বিএনপিতে বড় রদবদল, জ্যেষ্ঠ নেতারা ‘অন্ধকারে’

ছবি: সংগৃহীত

সরকারবিরোধী আন্দোলনে ব্যর্থ হওয়ার কারণে কয়েকটি মহানগরের কমিটি ভেঙে দেওয়ার একদিন পর গতকাল শনিবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটিতে বড় রদবদল করেছে বিএনপি।

দলের মোট ৩৯ নেতা নতুন পদ পেয়েছেন।

বিএনপির অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের না জানিয়েই কমিটি পুনর্গঠন করায় আকস্মিক এই রদবদল দলের মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে।

দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী সংস্থা স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়নি বলে জানান তারা।

দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন যাবতীয় দায়িত্ব পালন করবেন।

তারেক এখন সেই বিধানের দিকেই এগোচ্ছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

বিএনপির গঠনতন্ত্র চেয়ারপারসনকে যেকোনো সময় যেকোনো কমিটি বাতিল করার ক্ষমতা দেয় এবং সেই সিদ্ধান্ত পরবর্তী কাউন্সিলে অনুমোদিত হবে।

বিএনপির অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, রদবদলের ফলে তরুণ নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে আনা হয়েছে। একইসঙ্গে সাংগঠনিকভাবে দক্ষদের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা করা হয়েছে।

তবে উপদেষ্টার পদ পাওয়া কিছু নেতার ভাষ্য, শাস্তিস্বরূপ তাদের এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

কার্যনির্বাহী কমিটি ছাড়াও বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটিও পুনর্গঠন করা হয়েছে। দলীয় সূত্র জানায়, পূর্ববর্তী কমিটি পশ্চিমা দেশ চীন ও ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখতে ব্যর্থ হওয়ায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

ওইসব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান ওই কমিটির নেতৃত্ব দেবেন।

৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের পরপরই দলের কার্যনির্বাহী কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেন তারেক।

বিএনপির এক নেতা বলেন, নতুন সদস্য প্রবর্তনের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, তারেক রহমানের অনুগত তরুণ নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হবে।

বিএনপির মধ্যম সারির প্রভাবশালী কয়েকজন নেতা বলেছেন, তারেক আসলে দলের ওপর নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে কমিটি পুনর্গঠন করে নিজস্ব বলয় গড়ে তুলছেন।

'ভবিষ্যতে কেউ যাতে তার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ না করে, সেজন্য তিনি এটা করছেন', বলেছেন বিএনপির এক নেতা।

২০১৭ সালে দলটির সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিল হওয়ার পর থেকে ইতোমধ্যে অনেক কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।

বিএনপির গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে, প্রতি তিন বছর পরপর কাউন্সিল করতে হবে। তবে এবার কমিটি পুনর্গঠনের ঘোষণা দেওয়া হলো সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক জ্যেষ্ঠ নেতা গতকাল বলেন, 'কমিটি পুনর্গঠনের বিষয়টি পার্টি ফোরামে আলোচনা করা হয়েছিল। কিন্তু কখন-কীভাবে সেটা করা হবে, তা আমাদের জানানো হয়নি।'

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, দল পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত আগে হয়েছিল, এখন তা কার্যকর করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটির আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে দিয়েছে বিএনপি। এ ছাড়া চট্টগ্রাম ও বরিশাল সিটি ইউনিটের আহ্বায়ক কমিটিও বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোনায়েম মুন্নার নেতৃত্বাধীন যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটিও ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

জহির উদ্দিন স্বপন, মাহবুব উদ্দিন খোকন, মুজিবুর রহমান সরোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুসহ কয়েকজন নেতাকে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা করা হয়েছে।

দলের কয়েকজন নেতা জানান, এই পদে দায়িত্ব দেওয়ার মাধ্যমে স্বপন, খোকন, সারোয়ার ও আলালকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ও শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি সাংগঠনিক সম্পাদক থেকে যুগ্ম মহাসচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।

অন্যদিকে আংশিক কমিটি গঠনের প্রায় সাড়ে তিন মাস পর গতকাল ২৬০ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেছে ছাত্রদল।

নতুন কমিটিতে রকিবুল ইসলাম রাকিবকে সভাপতি ও নাসির উদ্দিন নাসিরকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে।

সহসভাপতি পদে ৪১ জন নেতা, একজনকে সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং ১১১ জনকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Blockade at Shahbagh demanding AL ban

The demonstration follows a sit-in that began around 10:00pm last night in front of the Chief Adviser's residence

3h ago