জুলাই ঘোষণাপত্রে ছাড় দিয়েছি, জুলাই সনদে একবিন্দুও ছাড় দেবো না: নাহিদ ইসলাম

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, জুলাই ঘোষণাপত্রে আমরা ছাড় দিয়েছি, জুলাই সনদে একবিন্দুও ছাড় দেওয়া হবে না।
আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে এনসিপির যুব উইং জাতীয় যুবশক্তি আয়োজিত সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
নাহিদ বলেন, 'জাতীয় নাগরিক পার্টি যেমন গণঅভ্যুত্থানে রাজপথ থেকে গড়ে ওঠা দল, একইভাবে জাতীয় যুবশক্তিও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রাজপথ থেকে গড়ে ওঠা একটি সংগঠন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে জাতীয় যুবশক্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।'
'এটা আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পার হয়েছে। ফলে অনেক ধরনের হিসাব-নিকাশ আমরা করছি। গণঅভ্যুত্থানের এক বছরে আমরা কী পেলাম, তরুণরা কী পেল, দেশ কতটুকু পরিবর্তন হলো, সে হিসাব-নিকাশ না করলে আমরা বুঝব না আমাদের আগামীর দায়িত্ব কী,' বলেন তিনি।
এনসিপি আহ্বায়ক বলেন, 'নতুন বন্দোবস্তের নতুন বাংলাদেশে আমরা পাইনি। এজন্য আমাদের জুলাই গণঅভ্যুত্থান সমাপ্ত হয়নি। তরুণদের এই লড়াই এই দায়িত্ব সমাপ্ত হয়নি। আমরা দেখেছি ৭১ পরবর্তী বাংলাদেশে কীভাবে লুটপাট হয়েছে, কীভাবে রক্ষীবাহিনী তৈরি করে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। ৯০ এর গণঅভ্যুত্থানের পরেও যেই প্রতিশ্রুতি জনগণকে দেওয়া হয়েছিল সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা হয়নি।'
'২৪ এর গণঅভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করে দিতে গণঅভ্যুত্থানের প্রজন্মকে প্রতাারিত করতে সব ধরনের আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু আমরা বলতে চাই সমীকরণ এখনই শেষ হয়ে যায়নি। ফলে যারা এখনই সমীকরণ মিলিয়ে ফেলছে, তারা ভুল পথে হাঁটছে। গণঅভ্যুত্থানের শক্তি তারুণ্যের শক্তি এখনো রাজপথে আছে,' বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, 'গত এক বছর ছাড় দিয়েছি, জুলাই ঘোষণাপত্রে ছাড় দিয়েছি। জুলাই সনদে কোনো ছাড় হবে না, এক পারসেন্ট ছাড়ও জুলাই সনদে দেওয়া হবে না। যে মৌলিক সংস্কারের রূপরেখা জনগণের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, যে নতুন বন্দোবস্তের কথা আমরা বলেছি—যেখানে গণতন্ত্র নিশ্চিত হবে, স্বৈরাচার আর ফিরে আসতে পারবে না, রাষ্ট্র কাঠামোকে গণতান্ত্রিক হিসেবে গড়ে তুলব—সেই জুলাই সনদে আমরা এক বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেবো না।'
'আমরা নির্বাচন চাই। নির্বাচন-গণতন্ত্র-ভোটাধিকারের জন্যই আমাদের লড়াই। কিন্তু আমরা এর সাথে এটাও বলেছি যে, পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে যেতে হবে। বাংলাদেশের এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে স্থিতিশীলতা এবং জাতীয় ঐক্য ধরে রাখা। দেশের স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে নিজেদের মধ্যে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা তৈরি না হলে আরেকটি এক-এগারো আসবে। কারণ আমরা ইতিহাসে এটাই দেখেছি,' যোগ করেন তিনি।
নাহিদ বলেন, 'আমরা মনে করি রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান রাজনৈতিক দলগুলোকেই করতে হবে এবং সেই সংস্কৃতি বাংলাদেশে কায়েম করতে হবে। যদি রাজনৈতিক দলগুলো ব্যর্থ হয়, তাহলে লাভবান হবে ডিজিএফআই, লাভবান হবে অরাজনৈতিক শক্তি, লাভবান হবে বিভিন্ন বৈদেশিক শক্তি।'
তিনি বলেন, 'গণঅভ্যুত্থানের শক্তি জাতীয় নাগরিক পার্টি বারবার ছাড় দিয়ে গেছে। কিন্তু ছাড় দিতে দিতে আমরা শেষ প্রান্তে এসেছি। আমরা এবার ছাড় দেবো না। অন্তর্বর্তী সরকার যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে শহীদের রক্তের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেই প্রতিশ্রুতি আদায় না করে এই সরকার যেতে পারবে না। সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসতে পারবে না।'
'আমরা মানুষের স্বপ্নভঙ্গ হতে দেবো না, জুলাইয়ের প্রজন্মকে আমরা প্রতাারিত হতে দেবো না। আমাদের নিয়ে যতই মিডিয়া ট্রায়াল করা হোক, যতই ষড়যন্ত্র করা হোক না কেন, গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষায় তরুণ প্রজন্মকে ক্ষমতায়িত করতে আমরা রাজপথে লড়াই করে যাব। এর মানে এই না যে এনসিপিকে ক্ষমতায় আনতে হবে। রাজনৈতিক দলের তরুণরা রাজপথে নেমেছিল, ছাত্র-যুব সংগঠন লড়াই করেছিল। প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের নীতি নির্ধারনী পর্যায়ে তরুণদের নিয়ে আসতে হবে, গণঅভ্যুত্থানে ভূমিকার জন্য তরুণদেন সম্মান দিতে হবে। আমাদেরকে সম্মান না দেন, আপনার দলের তরুণদের সম্মান দেন। আমরা আগামী সংসদে তরুণদের সর্বাধিক অংশগ্রহণ দেখতে চাই। সব রাজনৈতিক দলকে এটা কমিট করতে হবে,' বলেন তিনি।
নাহিদ বলেন, 'আমরা বিশ্বাস করি তারুণ্যের প্রথম ভোট তারুণ্যের পক্ষে হবে। আমাদের জুলাই পদযাত্রা এখনো শেষ হয়নি। আমরা দ্রুতই আবার মাঠে নামছি, দ্রুতই আবার জনগণের কাছে আসছি। জুলাই সনদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেই আগামীর নির্বাচনে আমরা অংশগ্রহণ করব।'
Comments