১৬ বছর পর খুলনা মহানগর বিএনপির সম্মেলন আজ, সরাসরি ভোটে হবে নেতা নির্বাচন

খুলনা মহানগর বিএনপির সম্মেলন আজ। সার্কিট হাউস মাঠ থেকে সকাল ১০টার দিকে তোলা ছবি। ছবি: স্টার

প্রতিষ্ঠার ৪৭ বছর পর সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করতে যাচ্ছে খুলনা মহানগর বিএনপি। আজ সোমবার সকাল ১০টায় সার্কিট হাউস মাঠে দলের মহানগর শাখার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

বিকেলে জেলা স্টেডিয়ামের জিমনেশিয়ামে অনুষ্ঠিত ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক।

এবারের নির্বাচনে প্রধান তিনটি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১২ জন নেতা। নগরীর পাঁচ থানার ৫০৫ জন কাউন্সিলর তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। দীর্ঘদিন পর সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্ধারণের এই প্রক্রিয়া বিএনপির অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র চর্চায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে বলছেন নেতারা। বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে এ নির্বাচনকে ঘিরে উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

আহ্বায়ক কমিটি গঠনের তিন বছর পর হচ্ছে এ সম্মেলন । সম্মেলনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে প্রধান অতিথি ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে বিশেষ অতিথি করা হয়েছে

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি খুলনা মহানগর বিএনপির দ্বিবার্ষিক নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কমিশনার মাসুদ হোসেন রনি এ তফসিল ঘোষণা করেন।

দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এবং বিশেষ করে জুলাই অভ্যুত্থানের পর সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায়, খুলনা মহানগরে বিএনপির এই সম্মেলন বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, গত দেড় দশকে খুলনা মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছেন। আওয়ামী লীগের একচ্ছত্র দাপট ও দমন-পীড়নের কারণে অনেক বিএনপি নেতাকর্মী হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন। অনেকে ব্যবসা-বাণিজ্য হারিয়েছেন, কেউ কেউ রাজনৈতিক চাপে পড়ে রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছেন।

এছাড়া, দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলও খুলনা মহানগর বিএনপির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘদিনের দলীয় বিভক্তি এবং অভ্যন্তরীণ মতানৈক্যের কারণে অনেক নেতাকর্মী দোটানার মধ্যে রয়েছেন। এই বিভাজন দলের সাংগঠনিক শক্তিকে দুর্বল করেছে এবং মাঠপর্যায়ে কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে।

এমন বাস্তবতায়, এই সম্মেলন খুলনা মহানগর বিএনপির জন্য একটি মোড় ঘোরানো সুযোগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, খুলনা মহানগর বিএনপির সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০০৯ সালের ২৫ নভেম্বর। সম্মেলনে নজরুল ইসলামকে সভাপতি ও মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানকে সাধারণ সম্পাদক করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হয়। এরপর ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর গঠন করা হয় আহ্বায়ক কমিটি।

২০২২ সালের ১ মার্চ মহানগর বিএনপির ৭১ সদস্যের পুর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে কেন্দ্র। এতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শফিকুল আলম মনাকে আহ্বায়ক, সাবেক মহানগর ছাত্রদল ও যুবদলের সভাপতি শফিকুল আলম তুহিনকে সদস্য সচিব করা হয়।

তবে মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুসহ তার অনুসারীদের কেউ প্রার্থী হচ্ছেন না। কাউন্সিল ঘিরে তাদের তৎপরতা চোখে পড়েনি

এ বিষয়ে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সভাপতি পদে বর্তমান আহ্বায়ক এস এম শফিকুল আলম মনা, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম জহির ও দৌলতপুর থানা বিএনপির নেতা সাহাজী কামাল টিপু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য লড়ছেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন, যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মাহমুদ আলী এবং মহানগর যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হুদা চৌধুরী সাগর।

সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ছয়জন প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছেন—মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মাসুদ পারভেজ বাবু, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শেখ সাদী, মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মাহবুব হাসান পিয়ারু, যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শের আলম সান্টু, সাবেক ছাত্রদল নেতা হাসানুর রশিদ চৌধুরী মিরাজ ও তারিকুল ইসলাম তারেক। এদের মধ্যে তারেক ছাড়া বাকিরা সবাই বর্তমান কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক।

তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সভাপতি পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে শফিকুল আলম মনা ও তরিকুল ইসলাম জহিরের মধ্যে। শফিকুল আলম মনা দীর্ঘদিন দলীয় নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন।

শফিকুল আলম মনা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার উপরে যে দায়িত্ব ছিল তা যথাযথভাবে পালন করেছি। বিগত সরকারের সময়ে নানাভাবে নিজে নিপীড়নের শিকার হয়েছি। কিন্তু তারপরও দলীয় নেতাকর্মীদের কাছ থেকে দূরে সরে যাইনি। আমি আশা করি তারা আমার কাজের প্রতিদান দেবে।'

'আর এই সম্মেলন একটি মাইল ফলক হিসেবে ইতিহাসে লেখা থাকবে,' বলেন তিনি।

আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তরিকুল ইসলাম জহির মহানগর ছাত্রদল ও যুবদলের নেতৃত্বে ছিলেন এবং বর্তমানে মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

তরিকুল ইসলাম জহির ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বর্তমান আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজেদের পছন্দের লোকজনকে কাউন্সিলর হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছেন এবং এখনও পর্যন্ত তারা বিভিন্নভাবে প্রভাব বিস্তার করে চলেছেন। ব্যালটে ভোট হলেও তারা সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করবে।'

সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য শফিকুল আলম তুহিন ও নাজমুল হুদা সাগরের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তুহিন ছাত্রদল ও যুবদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং বর্তমানে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব। অন্যদিকে, সাগর ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, থানার নেতাদের তার প্রতিপক্ষের পক্ষে প্রচারে বাধ্য করা হচ্ছে।

দলটির নগর সদস্যসচিব শফিকুল আলম তুহিন বলেন, ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলন শেষে আমরা নগর সম্মেলনের জন্য প্রস্তুত ছিলাম। আমরা একটি সুন্দর সম্মেলন করতে চাই। ইতোমধ্যে সম্মেলন সফলে ২১টি উপকমিটি করা হয়েছে। দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা এসব কমিটি কাজ করে এখন সম্মেলন হচ্ছে।

বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল সম্মেলনের সার্বিক বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ন করছেন।

তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, আজ খুলনা সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত হবে স্মরণকালের অন্যতম বৃহৎ সম্মেলন। এতে প্রায় ১০ হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত থাকবেন। প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

'দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে এবং জুলাই বিপ্লবের পর সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এই সম্মেলন বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এই সম্মেলন একটি পথপ্রদর্শক ভূমিকা পালন করবে বলে আমি বিশ্বাস করি,' বলেন তিনি।

তরুণ নেতাকর্মীরা তুলনামূলকভাবে মাঠে সক্রিয় থাকায় তাদের আধিপত্য রয়েছে সর্বত্র। তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের আশা, এই সম্মেলনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক চর্চার ভিত আরও দৃঢ় হবে এবং দল নতুন নেতৃত্ব পাবে, যারা মাঠপর্যায়ের রাজনীতিকে আরও সক্রিয় করবে।

Comments

The Daily Star  | English

Kuet returns to normalcy after 65 days of unrest

Around 10:00am, only a few police officers were seen patrolling near the main gate

1h ago