বৈষম্যবিরোধী নেতাকে জখম: ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা, এনসিপির কমিটি স্থগিত

মাদারীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিবকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে জখম করার অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে।
এজাহারে নয়জনকে আসামি করা হয়েছে। তারা জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মী। এছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ১০ থেকে ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আকাশ মাতুব্বর বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
কর্মীসভায় সংঘর্ষের পর এনসিপি কেন্দ্র থেকে জেলা ও সদর উপজেলা সমন্বয় কমিটি স্থগিত করা হয়েছে।
বুধবার বিকেলে শহরের ভূঁইয়া কমিউনিটি সেন্টারে এনসিপি সদর উপজেলা কমিটির কর্মীসভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মাদারীপুর জেলা কমিটির সদস্যসচিব মাসুম বিল্লাহ (২৩) হামলার শিকার হন।
সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি এনসিপির মাদারীপুর জেলা ও সদর উপজেলা কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্র। সদর উপজেলার নেতাকর্মীরা উদ্যোগ নিয়ে কর্মীসভার আয়োজন করেছিলেন। সেখানেই সংঘর্ষ হয়।
সভা চলাকালে হাসিবুল্লাহ ও তার কয়েকজন অনুসারীকে নিয়ে হাজির হয়ে কমিটি পুনর্গঠনের দাবি জানান। তার অভিযোগ, প্রকৃত আন্দোলনকারী সদর উপজেলা এনসিপিতে জায়গা পাননি।
সে সময় মাসুম বিল্লাহ প্রতিবাদ করেন এবং বলেন, এখন যারা কমিটিতে স্থান পেতে চাচ্ছে, তারা আওয়ামী লীগের দোসর। এরপরই দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।
মাসুমকে হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়। এছাড়া, উভয়পক্ষের আরও কয়েকজন আহত হন। মাসুমকে প্রথমে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। তার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, জানিয়েছে সূত্র।
মামলায় এনসিপি জেলা কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী মো. হাসিবুল্লাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।
অন্য আসামিরা হলেন—এনসিপি জেলা কমিটির সদস্য মো. আবদুল রহিম, আবদুল্লাহ আদিল (টুটুল), রাতুল হাওলাদার ও মুজিবুল্লাহ সরদার এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রোমান শেখ, ইসমাইল, আরাফাত হোসেন ও মেহেদী হাসান।
তবে, আসামিদের নামের তালিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আসামিপক্ষ দাবি করেছে, সাতজন ওই কর্মীসভায় উপস্থিত ছিলেন না।
আকাশ মাতুব্বর মোবাইল ফোনে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখানে জেলা এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কিছু নেতাকর্মী তাদের দল ভারী করার জন্য আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাকর্মী ও তাদের সন্তানদের এনসিপিতে জায়গা দিতে চাচ্ছে। যেটি আমরা কখনো হতে দেবো না।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা এই হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানাই। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা এনসিপিতে ঢুকে পড়েছে। মাসুমের ওপর হামলা হয়েছে পরিকল্পিতভাবে। আমরা এর বিচার চাই।'
হাসিবুল্লাহর মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
তবে তিনি প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, 'আমি সভায় ছিলাম না, তবু আমাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন—এমন তিনজনকেও আসামি করা হয়েছে। এটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র।'
মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আদিল হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখন পর্যন্ত আসামিদের গ্রেপ্তার করা যায়নি, অভিযান চলছে। আশা করি, শিগগির তাদের গ্রেপ্তার করতে পারবো।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা ধারণা করছি হয়তো তাদের অভ্যন্তরীণ কোনো বিষয় নিয়ে এই ঘটনা ঘটতে পারে। আমাদের তদন্ত চলছে।'
Comments