নভেম্বরের পর রোহিঙ্গাদের খাদ্যসহায়তা বন্ধ হতে পারে: ডব্লিউএফপি

একজন রোহিঙ্গার জন্য মাসে বরাদ্দ থাকে ১২ ডলারের এই খাদ্যসহায়তা। ছবি: মোহাম্মদ জামিল খান

জরুরি অর্থসহায়তা না পেলে আগামী ৩০ নভেম্বরের পর বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গার জন্য খাদ্যসহায়তা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাবে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) এই হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, ন্যূনতম রেশন চালু রাখতে তাদের জরুরি ভিত্তিতে অর্থ প্রয়োজন।

ডব্লিউএফপি বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডোমেনিকো স্কালপেলি গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের কাছে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত অর্থ আছে। ১ ডিসেম্বর থেকে ১২ লাখ মানুষের জন্য কোনো খাবার থাকবে না। ন্যূনতম রেশন চালু রাখতে আমাদের জরুরি তহবিল প্রয়োজন।'

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শনে আসা একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, 'আমাদের আগামী ১২ মাসের জন্য প্রায় ১৭৩ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন।' তিনি বলেন, জনপ্রতি মাসিক ১২ ডলারের রেশন আরও কমানো হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে।

স্কালপেলি বলেন, 'রেশন ৬ ডলারে নামিয়ে আনলে অপুষ্টির হার বাড়বে, শিশুরা মারা যাবে। এরই মধ্যে অপুষ্টির হার অনেক বেশি।' তিনি উপসাগরীয় দেশ, আসিয়ান ও ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক দাতাদের কাছে জরুরি সহায়তার আবেদন জানান।

বর্তমানে জনপ্রতি ১২ ডলারের (প্রায় ১,৫০০ টাকা) খাদ্যসহায়তার আওতায় একজন রোহিঙ্গা ৬৫০ টাকায় ১৩ কেজি চাল, ১৮০ টাকায় এক লিটার তেল, ১৯ টাকায় আধা কেজি লবণ, ২৩.৪০ টাকায় ২০০ গ্রাম লাল মরিচ, ৫৩ টাকায় পাঁচটি ডিম, ২৬ টাকায় ৪০০ গ্রাম পেঁয়াজ, ৪৭.৬০ টাকায় ৫০০ গ্রাম মসুর ডাল, ১০৯ টাকায় ১ কেজি চিনি, ১১৩ টাকায় ৫১০ গ্রাম তেলাপিয়া মাছ, ১৪.৭০ টাকায় ১ কেজি আলু, ১৭২ টাকায় ১ কেজি মুরগির মাংস এবং ৩৯ টাকায় ১ কেজি আমড়া পেয়ে থাকেন।

ডব্লিউএফপির হিসাব অনুযায়ী, রেশন কমিয়ে ৬ ডলার (প্রায় ৭৩০ টাকা) করা হলে সম্ভাব্য খাদ্যতালিকায় থাকবে শুধু ৪০০ টাকায় ৮ কেজি চাল, ১২৭ টাকায় ১.৩৩ কেজি মসুর ডাল, ১৮০ টাকায় ১ লিটার সয়াবিন তেল, ১০ টাকায় ৩০০ গ্রাম লবণ এবং ১২ টাকায় ১০০ গ্রাম লাল মরিচ।

স্কালপেলি জোর দিয়ে বলেন, রোহিঙ্গারা নভেম্বরের পর খাওয়া বন্ধ করে দিতে পারে না, তাই সহায়তা অব্যাহত রাখা অপরিহার্য। তিনি বলেন, 'তারা নিজেদের বাসভূমে ফিরে যেতে চায়, কিন্তু নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন সম্ভব না হওয়া পর্যন্ত তাদের প্রতিদিন খেতে পারতে হবে।'

খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রের একজন রোহিঙ্গা পুরুষ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'এই সামান্য সহায়তায় পরিবারগুলো এক বেলা না খেয়ে এবং ধারদেনা করে চলে। এটা আরও কমে গেলে অপুষ্টি বাড়বে এবং ক্যাম্পের ভেতরে অসন্তোষ তৈরি হবে।'

একা ভার বইতে পারবে না বাংলাদেশ

প্রতিনিধিদলের সফরের সময় প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিব আজাদ মজুমদার জানান, কূটনীতিক, জাতিসংঘের কর্মকর্তা ও এনজিও প্রতিনিধি মিলিয়ে প্রায় ১০০ জনের একটি দল রোহিঙ্গাদের হাসপাতাল ও বিতরণ কেন্দ্র পরিদর্শন করেছে।

আজাদ মজুমদার বলেন, 'তারা যা দেখেছেন, তা হলো রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তা দিন দিন কমছে। ডব্লিউএফপি তাদেরকে জানিয়েছে, অর্থ না এলে নভেম্বরের পর খাদ্যসহায়তা বন্ধ হয়ে যাবে। ফলাফল হিসেবে ক্যাম্পে বিশৃঙ্খলা, এমনকি দুর্ভিক্ষও দেখা দিতে পারে।'

তিনি আরও বলেন, বর্তমান রেশনই অপর্যাপ্ত এবং তা আরও কমানো হলে মানবিক বিপর্যয় মারাত্মক আকার ধারণ করবে। 'একা বাংলাদেশের পক্ষে এটি সামাল দেওয়া সম্ভব নয়, এমনকি জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর পক্ষেও নয়। অর্থ ছাড়া সহায়তা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না।'

কক্সবাজারে তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের শেষ দিনে প্রতিনিধিদলটি শিবির পরিদর্শন করে। আজাদ মজুমদার বলেন, আসন্ন সংকট সরাসরি পর্যবেক্ষণের জন্য প্রতিনিধিদের ক্যাম্পে আনা হয়েছে, যাতে তারা এই আবেদন আন্তর্জাতিক ফোরাম ও দাতা দেশগুলোর কাছে পৌঁছে দিতে পারেন।

সম্মেলনে বক্তারা তহবিলের সংকট, মিয়ানমারের ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইনের মতো বৈষম্যমূলক আইন এবং রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী আরাকান আর্মির নির্বিচার হামলা, অগ্নিসংযোগ, গণহত্যা ও ধর্ষণের মতো চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘনকে এই সংকটের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন।

Comments

The Daily Star  | English

Police baton-charge, fire tear gas on protesting engineering univ students

Around 1:30pm, the students began their procession from Shahbagh and were intercepted near the InterContinental Hotel

2h ago