রওশন এরশাদ দলের কেউ না, প্রধান পৃষ্ঠপোষক আলংকারিক পদ: জাপা মহাসচিব

mujibul_haque_chunnu
জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু | ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রধান পৃষ্ঠপোষক, তিনি দলীয় কোনো পদ হোল্ড করেন না বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।

আজ বুধবার দুপুরে বনানীতে জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, 'জোট-মহাজোটের বিষয়ে আমরা নির্বাচন কমিশনে কোনো দরখাস্ত করি নাই। আরপিও অনুযায়ী যদি জোট-মহাজোট করতে হয়, তাহলে একটা নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন কমিশনে দরখাস্ত দিয়ে জানিয়ে দিতে হয়। আমরা জানাইনি কারণ আমরা প্রথম থেকেই জোট-মহাজোটে যাওয়ার সিদ্ধান্তে নাই।'

তিনি বলেন, 'গত রাতের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ বেশ কয়েকজন নেতাদের সাঙ্গে আমরা অনেকক্ষণ আলাপ করেছি, খোশ-গল্প করেছি। নির্বাচন কীভাবে, যাতে ভালোভাবে হয়। ভোটাররা কীভাবে আসবে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কী হবে, প্রশাসনের কী ভূমিকা থাকবে, শৃঙ্খলা বাহিনীর কী ভূমিকা থাকবে, নির্বাচন কমিশনের কী ভূমিকা থাকবে, আওয়ামী লীগের কর্মীদের কী ভূমিকা থাকবে—এসব অনেক আলোচনা করেছি।

'তাদের কেউ বিশ্বাস না করলেও ভালো করে রাতে ভোজ দিয়েছেন। নৈশভোজ আমাদের খেতে দিয়েছেন, আমরা খেয়েছি। পেট ভরে খেয়েছি। কাজেই আমার মনে হয় না যে, উনারা যে বলছেন বিশ্বাস করেন না; বিশ্বাস না করলে কারও বাড়িতে দাওয়াত দিয়ে এত আলাপ করে খাওয়াইতেন না নিশ্চয়ই,' যোগ করেন তিনি।

অবিশ্বাসের কথা লোক দেখানো নাকি রাজনৈতিক বক্তব্য জানতে চাইলে জাপা মহাসচিব বলেন, 'অবিশ্বাসের কথা আমি বলিনি। যিনি বলছেন, তিনি সেটার উত্তর দিতে পারবেন। জাতীয় পার্টি সবাইকে বিশ্বাস করে।'

আপনি কি প্রশ্ন করেছিলেন যে, এই ধরনের কথা আপনারা মিডিয়াতে কেন বলছেন—গণমাধ্যমকর্মীরা জানতে চাইলে চুন্নু বলেন, 'না, আমি কথাটা জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন মনে করি নাই। কারণ তাদের সঙ্গে যখন কথা হয়েছে, তাদের ব্যবহারে আমি আপ্লুত। তাদের কথা-বার্তায় আমি এত খুশি যে, এই কথা আর জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন মনে করি নাই।'

তিনি আরও বলেন, 'আমরা নির্বাচনে এসেছি নির্বাচন করার জন্য, না করার জন্য না। নির্বাচন করার শর্ত হিসেবে আমাদের একটাই দাবি, নির্বাচনের পরিবেশ এমন হতে হবে যেন ভোটারদের আস্থা আসে। আর কোনো দাবি আমাদের নাই।'

শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টি নির্বাচনে থাকবে কি না জানতে চাইলে চুন্নু বলেন, 'আমরা নির্বাচন করতে এসেছি। নির্বাচন থেকে চলে যাওয়ার জন্য, নাটক করার জন্য আসি নাই। নির্বাচন করব এবং নির্বাচন করে আগামীতে ক্ষমতায় যাব সেই স্বপ্নেও আমরা বিভোর। আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে যাবে সে রকম চিন্তাই আমাদের মধ্যে আছে। কাজেই নির্বাচন থেকে চলে যাব কেন!'

সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ওপর জাতীয় পার্টির বিশ্বাস বেড়েছে বলেও জানান দলটির মহাসচিব।

জাতীয় পার্টি বলছে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করবে না, আবার আরেকটি পক্ষ বলছে, আসন ভাগাভাগির বিষয়ে সিদ্ধান্ত শিগগির চূড়ান্ত হবে—এ ব্যাপারে চুন্নু বলেন, 'আওয়ামী লীগের সঙ্গে মূলত নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।'

তিনি বলেন, 'নির্বাচনের কৌশল হিসেবে, রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে সিটসহ যেকোনো বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। না-ও হতে পারে। সিদ্ধান্ত হতে পারে, না-ও হতে পারে। নির্বাচনী কৌশল হিসেবে রাজনীতিতে শেষ বলে কোনো কথা নেই।'

জিএম কাদের সাহেবকে আমরা দীর্ঘ দিন দেখছি না, সরকারের সঙ্গে তার কোনো প্রকার মান-অভিমান চলছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'উনি তো এখনো আছেন পার্টি অফিসে। জিএম কাদের সাহেব মনে করেন আপনাদের সঙ্গে আমার খুব একটা ভালো সম্পর্ক। তাই আমাকে বলেছেন, তুমি উনাদের সঙ্গে কথা বলো। মান-অভিমান থাকবে কেন? আমরা তো নির্বাচনে যাচ্ছি, মান-অভিমান থাকলে কি নির্বাচনে যেতাম!'

তিনি গণমাধ্যমের সামনে আসছেন না কেন, জানতে চাইলে দলটির মহাসচিব বলেন, 'আসবেন না কেন? আসার মতো কোনো প্রয়োজন তো উনি দেখছেন না। আমিই তো চালিয়ে যাচ্ছি উনার পক্ষে।

'উনি নিজে বলছেন এমন কথার সময় এখনো আসে নাই। অবশ্যই কথা বলার সময় এলে উনি নিজে বলবেন,' যোগ করেন চুন্নু।

গতকাল রওশন এরশাদ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বলেছেন, আমি নির্বাচনে যেতে চেয়েছিলাম, জিএম কাদের আমাকে যেতে দেয়নি। আপনাদের সঙ্গে জোট না করা হয় সেই আহ্বান জানিয়েছেন। বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে চুন্নু বলেন, 'উনাকে, উনার ছেলেকে এবং আরেকজনকে আপনাদের মাধ্যমে বারবার বলেছি। উনার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগতভাবে টেলিফোনে আলাপ হয়েছে। উনি নিজেই বলেছেন নির্বাচন করবেন এবং ফরম নেবেন। আমি বলেছি, আপনি নির্দেশ দিয়ে ফরম আমি আপনার বাসায় দিয়ে আসব। উনি বলেছেন লোক পাঠাবেন। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন রাত ১০টা পর্যন্ত আমরা অপেক্ষায় ছিলাম। তারপর তিনি সংবাদ সম্মেলনে বললেন যে, নির্বাচনে যাবেন না। এখন দোষ কার আপনারা চিন্তা করবেন।'

আপনারা বিভিন্ন সময় দাবি করে আসছেন দলের ভেতরে কোনো বিভক্তি নেই। বিষয়টা নিয়ে জানতে চাইলে জাপা মহাসচিব বলেন, 'আমি আবারও বলছি, দলে কোনো বিভক্তি নাই।'

রওশন এরশাদ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলে এর কোনো অর্থ দাঁড়ায় কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'না, এগুলো আমার দলের কিছু মিন করে না। তিনি বিরোধী দলের নেতা, সেই হিসেবে সংসদ নেত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। এর সঙ্গে জাতীয় পার্টির কোনো সম্পর্ক নাই। ন্যূনতম সম্পর্ক নাই।'

দলের চেয়ারম্যানের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এলো কি না, জানতে চাইলে চুন্নু বলেন, 'সাংগঠনিকভাবে আমি কোনো দ্বন্দ্ব দেখি না। বিরোধী দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতেই পারেন, এ বিষয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নাই। আমি বা জিএম কাদের যেটা বলি সেটা হলো জাতীয় পার্টির কথা।

'আমি জানি না, এক দলের কাছে আরেক দলের নালিশ চলে কি না। এটা রাজনৈতিক কোনো সংস্কৃতিতে পড়ে কি না আমার নতুন করে স্টাডি করতে হবে,' তিনি বলেন।

রওশন এরশাদ বলেছেন, আপনারা যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন তাতে তার কোনো সমর্থন নেই—এ ব্যাপারে তিনি বলেন, 'আমি বুঝি দলের কেউ যদি নেতৃত্বের বাইরে যায় তাহলে অনৈক্য। দলের কোনো নেতৃত্ব তো বাইরে যায়নি! উনি আমাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক, দলীয় কোনো পদ হোল্ড করেন না।'

'উনি দলের কেউ না। দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক; আলংকারিক পদ। নির্বাহী কোনো ক্ষমতা তার নেই,' যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Soybean oil price hike temporary: commerce adviser

Improved supply and increased competition will help bring down prices soon, he says

1h ago