একটা কাজ দিলাম, কেউ কিছু পয়সা পেল—এই চিন্তা করে প্রকল্প গ্রহণ করবেন না: প্রধানমন্ত্রী

একটা কাজ দিলাম, কেউ কিছু পয়সা পেল—এই চিন্তা করে প্রকল্প গ্রহণ করবেন না: প্রধানমন্ত্রী
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা | ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

প্রকল্প গ্রহণে সাশ্রয়ী হওয়ার পাশাপাশি কৃষিকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে জনপ্রতিনিধিদের আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস ২০২৪ উদযাপন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে আজ রোববার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তিনি এ কথা বলেন।

ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর থেকে নির্ভরশীলতা কমাতে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমরা এখন সোলার ব্যবহার করছি, আমাদের পরিকল্পনা আছে আমাদের যত কৃষি কাজে যতগুলো সেচ ব্যবস্থা, আমরা সবগুলোতে সোলার ব্যবস্থাপনা করে দেবো। কারণ দিনের বেলা প্রচুর রোদ এবং ভালো ব্যবস্থা আছে, পানি তুলে রেখে সেই পানি আমরা ব্যবহার করতে পারি। তাহলে বিদ্যুতের ওপর চাপ থাকবে না। আমরা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি এ কথা সত্য। বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে। কারণ বিদ্যুৎ উৎপাদনে কিন্তু অনেক খরচ হয়। এত বেশি টাকা খরচ হয়, আমরা কিন্তু খুব কম টাকা নিই।

'এখন যেমন আমরা ঠিক করেছি যে, যে যত বেশি ইউনিট ব্যবহার করছে তাকে তত বেশি টাকা দিতে হবে। কারণ আমরা যে ভর্তুকি দিচ্ছি; আমার ২০ টাকা যদি লাগে করতে আমি ছয় টাকা নিচ্ছি। যারা বেশি বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করে তারাই লাভবান হয়। বাড়িতে কয়েকটা এয়ার কন্ডিশনার আছে, টেলিভিশন, লিফট, তারাই লাভবান হয়। এখন থেকে সেভাবে হবে না। একটা নির্দিষ্ট ইউনিট পর্যন্ত যে ব্যবহার করে তার জন্য কিছু ছাড় দেওয়া আছে, যারা নিম্নবিত্ত কিন্তু এর উপরে যে যত বেশি ব্যবহার করবে তার বিদ্যুতের মূল্য তত বেশি বৃদ্ধি পাবে। সেইভাবেই আমরা করতে চাই। তাছাড়া এখন তো আমরা মিটার দিয়ে দিচ্ছি,' যোগ করেন তিনি।

করোনা অতিমারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে প্রভাবে মূল্যস্ফীতির প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমি তখন থেকে সবাইকে আহ্বান করেছিলাম, এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। যার যতটুকু জমি আছে আপনারা চাষ করেন। এটা করতে হবে।'

এ সময় সমবায়ের মাধ্যমে চাষ করার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, 'আমরা গবেষণা করে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি কিন্তু আর কত? আমাদের জনসংখ্যা বাড়ছে। চাষ উপযোগী জমি আমাদের সংরক্ষণ করতে হবে। প্রতিটি এলাকায় পরিকল্পিতভাবে একটা মাস্টার প্ল্যান করে যদি করা যায়, তাহলে দেখা যাবে যে জমিতে আমরা উৎপাদন বাড়াতে পারি।'

জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, 'একটি অঞ্চলের কী কী পণ্য তার ওপর ভিত্তি করে প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে তোলা। কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্প, খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প, সেগুলো গড়ে তোলা। এসএমই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আমরা অর্থ দিচ্ছি। আমরা কর্মসংস্থান ব্যাংক করে দিয়েছি। বিনা জামানতে তার মাধ্যমে টাকা পাওয়া যায়। বর্গা চাষিদের বিনা জমানতে কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে আমরা ঋণ দিচ্ছি। কাজেই আমরা কৃষি ক্ষেত্রে শুধু ভর্তুকিই দিচ্ছি না, কৃষিও তো আমাদের দেয়। কাজেই সেদিকে লক্ষ রেখে সবাই যদি একটু কাজ করেন দেখবেন, বাংলাদেশ সেই পুকুর ভরা মাছ, গোলা ভরা ধান, ফুলে-ফসলে ভরে উঠবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে কোনো হাহাকার থাকবে না, দারিদ্র্য থাকবে না।
 
'যদিও দারিদ্রের হার ৪১ ভাগ থেকে আমরা ১৮ দশমিক সাত ভাগে নামিয়ে এনেছি, আর হত দরিদ্র ২৫ দশমিক এক ভাগ ছিল, তা এখন পাঁচ দশমিক ছয় ভাগে নেমে এসেছে। ইনশাল্লাহ, এই বাংলাদেশে কোনো মানুষ হত দরিদ্র থাকবে না। আর কেউ যেন দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত না হয় সে ব্যবস্থা করা। আমরা এগুলো পদক্ষেপ নিয়েছি, আপনাদের কাছে আমার এটাই আবেদন থাকবে যে, একজন নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে জনগণের কাছে যে ওয়াদা দিয়ে এসেছেন সেটা আপনারা রক্ষা করবেন,' যোগ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

প্রকল্প গ্রহণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'এটা আমিই দেখেছি, ওখানে আমাদের অনেক সরকারি অফিসাররাও থাকে, নানা রকম বুদ্ধি পরামর্শও দেয়। আর আমাদেরও কেউ কেউ মনে করে এখানে একটা স্থাপনা করলেই তো ভালো একটা কমিশন পাওয়া গেল বা কিছু পয়সা কামাই করা গেল। দয়া করে এই ব্যবস্থায় যাবেন না।

'আপনার এলাকার জন্য কোনটা করলে পরিবেশ সংরক্ষণ হবে। মানুষ উপকৃত হবে সেগুলো দেখেই প্রকল্প গ্রহণ করা। যত্রতত্র, যেখানে-সেখানে একটা কিছু করেই ব্যাস ফেলে দেওয়া না। কোনো জলাভূমি, খাল, নদী, বিল যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। সেদিকে লক্ষ রেখে যত্রতত্র যেখানে-সেখানে কোনো কিছু না করা। প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের অর্থ সাশ্রয় করতে হবে। অর্থ সাশ্রয় করেই কাজ করতে হবে যেন জাতীয়ভাবে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করতে পারি,' বলেন তিনি।

প্রকল্প গ্রহণ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করতে হবে বলেও এ সময় দিক-নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা আরও বলেন, 'শুধুমাত্র ওই একটা কাজ দিলাম, আর সেখান থেকে কেউ কিছু পয়সা পেল, এই চিন্তা করে প্রকল্প কেউ দয়া করে গ্রহণ করবেন না।'

আওয়ামী লীগ সরকারে নেওয়া নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরে জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা আরও বলেন, 'এত কিছু করা হচ্ছে এ দেশের মানুষের জন্য। আমরা একাত্তর সালে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এই স্বাধীনতা ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। এই স্বাধীনতার সুফল প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছাব সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আর সেটা আমরা করতে পারব একমাত্র আপনারা যদি সক্রিয়ভাবে কাজ করেন, মানুষের সেবা করেন, তখন এটা করা সম্ভব। বাংলাদেশটাকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব, ৪১ সালের বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ।' 

Comments

The Daily Star  | English

BGMEA wants 3-month window from India to clear pending shipments

The association urges the interim government to send a letter to India seeking the opportunity

1h ago