ভারতের সঙ্গে দেশবিরোধী চুক্তি আড়াল করতেই ছাগলকাণ্ড-বেনজীরকাণ্ড: রিজভী

তিনি বলেন, বাংলাদেশকে কারও আশ্রিত রাজ্য বানাতে দেবে না জনগণ।
দলের কেন্দ্রীয় কর্যালয়ে সংবাদ সম্মলনে বক্তব্য দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের সঙ্গে দেশবিরোধী চুক্তি আড়াল করতেই দেশে ছাগলকাণ্ড,  বেনজীরকাণ্ড, আজিজকাণ্ড সামনে আনা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

আজ শুক্রবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

রিজভী বলেন, 'ওবায়দুল কাদেরের কথা অনুযায়ী, আমাদের সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করে কেউ বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে কোনো স্থাপনা করার পর কেউ এর বিরোধিতা করলে সেটি ভুল পথ হবে। এ ধরনের কথা কেবল নতজানু, জনগণের ক্ষমতা ছিনতাইকারীদের মুখেই সাজে।'

'জনগণের সম্মতি ব্যতিরেকে চিকেন-নেক বাইপাস করে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারত রেলপথ নির্মাণ করবে এবং সেই রেলপথটি বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে আবার ভারতে যাবে, রেলপথের নামে এই করিডোর হবে, আর চুপ করে তা দেখা হলে সেটি একাত্তরের শহীদদের অসম্মান করার শামিল,' যোগ করেন তিনি। 

বিএনপির এই সিনিয়র নেতা আরও বলেন, 'বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে রেলপথ বসানোর চুক্তি করে শেখ হাসিনা ৩০ লাখ শহীদের সঙ্গে বেইমানি করছেন। বাংলাদেশের সীমান্ত রক্তভেজা। ভারত থেকে বয়ে আসা নদীগুলো মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। চরম বাণিজ্য ঘাটতির পটভূমিতে বাংলাদেশের বুক চিরে রেললাইন বসিয়ে ভারতের সামরিক ও বেসামরিক পণ্য পরিবহনের সুযোগে বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্যে শনির দশা ডেকে আনা হবে।'

'বাংলাদেশের জনগণের এনআইডির সকল তথ্য ভারতকে জানানো হয়েছে' মন্তব্য করে রিজভী বলেন, 'ভারত সবসময় বিগ ব্রাদার সুলভ গরিমা থেকে বাংলাদেশকে বিবেচনা করে। ৭ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে বৈধতা দিয়েছে ভারত। তাই কৃতজ্ঞতাস্বরূপ শেখ হাসিনা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিনিময়ে ভারতকে সবকিছু উজাড় করে দিতে কুণ্ঠিত হচ্ছেন না।' 

'জনগণ মনে করে দেশবিরোধী চুক্তি আড়াল করতেই ছাগলকাণ্ড, বেনজীরকাণ্ড, আজিজকাণ্ড, হেলিকপ্টারে আসামি গ্রেপ্তারকে সামনে আনা হচ্ছে। তবে জনগণ চূড়ান্ত বাধা টপকে বাংলাদেশকে কারও আশ্রিত রাজ্য বানাতে দেবে না,' যোগ করেন তিনি। 

রুহুল কবির রিজভী বলেন, 'দেশের দুর্নীতি মহামারি, লুণ্ঠন আর অনাচারের নানা রঙ-বেরঙের কাহিনী এখন মানুষের মুখে মুখে। আর এই সব অপকর্মে জড়িতরা প্রায় সবাই ক্ষমতাসীনদের ঘনিষ্ঠ। এসব ঘটনা ফাঁস হওয়াতে সরকারের মন্ত্রী ও এমপিরা বেসামাল হয়ে পড়েছে, ভারসাম্যহীন কথাবার্তা বলছেন। একদিকে বলছেন দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে প্রচার ষড়যন্ত্রের অংশ, আবার অন্যদিকে বলছেন অভিযোগ সত্য। এ কথার কী অর্থ হতে পারে তা আমার জানা নেই।'

'অভিযোগ সত্য হলে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে প্রচার ষড়যন্ত্রের অংশ হবে কেন? এরা বিভ্রান্তিতে ভুগছেন। কারণ এই দখলদার আওয়ামী সরকারের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারাই ছিল ডামি সরকারকে টিকিয়ে রাখার বিশ্বস্ত সৈনিক। অবৈধ একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে এসব কর্মকর্তাই ভোটারদের নতজানু রাখতে রীতিমতো ব্লাড-স্পোর্ট বা রক্ত খেলায় মেতেছিল। এরা জনগণকে নতজানু রাখতে যথেচ্ছাচার রাষ্ট্রশক্তিকে ব্যবহার করেছে। এরাই ডেলিবারেট কিলিং করেছে, নিয়ন্ত্রণহীন হত্যাকাণ্ডের জন্য নিজ বাহিনীর সদস্যদেরকে কেন সক্রিয় হচ্ছে না সেজন্য ভর্ৎসনা করেছে। গণতন্ত্রকামী মানুষের বিরুদ্ধে উগ্রতা এবং বন্দুকের ভয় দেখিয়ে নীরব রাখার চেষ্টা করেছে। সেজন্যই মন্ত্রী-এমপিরা তালগোল পাকিয়ে স্ব-বিরোধী বক্তব্য রাখছেন,' বলেন তিনি।

শনিবার বিএনপির সমাবেশ প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, 'দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে শনিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। দুপুর ২টা থেকে সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হবে। ইতোমধ্যে আমরা সমাবেশের জন্য চিঠি পুলিশ কমিশনারের দপ্তরে দিয়েছি। বিএনপির একটি প্রতিনিধি দলও পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। সমাবেশ সফল করার জন্য বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য জনাব মির্জা আব্বাসকে সমন্বয়ক করে পর্যায়ক্রমে নানা প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

'আগামীকাল একটি ঐতিহাসিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে' উল্লেখ করে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ঢাকাসহ দলের সব স্তরের নেতাকর্মীদেরকে যথাসময়ে সমাবেশে উপস্থিত থাকার আহ্বান জানান তিনি। 

Comments