রাজনীতি

মাছ-ভাতের অভাব নাই, ডাল-ভাতেরও নাই, মানুষের চাহিদা এখন মাংস: প্রধানমন্ত্রী

খালেদা জিয়া ঘোষণা দিলো যে, দেশের মানুষকে ডাল-ভাত খাওয়াবে। সেই ডাল-ভাত খাওয়াতেও কিন্তু ব্যর্থ হয়েছিল।’
মাছ-ভাতের অভাব নাই, ডাল-ভাতেরও নাই, মানুষের চাহিদা এখন মাংস: প্রধানমন্ত্রী
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা | ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

বাংলাদেশ এখন মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এত খাল-বিল, নদী-নালার দেশ আমরা, আমাদের দেশের মানুষের কেন আমিষের কষ্ট হবে!

তিনি বলেন, 'অনেক হারিয়ে যাওয়া দেশি মাছ গবেষকরা গবেষণা করে করে সেগুলো কিন্তু আজকে উৎপাদন করছে। আমরা আমাদের অনেক প্রায় বিলুপ্ত মাছগুলো আবার ফিরে পাচ্ছি। গবেষণা ছাড়া কোনো দেশ এগিয়ে আনতে পারে না, এটাই হলো বড় কথা। তাছাড়া মুরগির ক্ষেত্রেও গবেষণা করে করে বিভিন্ন ধরনের পাখি এখন উৎপাদন হচ্ছে। শুধু ডিমই না, মাংসও এখন মানুষ খেতে পাচ্ছে।'

আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে আয়োজিত প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী ২০২৪ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার পরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, '৪০ লক্ষ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি পূরণ করেও বাংলাদেশকে আমরা উদ্বৃত্ত খাদ্যের দেশে উন্নীত করি। পার্লামেন্টে যেদিন আমি ঘোষণা দিলাম যে, আজ থেকে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ সেই দিন বিএনপি বিরোধী দলে, খালেদা জিয়া বিরোধী দলের চেয়ারে বসা। তার অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান উঠে দাঁড়িয়ে বললো—খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া ভালো না, তাহলে খাদ্য সাহায্য পাওয়া যাবে না।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'তাদের চিন্তাধারাটা ছিল, আমরা প্রতিনিয়ত অন্যের কাছে হাত পেতে চলব। অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকব আর ভিক্ষা চেয়ে খাবার এনে খাব। যেখানে জাতির পিতা বলে গেছেন, আমাদের মাটি আছে, সোনার মাটি। আমাদের ফসল আমরা ফলাবো এবং আমরা তা প্রমাণ করেছি।'

তিনি বলেন, '২০০১ সালে আমার পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার পরে যখন আমি ক্ষমতা হস্তান্তর করি, তখনো ২৬ লক্ষ মেট্রিক টন খাদ্য উদ্বৃত্ত আমরা রেখে গিয়েছিলাম কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, ২০০৯ সালে যখন আবার সরকারে আসি, তখন দেখি সেই ২৬ লক্ষ উদ্বৃত্ত তো দূরের কথা, বরং ৩০ লক্ষ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি রয়েছে বাংলাদেশে। আর যেখানে মূল্যস্ফীতি আমি এক দশমিক পাঁচ শূন্য শতাংশ রেখে গিয়েছিলাম; চালের দাম মাত্র ১০ টাকা ছিল, সেই চালের দাম ৩০ টাকার উপরে হয়ে গেছে, আর মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশে উঠে গেছে। তার ওপর বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা এবং রিজার্ভ মানি এক বিলিয়নও না—তারও কম। সেই অবস্থায় যাত্রা শুরু করেই কিন্তু বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে গেছি।'

তিনি বলেন, 'আজকে আমরা উন্নয়নশীলে দেশের মর্যাদা পেয়েছি, ২০২৬ সাল থেকে তা শুরু হবে। এর মধ্যে আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। একদিকে যেমন আমাদের গণমানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। সেই সাথে সাথে আমিষ সরবরাহের জন্য আমাদের হাঁস, মুরগি, পশু, পাখি যা কিছু দরকার। কারণ আমাদের আমিষ আমরাই তৈরি করব, আমাদের দেশের মানুষকে দেবো। আমাদের লক্ষ্য প্রথম হলো খাদ্য নিরাপত্তা দেওয়া। দ্বিতীয় হলো পুষ্টির নিশ্চয়তা দেওয়া। এখন আমরা সেই পদক্ষেপই হাতে নিয়েছি।'

খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতে আওয়ামী লীগের নানা উদ্যোগ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, '২০০১ সালে বিএনপি সরকার এসেই মনে হলো যেন যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছি, সেগুলোর ওপরেই যেন তাদের হামলা। অনেকের পোল্ট্রি ফার্মে বোমা মেরেছে। বোমা মেরে মুরগিই মেরে ফেলে দিয়েছে। খামার থেকে গরু নিয়ে কেটে খেয়ে ফেলেছে। পেঁপে গাছ থেকে শুরু করে ফলের গাছ—গাছগুলো কেটে ফেলে দিয়েছে। যেখানেই আমাদের আওয়ামী লীগের নেতারা ছিল, প্রত্যেককে তারা এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছে। তারা এটা হিসাব করেনি দেশের জন্য কত ক্ষতি হবে সে চিন্তা তাদের মাথায় ছিল না। তারা আমদানি করবে, ব্যবসা করবে ওই দিকে তাদের চিন্তা। আমাদের হচ্ছে, আমরা আমাদের নিজেদের পায়ে নিজেরা দাঁড়াব।'

সব ধরনের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির পরিসংখ্যান তুলে ধরে আওয়ামী লীগ বলেন, 'আমরা বিশাল সমুদ্রসীমা অর্জন করেছি। আজকে এই সমুদ্র সম্পদ আমাদের কাজে লাগানোর জন্য আমরা সুনীল অর্থনীতি ঘোষণা দিয়েছি। তবে দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, গভীর সমুদ্রের সম্পদ এখনো আমরা আহরণ করতে পারিনি। আসলে উদ্যোক্তাও পাওয়া যাচ্ছে না, এটা হলো বাস্তবতা। তবে মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে আমরা এখন কিন্তু স্বয়ংসম্পূর্ণ। এই উৎপাদন আমরা আরও বাড়াতে চাই। এত খাল, বিল, নদী, নালার দেশ আমরা, আমাদের দেশের মানুষের কেন আমিষের কষ্ট হবে!'

তিনি বলেন, 'অনেক হারিয়ে যাওয়া দেশি মাছ গবেষকরা গবেষণা করে করে সেগুলো কিন্তু আজকে উৎপাদন করছে। আমরা আমাদের অনেক প্রায় বিলুপ্ত মাছগুলো আবার ফিরে পাচ্ছি। গবেষণা ছাড়া কোনো দেশ এগিয়ে আনতে পারে না, এটাই হলো বড় কথা। তাছাড়া মুরগির ক্ষেত্রেও গবেষণা করে করে বিভিন্ন ধরনের পাখি এখন উৎপাদন হচ্ছে। শুধু ডিমই না, মাংসও এখন মানুষ খেতে পাচ্ছে।'

শেখ হাসিনা বলেন, 'আমাদের আগে যারা ক্ষমতায় ছিলেন, যেমন খালেদা জিয়া ঘোষণা দিলো যে, দেশের মানুষকে ডাল-ভাত খাওয়াবে। সেই ডাল-ভাত খাওয়াতেও কিন্তু ব্যর্থ হয়েছিল। এরপর ২০০৭ সালে আসলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ফখরুদ্দীন সাহেব প্রধান উপদেষ্টা, ইয়াজউদ্দিন রাষ্ট্রপতি, সেনাপ্রধান মঈন উদ্দিন। মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিন আবার ঘোষণা দিলেন আলু খাওয়ার জন্য। হাজার পদের আলুর নানা রকমের তালিকা তৈরি করা হলো এবং তার আবার প্রদর্শনী হলো। বেশ উন্নত হোটেলে। মানুষ ভাত পাচ্ছে না তাতে কী! আলু খাবে।

'কেউ আমাদের ডাল-ভাত খাওয়াতে চাইলো, কেউ আমাদের আলু খাওয়াতে চাইলো, মাছে-ভাতে বাঙালি আমরা; আমার মাছে-ভাতে বাঙালি, মাছ-ভাত পেলেই তো যথেষ্ট। সেটাই তো আমরা চাই। সেটাই তো আমাদের লক্ষ্য। কাজেই আমরা সেদিকে দৃষ্টি দিয়েছি। এখন অন্তত বলতে পারি, মাছ-ভাতের অভাবটা নাই, ডাল-ভাতেরও অভাব নাই। তবে মানুষের চাহিদা এখন মাংস। আরও বড় বড় মাছ, সব কিছু খাবে,' বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'এখন দেখি জিনিসের দাম নিয়ে চিন্তিত, পেঁয়াজের দাম বাড়ল কেন? আমাদের কিন্তু ৯০ ভাগ পেঁয়াজই আনতে হতো ভারত থেকে, সম্পূর্ণ নির্ভরশীল ছিলাম। ভোজ্য তেল ৯০ ভাগ আনতে হয় বিদেশ থেকে। কেন আনতে হবে? আমার নিজের দেশে আমরা তো উৎপাদন বাড়াতে পারি। তবে এবার সুখবর হলো, আমাদের গবেষণার মধ্য দিয়ে সর্ষের উন্নত জাত নিয়ে আসা হয়েছে। আজকে আমাদের সর্ষে উৎপাদন ভালো হচ্ছে। সর্ষের তেল হচ্ছে, যেটা হার্টের জন্য সব থেকে নিরাপদ। সেই সাথে সাথে আমাদের চালের তুষ থেকে যে তেলটা হয়, সেটা হচ্ছে। তিলের তেল, আমরা আরও বহুমুখী করতে পারি বা করার সে সুযোগ আরও আছে। আমরা এখন করেও যাচ্ছি।

'আর পেঁয়াজ নিয়ে যখন এত ঝামেলা, আমি বললাম, আমরা পেঁয়াজ উৎপাদন করতে পারব না কেন? জাতির পিতা তো বলেছেন, আমাদের সোনার মাটি। সোনার মাটিতে যা দেবো তাই ফসল হবে। এখন বোধ হয় প্রায় ৪০ ভাগ আমরা নিজেরাই উৎপাদন করতে পারি। এটার ওপর গবেষণাও চলছে। এর পরে কারও কাছে মুখাপেক্ষী হয়ে থাকব না, আমরা নিজেরাই উৎপাদন করব প্রতিটি জিনিস। সেইভাবে আমাদের কিন্তু চলতে হবে,' যোগ করেন তিনি।

Comments