ব্যবসায়ীদের চাঁদাবাজদের কবল থেকে রক্ষা করব: নাহিদ ইসলাম

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, 'গণঅভ্যুত্থান অসমাপ্ত রয়ে গেছে, আমরা বলেছি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের কোনো শেষ ছিল না, কোনো সমাপ্তি ছিল না, জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল নতুন বাংলাদেশের শুরু।'
তিনি আরও বলেন, 'ছাত্র-তরুণদের-শ্রমিকদের আন্দোলনের শুরু, সেই আন্দোলন আমাদেরকে চলমান রাখতে হবে।'
আজ শুক্রবার রাতে খুলনার শিববাড়ী মোড়ে পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
নাহিদ বলেন, 'গণঅভ্যুত্থানের পরে আমরা বলেছিলাম, এই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা; যে ব্যবস্থা মাফিয়া তৈরি করে, যে ব্যবস্থা দুর্নীতিবাজদের প্রশ্রয় দেয়, সন্ত্রাসীদের তৈরি করে, জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, পুলিশ বাহিনীকে খুনি বাহিনীতে রূপান্তর করে—সেই ব্যবস্থার বিলোপ ঘটাতে হবে।'
'সেই ব্যবস্থার পতন ঘটিয়ে নতুন গনতান্ত্রিক ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। কিন্তু নানাভাবে ৫ আগস্ট থেকেই ষড়যন্ত্র হয়েছে এই ছাত্র নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। আমরা দেখেছিলাম, ৫ আগস্ট কারা ক্যান্টনমেন্ট গিয়েছিল, অভ্যুত্থানের নেতাদের বাদ দিয়ে সরকার গঠনের পরিকল্পনা করেছিল। এই ছাত্রনেতৃত্ব অনেক চেষ্টা করেছে, এই সরকারকে, এই সময়ের রাজনীতিকে গণঅভ্যুত্থানের দিকে আনতে। নানা পক্ষ, যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আমাদের সঙ্গে থাকলেও নতুন বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আমাদের সঙ্গে নেই। তারা পুরোনো বন্দোবস্তের পক্ষে আছে, পুরোনো বন্দোবস্ত টিকিয়ে রাখার জন্য সব কিছু করে যাচ্ছে,' বলেন তিনি।
নাহিদ বলেন, 'আমরা ঢাকায় দেখলাম...চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আমরা কথা বলে যাচ্ছি। জনগণকে আজ বলতে হচ্ছে, অভ্যুত্থানকারী ছাত্র নাগরিকদের আজ বলতে হচ্ছে, আপনাদের আবারও প্রস্তুতি নিতে হবে, আবারও মাঠে নামতে হবে, বাংলাদেশের জনগণকে রক্ষা করতে হবে। শহীদরা এই দায়িত্ব আমাদের দিয়ে গেছে।'
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, 'বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের বলবো, আগের আমলে আমরা দেখেছি গুটি কয়েক ব্যবসায়ী মাফিয়ায় পরিণত হয়েছিল। সেই মাফিয়াদেরকে এখন আবার একটি রাজনৈতিক দল সমর্থন দিচ্ছে, প্রশ্রয় দিচ্ছে। আর অন্যদিকে আমাদের ক্ষুদ্র-মাঝারি, খেটে খাওয়া ব্যবসায়ীরা চাঁদাবাজদের অত্যাচারে বেহাল অবস্থায় রয়েছে। সব দেশপ্রেমিক ব্যবসায়ীদের আমরা রক্ষা করব। বাংলাদেশের ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিকে আমরা চাঁদাবাজদের কবল থেকে রক্ষা করব।'
নাহিদ বলেন, 'যুগ যুগ ধরে খুলনা শিল্পনগরী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল। সেই শিল্পগুলো একের পর এক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অবশ্যই আবার সেই শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে চালু করতে হবে, আবারও পাটকল চালু করতে হবে, শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি দিতে হবে।'
'আমরা জানি, শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা পৃথিবীর অনন্য নিদর্শন সুন্দরবন। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র করে সুন্দরবনকে ধ্বংসের পাঁয়তারা করা হয়েছিল। ভারতের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। বিভিন্ন দুর্যোগে সুন্দরবন ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে, এই সুন্দরবনকে আমাদের রক্ষা করতে হবে।'
এনসিপি আহ্বায়ক বলেন, 'নতুন বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠায়, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় জাতীয় নাগরিক পার্টি, গনঅভ্যুত্থানের সকল ছাত্র-তরুণ এখনো মাঠে রয়েছে। আপনারা যতই চেষ্টা করুন, যতই ষড়যন্ত্র করুন, আমাদেরকে মাঠ থেকে সরাতে পারবেন না, জনগণের পক্ষে আমরা মাঠে থাকব।'
তিনি বলেন, 'শহীদ পরিবারদের পাশে দাঁড়িয়ে আছি। আহত যোদ্ধাদের পাশে দাঁড়িয়ে আছি। এই শহীদ পরিবাররা নতুন বাংলাদেশে কোনো চাঁদাবাজের সংস্কৃতি দেখতে চায়নি। এই শহীদরা সন্ত্রাসীদের জন্য, চাঁদাবাজির অভয়ারণ্যের জন্য জীবন দেয়নি। আমরা বলেছিলাম, আমরা নতুন স্বাধীনতা পেয়েছি। আমরা দ্বিতীয় স্বাধীনতা পেয়েছি। আর তারা ভেবেছিল তারা লুটপাটের স্বাধীনতা পেয়েছে। যদি ভেবে থাকে লুটপাটের স্বাধীনতা পেয়েছে, খুবই ভুল ভাবছে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জনগণ যেভাবে রাজপথে নেমেছিল, চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে একইভাবে রাজপথে নামতে হবে, আপনারা প্রস্তুত হন। আমরা ঢাকা আসছি। ৩ আগস্ট এসব কিছুর জবাব দেওয়া হবে।'
Comments