মোৎজার্ট সম্পর্কে প্রচলিত ৭ মিথের ব্যাখ্যা

মোৎজার্ট সম্পর্কে প্রচলিত ৭ মিথের ব্যাখ্যা
ছবি: সংগৃহীত

ভফগাং অ্যামাদেউস মোৎজার্ট; যার হৃদয় থেকে বয়ে আসা সুরের জোয়ারে ভেসে গেছে সংগীতপ্রিয় অনেকে। আয়ুর খেলায় জিততে পেরেছেন ৩৫ বছর (১৭৫৬-১৭৯১), কিন্তু ভালোবাসায় অমর হয়ে আছেন। 

জীবদ্দশায় ৬ শত বা তারচেয়ে বেশি কাজ করেছেন। তবে শুধু কাজে নয়, জীবন নিয়ে নানাবিধ অতিকথা দিয়ে তিনি আজও ভ্রমণ করছেন চিন্তাজগত। 

আজকের লেখায় অনেকের জন্য থাকছে মোৎজার্ট সম্পর্কে ৭ অজানা তথ্য- 

আর্থিক অবস্থা ও সমাধি

মোৎজার্টের আর্থিক অবস্থা নিয়ে নানাবিধ অতিকথা আজও শোনা যায়। যেমন, তার টাকাকড়ি না থাকায় মৃত্যুর পর গণকবরে সমাধিস্থ হওয়া, কিংবা আর্থিক দৈন্যদশায় মন থেকে ভেঙে পড়া, ইত্যাদি। তবে আদতে ইতিহাস খুঁড়লে দেখা যায়, সে সময় ভিয়েনায় গণকবরে সমাধির বিষয়টি একটি সাধারণ চর্চা ছিল। এর পেছনে ব্যক্তির অর্থনৈতিক অবস্থা নয় বরং অস্ট্রিয়ার তখনকার অর্থনৈতিক অবস্থাই দায়ী ছিল। তা ছাড়া এই মায়েস্ত্রো তার কাজ থেকে কমিশনের পাশাপাশি সংগীত বিষয়ে শিক্ষকতা করেও ভালো অর্থ পেতেন। 

মৃত্যু নিয়ে রহস্য

৪ বছর বয়সে ভায়োলিনে পারদর্শিতা কিংবা ৫ বছর বয়সে প্রথম মৌলিক কাজ করে মোৎজার্ট যেন জানান দিতে চেয়েছেন; জ্ঞান মানে না কোনো বয়স। তবে অকল্পনীয় এই দক্ষতা নিয়ে অন্যান্য সংগীত বোদ্ধাদের প্রতিহিংসার ব্যাপার ছিল কি না, না জানা গেলেও; তার জীবনকে আশ্রয় করে লেখা পেটার শ্যাফারের কাল্পনিক উপন্যাস 'আমাডিয়াস' বা মাইলোস ফরমানের নির্মিত নাটকে তার মৃত্যু নিয়ে রহস্য উত্তাপিত হয়। এতে দেখানো হয়, ইতালির বিখ্যাত কম্পোজার আন্তোনিও সালেরি মোজার্টকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করেন। যদিও মোৎজার্টের জীবন বিশ্লেষণে এমন কিছুর হদিস পাওয়া যায়নি। বরং আন্তোনিও মোৎজার্টের কর্মকে প্রশংসা করার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতার খবর জানা যায়। বিষ প্রয়োগের ব্যাপারটি যে মিথ ছাড়া আর কিছুই নয়, বিষয়টি পরবর্তীতে মোজার্টের স্ত্রী কনস্ট্যানজ নিশ্চিত করেন।

অনুকরণ

১৭৭০ সালে ১৪ বছর বয়সে মোৎজার্ট ইতালির রোমে একটি সংগীত আয়োজনে যোগ দেন। সেখানে ইতালির কম্পোজার গ্রেগোরি অ্যালেগ্রির বিখ্যাত কোরাল কম্পোজিশন 'অ্যালেগ্রী মিসেরে' প্রথমবারের মতো শুনতে পান। পরবর্তীতে চাউর হয়, মাত্র একবার শোনার পরপর তিনি তা পুরোদস্তুর অনুকরণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। যদিও খবরটির সত্যতা পাওয়া যায়নি। তবে ধারণা করা হয়, তার আশ্চর্য সব গুণের ব্যাপারটিকে অন্য কায়দায় প্রচার করতেই অতিকথা ছড়িয়ে থাকতে পারে।

মোৎজার্টের সৃষ্টি ও বুদ্ধি বৃদ্ধি

১৯৯৩ সালে ফ্রান্সেস রাসার, গর্ডন শ ও ক্যাথরিন গবেষণা করে জানান, মোৎজার্টের কাজগুলো বুদ্ধি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। পরবর্তীতে অনেক বাবা-মা তার সন্তানের মেধা উন্নয়নের জন্য মোৎজার্টের কাজের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে উৎসাহ বোধ করে। যদিও মানুষ কতটা বুদ্ধিসম্পন্ন হবে তার সঙ্গে বংশগতীয় ব্যাপার, পরিবেশ, শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা নির্ভর করে। একক কোনো কিছুই বুদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। তাই বলা চলে, বুদ্ধি বৃদ্ধি নয়, সংগীত মানুষের ভাবের জগতে প্রভাব ফেলতে পারে। 

উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সৃষ্টি

সিম্ফোনি ৩৯-৪১। একত্রে জুপিটার বলে খ্যাত। কথিত আছে, এই ৩টি কাজ মোৎজার্ট তার মেধা প্রচার ও ব্যাপক দক্ষতার জানান দিতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সৃষ্টি করেন। যদিও, তার আলাদাভাবে জানান দেওয়ার কিছু নেই। অতি সাধারণ জীবনযাপন করা ও একের পর এক কালজয়ী কাজ উপহার দেওয়া মানুষটি সংগীতভূবনের জন্য আশীর্বাদ ছিলেন। 

সময় বিবেচনা করলে দেখা যায়, ১৭৮৮ সালে ভিয়েনার অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল নাজুক। এই সময় তিনি আর্থিক উপার্জনের উদ্দেশ্যেই এগুলো সৃষ্টি করে থাকতে পারেন। যা একজন শিল্পীর জীবনে অতি সাধারণ ঘটনা।

রিকুইয়েম ডি মাইনর

মোৎজার্টের সবশেষ সৃষ্টি ছিল 'রিকুইয়েম'। যার বাংলা অর্থ: মৃত ব্যক্তির আত্মার শান্তি কামনায় প্রার্থনা। যদিও কাজটি মোৎজার্ট পুরোপুরি সম্পন্ন করে যেতে পারেননি। তার বন্ধুসম ছাত্র পরবর্তীতে কাজটি সম্পূর্ণ করেন। কিন্তু রিকুইয়েম নিয়ে আশ্চর্য এক কথা গোটা দুনিয়ার ছড়িয়ে পড়ে। মোৎজার্ট তার মৃত্যু আসন্ন জেনে নিজের জন্যই নাকি তৈরি করেছিলেন বিখ্যাত এই কাজ। তবে ইতিহাস বলে অন্য কথা। ফ্রাঞ্চ ফন ওয়ালসেগ নামে ব্যক্তির স্ত্রীর বিয়োগ ঘটলে তিনি আগন্তুক সেজে মোজার্টের কাছে পত্র লেখেন। এবং তার মৃত স্ত্রীর উদ্দেশ্যে কিছু একটা তৈরির অনুরোধ করে। বিনিময়ে আর্থিক লেনদেনের ব্যাপারও ছিল। সংগীত জাদুকর মনপ্রাণ উজাড় করে নেমেছিলেন কার্য সম্পাদনায়। ধারণা করা হয়, কিডনি রোগসহ আরও নানাবিধ অসুখে জর্জরিত এই বাদক বিশ্রাম ভুলে ক্লান্তিহীনভাবে কাজ করার ফলে তাড়াতাড়ি মারা গিয়ে থাকতে পারেন।

ছবি নিয়ে ছড়ানো গুজব 

১৮৪০ সালে কম্পোজার ম্যাক্স কেলারের বাড়িতে তোলা একটি ছবিতে মোজার্টের স্ত্রীকে দেখা গেছে, এমন খবর রটে। মোজার্টের মৃত্যু পরবর্তী ঘটনা বলে তার স্ত্রীকে ঘিরে আরও কথা শোনা যায়। কিন্তু ফটোগ্রাফি নিয়ে ঘাটাঘাটি করলে দেখা যায়, সে ছবি তুলতে যে ধরনের লেন্স ব্যবহারের প্রয়োজন ছিল তা সে সময় ছিল না। 

তথ্যসূত্র: ক্লাসিক্যাল-মিউজিক; আমাডিয়াস, মোজার্টের জীবন বিষয়ক কাল্পনিক উপন্যাস

 

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh women retain SAFF glory

Bangladesh retained the title of SAFF Women's Championship with a 2-1 win against Nepal in an entertaining final at the Dasharath Stadium in Kathmandu today. 

14m ago