আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে ফেরানোর যেকোনো প্রচেষ্টা এনসিপি প্রতিহত করবে: নাহিদ ইসলাম

বিচার, অনুশোচনা, পাপমোচন ছাড়া আওয়ামী লীগের পক্ষে যেকোনো তৎপরতা ফ্যাসিস্ট পুনর্বাসনের শামিল বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর রূপায়ন টাওয়ারে দলটির এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
লিখিত বক্তব্যে নাহিদ ইসলাম বলেন, 'আমরা অত্যন্ত উদ্বেগ ও ক্ষোভের সাথে লক্ষ্য করছি যে ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থানের সাত মাস অতিবাহিত হলেও গণহত্যাকারী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের খুনিদের বিচারে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনের প্রতিবেদনে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, জুলাই মাসে বাংলাদেশে সংঘটিত অপরাধ আন্তর্জাতিক অপরাধের শামিল।'
তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগের মানবতাবিরোধী অপরাধের এত সুস্পষ্ট আন্তর্জাতিক বক্তব্য থাকার পরেও বিচারিক প্রক্রিয়ার ধীরগতি অত্যন্ত নিন্দনীয়। জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপি অবিলম্বে জুলাই গণহত্যাসহ বিগত ফ্যাসিবাদী রেজিমে সংঘটিত গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিচারে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে চায়।'
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পরিকল্পনা অন্তর্বর্তী সরকারের নেই—প্রধান উপদেষ্টার এমন বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, 'আওয়ামী লীগ কর্তৃক সংগঠিত পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা হত্যাকাণ্ড, আগ্রাসনবিরোধী আন্দোলনে হত্যাকাণ্ড, গুম, ক্রসফায়ার, ভোট ডাকাতিসহ জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রশ্নে কার্যকর অগ্রগতি দৃশ্যমান হওয়ার আগে রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল পথ থেকে এ ধরনের বক্তব্য অনাকাঙ্ক্ষিত।'
'এনসিপি মনে করে বিচারিক কার্যক্রমের পরিণতি দৃশ্যমান হতে হবে। আত্মপ্রকাশের পর থেকে আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেছি অপরাধের বিচার, দায়স্বীকার, অনুশোচনা, পাপমোচন ছাড়া আওয়ামী লীগের দল হিসেবে ক্রিয়াশীল থাকার পক্ষে যেকোন ধরনের তৎপরতা ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসনের শামিল,' যোগ করেন তিনি।
নাহিদ আরও বলেন, 'এনসিপি জুলাই গণহত্যাসহ বিগত ফ্যাসিবাদী রেজিমে সংঘটিত অপরাপর গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের নিশ্চয়তা চায়। বিচার চলাকালে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে এবং এই মাফিয়া গোষ্ঠীর রাজনীতিতে ফেরানোর যেকোনো প্রচেষ্টাকে এনসিপি প্রতিহত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করছে।'
'আওয়ামী লীগ কোনো গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক দল নয়, বরং এটি একটি ফ্যাসিবাদী দল' এমন মন্তব্য করে নাহিদ বলেন, 'নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের পরাজয় ঘটেনি। দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বাংলাদেশে গণহত্যা চালিয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ফ্যাসিবাদী রেজিম বাংলাদেশ থেকে উৎখাত হয়েছে।'
তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগ এই মুহূর্তে গণতান্ত্রিক ফ্রেমওয়ার্কের বাইরে অবস্থান করছে। বিচার অনিষ্পন্ন রেখে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেওয়ার যেকোনো ধরনের আলোচনা ও প্রস্তাব এনসিপি দৃঢ়তার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করে। আওয়ামী মতাদর্শ দল এবং মার্কার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণ ৩৬শে জুলাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে। ফলে দল ও মতাদর্শ হিসেবে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে রাজনীতি করার সকল অধিকার হারিয়েছে।'
'গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আওয়ামী লীগের বিচার চলাকালে আওয়ামী লীগ এবং ফ্যাসিবাদের সহযোগী সব ব্যক্তি ও সংগঠনের রাজনৈতিক কার্যক্রমকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে,' বলেন তিনি।
নাহিদ আরও বলেন, 'জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপি রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে ঘোষিত জুলাই সনদের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ব্যাপারে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দল ও পক্ষকে ঐক্যবদ্ধভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানায়।'
এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ বলেন, 'এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কনসার্নের জায়গা আওয়ামী লীগ। ফলে আওয়ামী লীগের বিচার হওয়া এবং নিবন্ধন বাতিলসহ তাদের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার বিষয়ে সরকার ও ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক পক্ষগুলোকে আমরা একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।'
'দ্বিতীয়ত আমরা মনে করি যে, নির্বাচন বা একটি রাজনৈতিক দল কার্যক্রম করতে পারবে কি পারবে না, এটি সম্পূর্ণই একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এবং এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার শুধু বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোর ও জনগণের। সেখানে সেনাবাহিনী কিংবা রাষ্ট্রীয় এমন কোনো প্রতিষ্ঠানের এ বিষয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য, পরিকল্পনা বা সিদ্ধান্ত, প্রস্তাবনা দেওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই,' যোগ করেন তিনি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, 'অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা টাইমফ্রেম দিয়েছেন ডিসেম্বর। ডিসেম্বরকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে এবং ডিসেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত একটা টাইমফ্রেম আমাদের বেঁধে দিয়েছেন। আমরা সেটাকে সমর্থন করছি। কিন্তু আমরা বলছি এই সময়ের মধ্যেই বিচার ও সংস্কারসহ যে আমরা গণপরিষদের দাবি জানিয়েছি, সেটা এই সময়ের মধ্যেই করা সম্ভব। ফলে নির্বাচনে যাওয়ার আগে যেন আমরা এই বিষয়গুলো সম্পন্ন করে নির্বাচনের দিকে যাই, আমরা মনে করি যদি রাজনৈতিক ঐকমত্য ও সদিচ্ছা থাকে, তাহলে এই সময়ের মধ্যেই এই ধাপগুলো সম্পন্ন সম্ভব। এই ধাপগুলো সম্পন্ন ছাড়া নির্বাচনের দিকে গেলে বাংলাদেশের আসলে কোনো গুণগত পরিবর্তন হবে না।'
Comments