জাতীয় পার্টিকে সংলাপে না ডাকা প্রসঙ্গে যা বললেন জি এম কাদের

জি এম কাদের | ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে সম্প্রতি ওঠা অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ ভ্রান্ত বলে দাবি করেছেন দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের তিনটি নির্বাচনকে বৈধতা দেওয়ার শাস্তি হিসেবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংলাপে ডাকা হয়নি, এমন প্রচারণা জাতীয় পার্টির জন্য বিব্রতকর।

জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের কবর জিয়ারত শেষে শনিবার বিকেলে রংপুরে পল্লী নিবাস বাসভবনে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই কথা বলেন।

জি এম কাদের বলেন, 'আমাদের একটি আপত্তির জায়গায় আছে। আমাদের দলটি হলো, মোটামুটি পুরাতন দল। আমাদের ইতিহাস আছে, সরকারের উন্নয়নের সঙ্গে আমরা কাজ করেছি। রাষ্ট্র পরিচালনায় আমাদের অভিজ্ঞতা আছে। আমরা সব সময় চেয়েছি, এখনো চাচ্ছি, বলে আসছি, সরকারকে সর্বাত্মকভাবে আমরা সহযোগিতা করব। যাতে করে সরকার সঠিক পথে চলতে পারে। উনারা যা পরামর্শ চান, যেভাবে চান। আমরা সেটা দেবো এবং আমরা দিয়ে আসছি।'

'এখন হঠাৎ করে যদি আমাদের না দিতে বলা হয় বা না ডাকা হয়, আমাদের তরফ থেকে কোনো আপত্তির কারণ নেই। আমাদের আপত্তি হলো যে, একটি বিষয়ে আমাদের দোষারোপ করে শাস্তি হিসেব এটি দেখা হচ্ছে এবং ব্যাপকভাবে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এটি আমাদের জন্য কিছুটা হলেও বিব্রতকর,' বলেন তিনি।

কাদের বলেন, 'উনারা আমাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে, পরামর্শ চাইলে আমরা দেবো। যে কথাগুলো বলা হচ্ছে, অভিযোগ করা হচ্ছে, সেগুলো ভ্রান্ত, সেগুলো সঠিক নয়। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচন আমরা করে আওয়ামী লীগ সরকারকে বৈধতা দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। সেই কারণে তাদের দোসর বলা হচ্ছে।'

প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে তিনি বলেন, '২০১৪ সালে আমরা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমিসহ ২৭০ জন সংসদ সদস্য প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলাম। আমাদের প্রত্যাহার আবেদন গ্রহণ করা হয়নি, আমার ভাইয়েরটাও করা হয়নি। পরবর্তীতে আমি ঘোষণা দিয়ে বলেছিলাম, আমি এই নির্বাচনে নেই। আমাদের মন্ত্রী হতে বলা হয়েছিল, তখনো আমি হইনি। আমার ভাইয়ের ব্যাপার হলো, বিএনপি নির্বাচনে না এলে করব না, এই শর্তে উনি নির্বাচনে গিয়েছিলেন। বিএনপি যখন আসেনি, তখন উনি বলেছিলেন বিএনপিকে সুযোগ দেওয়া হোক, সাত দিন সময় বাড়িয়ে দেওয়া হোক। বিএনপি এলো না, তখন তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন আমরা উইড্রো করব। যার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা উইড্রো করতে শুরু করলাম।'

'উইড্রো পেপার পাঠিয়ে দেওয়া হলো। হঠাৎ করে উনাকে সিএমএইচে (সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল) নেওয়া হলো। সেখানে গিয়ে আমি শুনলাম, উনি অসুস্থ নন। উনি বললেন, আমাকে জোর করে ধরে নির্বাচন করতে বাধ্য করা হচ্ছে। তিনি আরও বললেন, আমি নির্দেশ দিচ্ছি নির্বাচন থেকে সবাইকে সরে দাঁড়াতে বলো, কেউ অংশ নিলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি সেটা প্রচার করেছি। যার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ২৭০ জন সরে দাঁড়িয়েছিলাম এবং পরবর্তীতে মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করিনি,' যোগ করেন তিনি।

কাদের বলেন, 'আমার ভাই ও ভাবীসহ কিছু মানুষকে দিয়ে একটা নির্বাচন করা হলো। সেই হিসাবে বলা যায়, নির্বাচনে আমরা যেটা গেছি, সেটা জোর করে নেওয়া হয়েছে। একটি ক্ষুদ্র অংশ গেছে। জাতীয় পার্টি সার্বিকভাবে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে, এটি আমার মনে হয় সত্যের অপলাপ। আংশিকভাবে গেছে। বেশিরভাগই অংশগ্রহণ করেনি। এর বিপক্ষে আমি এবং আরও যারা ছিলেন, খুবই দৃঢ় ভূমিকা রেখেছিলাম। 
গত সরকারের আমলে আমি প্রকাশ্যে বলেছি, ২০১৪ সাল থেকে আমাদের দলটিকে দুই ভাগ করা হলো এবং সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে একটি অংশকে আমাদের সিম্বল ব্যবহার করতে দেওয়া হতো, আমাদের নাম ব্যবহার করতে দেওয়া হতো। মিটিং-মিছিল করতে দেওয়া হতো এবং আমরা যেটা বক্তব্য দেবো, তার বিপরীতে তারা বক্তব্য দিতো। সরকারের সমর্থক হিসেবে বক্তব্য দিতো। আমরা কোনো সময় সরকারের বিপক্ষে অবস্থান নিলে তারা সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে থাকতো। এই হ-য-ব-র-ল অবস্থার কারণে আমাদের দলের প্রতি মানুষের বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছিল।'

গত নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, '২০২৪ সালে যখন আমরা নির্বাচন বর্জন করতে চেষ্টা করলাম, সেই বিভক্তিকে কাজে লাগিয়ে পরোক্ষ চাপ দেওয়া হলো, যদি তোমরা নির্বাচনে না আসো, রওশন এরশাদকে দিয়ে নির্বাচন করানো হবে। অবশেষে আমরা বললাম, নির্বাচনে যাব। তবে নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার গ্যারান্টি দিতে হবে। আমরা কিন্তু কোনো ছাড় চাইনি। নির্বাচনী ব্যবস্থা নিরপেক্ষ করার জন্য বলেছিলাম। যখন দেখলাম সেটা হয়নি, তখন আমি না জানিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। সকালে দেখলাম ওরা খবর পেয়ে গেছে। জোর করে, আমার অফিস ঘিরে ফেলে, সব পথ বন্ধ করে দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ, এসবি, ডিজিএফআই, এনএসআই সবাই মিলে জোর করে আমাদের নির্বাচনে নেওয়া হয়েছে।'

তিনি বলেন, 'যখন আমাদের কোনো উপায় ছিল না, নির্বাচনে যেতেই হবে। আমি যদি ছেড়ে দিতে চাই, তাও কিছু মানুষ নির্বাচন করবে, তখন আমার কাছে ১০ জনের তালিকা ছিল কোনো ছাড় দেওয়া নয়, শুধু তোমরা নৌকা প্রত্যাহার করবে এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। এই কথাটা বলে আমরা নির্বাচনে গিয়েছিলাম এবং নির্বাচন করেছি।'

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান প্রসঙ্গে জি এম কাদের বলেন, 'আজকে আন্দোলনের ডাক দিয়ে জনগণ ঝাঁপিয়ে পড়েছে, আমি মনে করি সেখানে আমার ও আমার দলের অবদান আছে। আমরা হামলা-মামলার শিকার সব সময় হয়েছি, এখন আবার কিছুটা হামলা-মামলার শিকার হচ্ছি। যাই হোক, আমার বিশ্বাস তারা সঠিক বিষয়টি বুঝতে পারবেন।'

তিনি বলেন, 'স্বৈরাচার ও কর্তৃত্ববাদী সরকারের কথা আমি বলেছি সব সময়, নব্য ফ্যাসিবাদের আবির্ভাব যেন না হয় বাংলাদেশের মাটিতে। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের ওপর যে জুলুম করা হচ্ছে, আমরা মজলুম হলে, বাংলাদেশের জনগণ অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সব সময় দাঁড়ায় এবং যারা মজলুম, তাদের পক্ষে দাঁড়ায়, আমাদের পক্ষে জনগণ থাকবে।'

'আমরা জনগণের রাজনীতি করতে চাই এবং করে যাব,' বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Inside the July uprising: Women led, the nation followed

With clenched fists and fierce voices, a group of fearless women stood before the locked gates of their residential halls on the night of July 14, 2024. There were no commands, no central leader -- only rage and a deep sense of injustice. They broke through the gates and poured into the streets.

15h ago