এই সংসদে বিরোধী দল খুঁজে পাওয়া যাবে?

সংসদে বিরোধী দল

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে, এটি ভোটের আগেই পরিষ্কার ছিল। প্রশ্ন ছিল, প্রধান বিরোধী দল কারা হবে।

এই সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগের ২২২ আসনের পর সবচেয়ে বেশি ৬২টি আসন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের 'স্বতন্ত্র' প্রার্থীরা। তাদের মধ্যে চারজন ছাড়া বাকি সবাই হয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কমিটির পদধারী নেতা, নয়তো সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। জোটের নেতারা নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে আরও দুটি আসন পেয়েছেন।

সাধারণ ধারণা হলো, আসন সংখ্যায় সংসদের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল যাকে নেতা নির্বাচিত করবে, তিনিই বিরোধী দলীয় নেতার আসন পাবেন। তার দলই হবে সংসদের প্রধান বিরোধী দল।

কিন্তু বিএনপিবিহীন ৭ জানুয়ারির এই ভোটের ফলাফলে ১১টি আসন নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা একাদশ সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ে প্রায় ছয় গুণ আসনে আওয়ামী লীগের 'স্বতন্ত্র' প্রার্থীরা জিতে আসায় আলোচনা ঘুরে গেছে।

এমন পরিস্থিতিতে দ্বাদশ সংসদে বিরোধী দলের আসনে কারা বসছে, তা নিয়ে জল্পনার মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন নতুন প্রধানমন্ত্রী; যিনি একাধারে সংসদ নেতা ও দলের সভাপতি।

প্রশ্ন হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার আছে কি না? কিংবা তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিলে তা কতখানি গণতান্ত্রিক হবে?

বিষয়টি নিয়ে দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক ও স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে।

এ ব্যাপারে আলী ইমাম মজুমদার বলেন, 'প্রথম কথা হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রকৃত বিরোধী দল যারা, তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণই করেনি। আবার আওয়ামী লীগের ছেড়ে দেওয়া ২৬টি আসনের মধ্যে জাতীয় পার্টি ১১টি আসন পেয়েছে। সুতরাং এই সংসদে একটা বিরোধী দল হবে এমন আশা তো করা যায় না।'

আলী ইমাম মজুমদারের ভাষ্য, যেভাবে নিজেরাই 'বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে একপাক্ষিক একটি খেলা হয়েছে', যে প্রক্রিয়ায় নির্বাচনটি হয়েছে সেটা 'গ্রহণযোগ্য না'। তাই প্রকৃত অর্থে বিরোধী দল বলতে যা বোঝায়, সেটা এই সংসদে আশা করাও উচিত হবে না। তিনি বলেন, 'আর (বিরোধী দল) হলেও যেটা হবে সেটা তাদের (আওয়ামী লীগের) সাহায্যপুষ্ট কোনো একটা অংশ হবে। সাধারণত এমনটা দেখা যায় না।'

'সংবিধানের কোথাও বিরোধী দল নামক কোনো শব্দ নেই। পার্লামেন্টারি অপজিসন নামক কোনো শব্দ নেই। পলিটিক্যাল পার্টির সংজ্ঞাটাও খুব পরিষ্কার না। এটা আমাদের সংবিধানের দুর্বলতা। যে কারণে আমরা একটা কনফিউশনে পড়ছি।'

এ প্রসঙ্গে শাহদীন মালিকের বক্তব্যও অনেকটা একইরকম। বিরোধী দল নির্ধারণে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা গণতান্ত্রিক কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'গণতন্ত্র তো এখন মাইনর ইস্যু। এখন তো প্রতিটি ইস্যুতেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। সুতরাং তিনিই যে বিরোধী দল নির্ধারণের ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেবেন, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।'

এই জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর ভাষ্য, 'সম্ভবত আমরা গণতন্ত্রের নতুন একটি মানদণ্ড নির্ধারণ করছি; যেখানে একজনই সব সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।'

বিশ্বের আরও অনেক দেশে এমন নজির আছে মন্তব্য করে শাহদীন মালিক আরও বলেন, 'সুতরাং এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। আমরা অবশ্যই গণতন্ত্রের একটি নতুন ধারার মধ্যে প্রবেশ করছি।'

বিষয়টি নিয়ে তোফায়েল আহমেদের অভিমত, 'যারা নির্বাচিত হয়েছেন তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের বাইরে কেউই নেই। নৌকা যারা নিয়েছে তারা অপজিসনে যেতে চাইলে তাদের সিট থাকবে না। সিট চলে যাবে। কিন্তু আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র ৬২ জন, জাতীয় পার্টির ১১ জন, তারা একসঙ্গেও বিরোধী দল গঠন করতে পারে। আর যারা বলবে আমরা অপজিসনে যাব না, তারা স্বতন্ত্র থাকবে।'

বিরোধী দল কিংবা বিরোধী দলীয় নেতা নির্বাচনে সংসদ নেতার কোনো ভূমিকা নেই উল্লেখ করে এই স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ বলেন, 'অপজিসন গ্রুপ তৈরির বিষয়টি মেম্বারদের (সংসদ সদস্য) এখতিয়ার। তারা নিজেদের নাম সই করে কাগজ স্পিকারকে দেবেন, স্পিকার সিদ্ধান্ত নেবেন। সংসদ নেতা নন। এ ক্ষেত্রে তিনি আন্ডার হ্যান্ড ডিল করতে পারেন। সেটা ভিন্ন জিনিস। কিন্তু ওপেনলি, লিগ্যালি শি ইজ নোবডি ইন ডিসাইডিং হু উইল বি দ্য অপজিশন।'

বিরোধী দল হতে গেলে ন্যুনতম কতজন সদস্য থাকতে হবে, সে ব্যাপারে সংবিধান কিংবা সংসদীয় ব্যবস্থায় পরিষ্কারভাবে কিছু বলা নেই বলেও উল্লেখ করেন তোফায়েল আহমেদ। বলেন, 'কিন্তু কনভেনশন হচ্ছে ১০ শতাংশ হলে পুরোপুরি বিরোধী দলের স্বীকৃতি পেতে পারে।

তোফায়েল আহমেদ আরও বলেন, 'সংবিধানের কোথাও বিরোধী দল নামক কোনো শব্দ নেই। পার্লামেন্টারি অপজিসন নামক কোনো শব্দ নেই। পলিটিক্যাল পার্টির সংজ্ঞাটাও খুব পরিষ্কার না। এটা আমাদের সংবিধানের দুর্বলতা। যে কারণে আমরা একটা কনফিউশনে পড়ছি।'

Comments

The Daily Star  | English

US tariff talks: First day ends without major decision

A high-level meeting between Bangladesh and the Office of the United States Trade Representative (USTR) ended in Washington, DC, yesterday without a major decision, despite the looming expiry of a 90-day negotiation window on July 9.

9h ago