জাতীয় পার্টিতে আবার ভাঙন

‘লাঙল’ নিয়ে টানাটানি

২৬ লাখ ভোটারের গাজীপুরে জাপা পেলো ৪৩৮৪ ভোট
জাতীয় পার্টি | সংগৃহীত

নতুন করে আবারও ভাঙন ধরেছে জাতীয় পার্টিতে। একদিকে জিএম কাদের, অন্যদিকে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। আদালতের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর জিএম কাদেরের পক্ষ এবং দলের কাউন্সিলের পর আনিসুল ইসলাম মাহমুদের পক্ষের মধ্যে জাতীয় পার্টির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শুরু হয়েছে বিরোধ।

দুটি পক্ষই জাতীয় পার্টির ও 'লাঙল' প্রতীকের দাবিদার। এই দাবি নিয়ে তারা নির্বাচন কমিশনের শরণাপন্নও হয়েছে।

কাউন্সিল করে নতুন কমিটি গঠনের পর আনিসুলের পক্ষ দলীয় গঠনতন্ত্র সংশোধন করে নিবন্ধন ও প্রতীকসহ নির্বাচন কমিশনের স্বীকৃতি চেয়েছে। বিপরীতে, জিএম কাদের কমিশনকে জানিয়েছেন, ওই কাউন্সিল ও কমিটি উভয়ই বেআইনি।

সূত্র অনুযায়ী, আনিসুলের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় পার্টির ১০ম কাউন্সিলের পর নবনির্বাচিত নেতৃত্বের বিস্তারিত তথ্যসহ একটি চিঠি নির্বাচন কমিশন সচিবের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, চেয়ারম্যানকে সর্বময় ক্ষমতা দেওয়া দলীয় গঠনতন্ত্রের বিতর্কিত ২০/১/ক ধারা বাতিল করা হয়েছে।

সংশোধিত গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কোনো কেন্দ্রীয় নেতাকে বহিষ্কার বা অব্যাহতি দেওয়া কিংবা জেলা কমিটি বিলুপ্ত করার আগে প্রেসিডিয়ামের অনুমোদন নিতে হবে। এমনকি চেয়ারম্যান নিজে ব্যবস্থা নিলেও প্রেসিডিয়াম বৈঠকে সেটা অনুমোদিত হতে হবে।

গত ১০ আগস্ট কাউন্সিলের পরদিন নতুন কমিটির শীর্ষ চার নেতার তালিকা নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হয়। নিজেদেরকে দলের মূলধারা দাবি করে আনিসুলের পক্ষ জানায়, শুধু তাদের কমিটিই 'লাঙল' প্রতীক ব্যবহারের আইনগত অধিকার রাখে।

তারা আরও জানায়, জিএম কাদেরকে দলীয় কার্যালয় ও তহবিল হস্তান্তরের জন্য এবং নিবন্ধন নম্বর ১২ ব্যবহার না করার জন্য আইনি নোটিশ পাঠানো হবে।

অন্যদিকে জিএম কাদেরের পক্ষ দলীয় গঠনতন্ত্রের কিছু ধারা উল্লেখ করে কমিশনে চিঠি দিয়েছে। তাদের যুক্তি, আনিসুল পক্ষ যে কাউন্সিল করেছে, সেটা বেআইনি।

তাদের দাবি, যারা এই কাউন্সিল ডেকেছিল, তারা ইতোমধ্যেই দল থেকে বহিষ্কৃত এবং কেবল চেয়ারম্যানই কাউন্সিল আহ্বান করার ক্ষমতা রাখেন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাছির উদ্দিনের সঙ্গে নির্বাচন ভবনে সাক্ষাৎ শেষে জাতীয় পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারীর নেতৃত্বে জিএম কাদেরপন্থীরা গত বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকে বলেন, জিএম কাদের ছাড়া আর কেউ 'লাঙল' প্রতীক ব্যবহার করতে বা চেয়ারম্যান দাবি করতে পারেন না।

তিনি বলেন, দলীয় গঠনতন্ত্রের ২০(খ) ধারায় কেবল চেয়ারম্যানই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিয়োগ দিতে পারেন। 'কোনো বিকল্প ধারা নেই। অন্য কেউ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিয়োগ দিলে তা সম্পূর্ণ বেআইনি। তাছাড়া যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তারা আগেই বহিষ্কৃত।'

তিনি উল্লেখ করেন, প্রেসিডিয়াম বা কাউন্সিলের বৈঠকের সময় ও স্থান চেয়ারম্যানের সম্মতিতে নির্ধারিত হতে হবে এবং তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হতে হবে। ফলে 'প্রতিদ্বন্দ্বী' কাউন্সিল অবৈধ।

তিনি অভিযোগ করেন, কাউন্সিলে কোনো ইসি প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। বহিষ্কৃত সদস্যরা কীভাবে দলীয় পদ ফিরে না পেয়েই কাউন্সিল আয়োজন করলেন বা কাউন্সিলে অংশগ্রহণ করলেন, সেটাই প্রশ্নবিদ্ধ।

গত ৯ আগস্ট আনিসুলপন্থীরা গুলশানে জাপার ১০ম কাউন্সিল আয়োজন করে। এতে আনিসুল চেয়ারম্যান, মুজিবুল হক নির্বাহী চেয়ারম্যান, কাজী ফিরোজ রশিদ সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান এবং রুহুল আমিন হাওলাদার মহাসচিব নির্বাচিত হন। এর আগে জিএম কাদের তাদের জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কার করেছিলেন।

এর প্রতিক্রিয়ায় আনিসুলসহ ১০ নেতা জিএম কাদের ও যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলমের বিরুদ্ধে ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলা করেন। আদালত ১২ আগস্ট পর্যন্ত উভয়পক্ষের সাংগঠনিক কার্যক্রমে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেন।

নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই আনিসুলপন্থীরা কাউন্সিল আয়োজন করে এবং কমিটি গঠন করে। ১১ আগস্ট আদালত মামলাটি ষষ্ঠ যুগ্ম জেলা জজ আদালতে স্থানান্তর করেন। পরদিন বিচারক মামলাটি প্রত্যাহারের অনুমতি দেন। ফলে, জিএম কাদেরের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়।

কেন মামলা প্রত্যাহার করা হলো জানতে চাইলে মুজিবুল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তিনি (জিএম কাদের) আর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান নন। আমরা কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করেছি। তাহলে আর মামলা কেন থাকবে? মামলা থাকলে তো বোঝায় যে তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে স্বীকৃত।'

Comments

The Daily Star  | English
bangladesh to clear rooppur dues

Govt moves to clear Rooppur dues to Russia after US waiver

Central bank seeks nod from Washington after Russia's reply

10h ago