে রেখেছেন, যাতে পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকলে নির্বাচনী দৌড় থেকে দলকে সরিয়ে নিতে পারেন,' বলে মন্তব্য করেন তিনি।

গত ১৪ নভেম্বর ঢাকায় দলের সমাবেশে জিএম কাদের সর্বশেষ জনসমক্ষে হাজির হন।

এসব বিষয়ে মন্তব্য জানতে ডেইলি স্টার জিএম কাদেরকে একাধিক কল ও মেসেজ দিলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।

Comments

The Daily Star  | English

Cops get whole set of new uniforms

The rules were published through a gazette yesterday, repealing the previous dress code of 2004

2h ago