সম্পদের ক্ষতি কিছুই না, প্রাণ অমূল্য: সোহেল তাজ

‘আমার প্রশ্ন এখন, একজন নাগরিক যদি রিকোয়েস্ট করে, তাহলে সেফ কাস্টডিতে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু অনুরোধের বাইরে যদি সেফ কাস্টডিতে নেওয়া হয়, তাহলে এটা কি সেফ কাস্টডি নাকি অ্যারেস্ট?’
সম্পদের ক্ষতি কিছুই না, প্রাণ অমূল্য: সোহেল তাজ
তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ | ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

তিনটি প্রশ্ন নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে গিয়েছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ।

ডিবি হেফাজতে থাকা কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কের সঙ্গে তিনি দেখা করতে চাইলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে দেখা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে তাকে।

আজ সোমবার সন্ধ্যায় ডিবি কার্যালয় থেকে বেরিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে সোহেল তাজ এ কথা জানান।

তিনি বলেন, 'কোটা সংস্কার আন্দোলন হয়েছে এবং এই কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে আমাদের দেশে একটি অশান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এখানে শত শত মানুষ নিহত হয়েছে। নিরীহ পাঁচ বছরের বাচ্চা থেকে শুরু করে ছাত্র, সাধারণ মানুষসহ অনেক মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। এটা আমাদের সবাইকে ক্ষত করেছে, আমাদের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। এই বিবেকের নাড়ার কারণেই আজকে আমি ব্যক্তিগতভাবে ডিবি (পুলিশের গোয়েন্দা শাখা) অফিসে এসেছি।'

তিনি বলেন, 'আমি ডিবি প্রধানের কাছে তিনটি প্রশ্ন নিয়ে এসেছিলাম। আমার প্রথম প্রশ্ন ছিল, এই সমন্বয়কারীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে নাকি সেফ কাস্টডিতে নেওয়া হয়েছে? দ্বিতীয় প্রশ্ন, যদি গ্রেপ্তার হয়ে থাকে, তাহলে আমার কোনো প্রশ্ন নেই, দাবি নেই। কিন্তু যদি সেফ কাস্টডি হয়ে থাকে, তাহলে আমি তাদের সঙ্গে দেখা করতে চাই। ডিবি প্রধান আমাকে পরবর্তীতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানিয়েছেন, এই ছয় সমন্বয়কারী যেহেতু তাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল, সেই কারণে তাদের সেফ কাস্টডিতে নেওয়া হয়েছে।

'এই কথা শুনে আমি প্রশ্ন করেছিলাম যে, আপনারা কীভাবে বুঝলেন তারা তাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন? তারা কি আপনাদের জানিয়েছিল, অনুরোধ করেছিল? আমাকে তখন তিনি জানিয়েছেন, না। উনারা বুঝতে পেরেছেন মনিটরিং (নজরদারি) করে। যেহেতু তারা সেফ কাস্টডিতে, আমি তাদের সঙ্গে দেখা করতে চাই। প্রত্যুত্তরে আমাকে জানানো হয়েছে যে, দেখা করতে চাইলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে দেখা করতে হবে,' বলেন তিনি।

সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'আমার তৃতীয় প্রশ্ন ছিল, তাদের কখন সেফ কাস্টডি থেকে মুক্তি দেওয়া হবে? জবাবে তিনি (হারুন) বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যখন তাকে নির্দেশনা দেবেন, তখনই তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে।'

তিনি বলেন, 'আমার প্রশ্ন এখন, একজন নাগরিক যদি রিকোয়েস্ট করে, তাহলে সেফ কাস্টডিতে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু অনুরোধের বাইরে যদি সেফ কাস্টডিতে নেওয়া হয়, তাহলে এটা কি সেফ কাস্টডি নাকি অ্যারেস্ট?'

তিনি আরও বলেন, 'এই কোটা সংস্কার আন্দোলনে যেসব ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেই ক্ষয়ক্ষতি কিছুই না। যে সম্পদ ধ্বংস হয়েছে, সেগুলো তো জনগণের ট্যাক্স দিয়েই করা হয়েছে। এগুলো জনগণের সম্পদ। এগুলো হয়তো ভবিষ্যতে আমরাই আবার গড়ে নেব। কিন্তু একটি প্রাণ যেটা আমরা হারিয়েছি, একটি প্রাণও কি আমরা ফেরত পাব? এই প্রাণ কি ফিরে আসবে? আমাদের মনে রাখতে হবে, মুখ্য জিনিসটা কী? প্রাণের মূল্য কিন্তু কোটি কোটি টাকার চেয়ে অনেক বেশি—অমূল্য।'

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সেনাবাহিনীর উদ্দেশে তিনি বলেন, 'আমাদের ছাত্র-ছাত্রী ভাই-বোনদের বুকে যাতে আর একটা গুলি না যায়। আপনারা বিরত থাকুন। এটা ঠিক না।'

সোহেল তাজ বলেন, 'আমার মনে হয়, এখানে একটা সমূহ সমাধান প্রয়োজন। সমাধানে প্রথম কাজ যেটা করতে হবে, প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুনির্দিষ্ট ও স্বতন্ত্রভাবে তদন্ত করে বিচার করতে হবে এবং এগুলোর জন্য যারা যারা দায়ী, তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে। বিচারবহির্ভূত কোনো হত্যাকাণ্ড করা যাবে না। এই সমাধান রাজনৈতিকভাবে করতে হবে। এই সমাধান সবাইকে নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে করতে হবে।'

এ সময় শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করা থেকে বিরত থাকতে আহ্বান জানান সোহেল তাজ।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'আমাদের ভবিষ্যৎ স্বপ্ন যেন বিনষ্ট না হয়। আমাদের বাংলাদেশ আমরা লাখ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জন করেছি। এই দেশটা তোমাদের। এই দেশটাকে তোমাদেরই গড়তে হবে। ডু নট লুজ হোপ। সামনে ভালো দিন আসবে কিন্তু এখন কষ্ট করতে হবে। আশা ছাড়া যাবে না। এই দেশটা তোমাদেরই সম্পদ, তোমাদেরই গড়তে হবে।'

Comments