অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা শুরু হয়েছে: মির্জা ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার একটা পাঁয়তারা শুরু হয়েছে।
থাইল্যান্ডের ব্যাংককে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ মঙ্গলবার দুপুরে দলের এক যৌথ সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ আশঙ্কার কথা বলেন তিনি।
'দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে কালো ছায়া'র আশঙ্কা প্রকাশ করে নেতাকর্মীদের যেকোনো ষড়যন্ত্র রুখে দিতে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, 'আজকের এই সভাটি অত্যন্ত মূল্যবান ও তাৎপর্যপূর্ণ বলে আমি মনে করি। এটা এজন্য যে, হাজারো ছাত্রের রক্তের বিনিময়ে যে নতুন একটা সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করার, ফ্যাসিবাদমুক্ত একটা আধুনিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করার, সেখানে আমরা দেখছি একটা কালো ছায়া এসে দাঁড়াচ্ছে।'
'অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া, জনগণকে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার একটা পাঁয়তারা শুরু হয়েছে,' বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, 'আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন বিভাজনের রাজনীতি আবার শুরু হয়েছে। এখানে গোত্রে গোত্রে বিভাজন সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন ইনস্টিটিউশনগুলোকে পরস্পরের মুখোমুখি করার একটা ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত শুরু করা হয়েছে।'
'আমরা দেখতে পারছি কিছু মানুষ সরকারের মধ্যে অনুপ্রেবশ ঘটিয়ে বাংলাদেশকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে,' যোগ করেন তিনি।
গত ১৩ মে চোখে জটিলতা দেখা দিলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ব্যাংকক যান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার বাম চোখে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।
গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে যেকোনো ষড়যন্ত্র রুখে দিতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, 'বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ওপরে সবসময় গুরুদায়িত্ব এসে পড়ে। সেই দায়িত্ব হচ্ছে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করার দায়িত্ব, সেই দায়িত্ব হচ্ছে বাংলাদেশকে আবার নতুন করে গড়ে তোলার, সেই দায়িত্ব শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যে স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার কাজ করতে শুরু করেছিলেন, এখন যে তরুণ নেতা নতুন স্বপ্নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে গড়ে তোলার নেতৃত্ব দিচ্ছেন আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।'
'তাদের সব স্বপ্নগুলোকে বাংলাদেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষাগুলোকে বাস্তবায়িত করার জন্য বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মীকে অত্যন্ত সজাগ ও সচেতনভাবে তাদের কাজ করতে হবে এবং রুখে দাঁড়াতে হবে যেকোনো ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের বিরুদ্ধে,' বলেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'আমি অনুরোধ করব আমাদের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের, যে যেখানে আছেন অত্যন্ত সচেতনভাবে আমরা যেন এই বিষয়গুলো মনে রাখি। একইসঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যেন কেউ কখনো কেড়ে নিতে না পারে, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব যেন কেউ কখনো বিনষ্ট করতে না পারে, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে আর কেউ যেন কখনো ফ্যাসিবাদ, স্বৈরাচার দিয়ে দাবিয়ে রাখতে না পারে, সেজন্য বিএনপির প্রতিটি কর্মীকে সেই অতন্দ্র ভূমিকা পালন করতে হবে।'
মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে এই যৌথ সভায় জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে ২৬ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত আট দিনের কর্মসূচি নির্ধারণ হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, 'বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধ ও আধুনিক করার যে কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছিল, সেই কর্মযজ্ঞের সূচনা করেছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। দুর্ভাগ্য আমাদের এই জাতির আমরা এই ক্ষনজন্মা মহাপুরুষকে বেশিদিন ধরে রাখতে পারিনি।'
তিনি আরও বলেন, 'আজ যারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে, যারা বাংলাদেশকে ১৫ বছর ধরে একটা ফ্যাসিস্ট শাসনের মধ্যে রেখেছিল, যারা আজকেও এখনো ষড়যন্ত্র করে চলেছে সীমান্তের ওপার থেকে বাংলাদেশকে আবারও জনগণকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করবার জন্যে, বাংলাদেশের উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করবার জন্যে এরকম সময়ে আমাদের শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নাম বারবার মনে রাখতে হবে।'
মির্জা ফখরুল বলেন, 'বিএনপির নেতাকর্মীরা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে, ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে, কয়েক হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল, প্রায় ১৭০০ নেতাকর্মীকে এনফোর্স ডিজঅ্যাপিয়ারেন্সের মধ্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেই অবস্থা থেকে আজ একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে যে, আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ নির্মাণ করব।'
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, শহীদউদ্দিন চৌধুরী, আবদুস সালাম আজাদ, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
Comments