আরাকান আর্মিকে রুখতেই কি রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার কথা বলছে মিয়ানমার?

রোহিঙ্গা ক্যাম্প
রোহিঙ্গা ক্যাম্প। স্টার ফাইল ফটো

২৭ মার্চ যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য ইনডিপেনডেন্টের একটি বিশেষ প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল এ রকম—The Rohingya were driven from Myanmar. Now they're taking up arms to fight back. অর্থাৎ মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গারা প্রতিরোধের জন্য হাতে অস্ত্র তুলে নিচ্ছে।

খবরে বলা হয়, কক্সবাজারে শরণার্থী শিবির থেকেই সংগঠিত হয়ে রোহিঙ্গাদের প্রতিরোধ আন্দোলন ধীরে ধীরে জোরালো হচ্ছে। এই শরণার্থীশিবির থেকে হাজার হাজার তরুণ মিয়ানমারে ফিরে গিয়ে হাতে অস্ত্র তুলে নিচ্ছেন। তাদের এখন একটাই লক্ষ্য—মিয়ানমারে ফিরে গিয়ে নিজেদের অধিকার পুনরুদ্ধার করা।

প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়, রোহিঙ্গা প্রতিরোধ আন্দোলন শুধু মিয়ানমার নয়, বাংলাদেশকেও নতুন সংকটে ফেলতে পারে। কেননা শরণার্থীশিবিরে প্রায় এক ডজন মিলিশিয়া দল সক্রিয়। রোহিঙ্গাদের সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্রের তহবিল কমে যাওয়ায় আরও বেশি মানুষ অস্ত্র হাতে নিতে বাধ্য হবে বলে আশঙ্কার কথাও বলা হয় ওই প্রতিবেদনে। (https://www.independent.co.uk/asia/southeast-asia/myanmar-rohingya-rebels-recruiting-civil-war-military-b2702175.html)।

এরকম বাস্তবতায় সম্প্রতি থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যাবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি খলিলুর রহমানের সঙ্গে বৈঠকে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের উপপ্রধানমন্ত্রী ইউ থান শিউ জানিয়েছেন, কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া তালিকাভুক্ত আট লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার যোগ্য। চূড়ান্ত যাচাই–বাছাইয়ের পর্যায়ে আছে আরও ৭০ হাজার রোহিঙ্গা। (প্রথম আলো, ০৫ এপ্রিল ২০২৫)।

এই সংবাদটি পড়ে অনেকেই আশাবাদী হয়েছেন। অনেকেই ভাবছেন, এই বুঝি রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো শুরু হলো। কিন্তু বাস্তবতা কী বলছে? রোহিঙ্গাদের জন্মভূমি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে কি আদৌ তাদের ফেরত পাঠানোর মতো পরিবেশ বিরাজ করছে? সহজ জবাব হলো, না। কেননা, রাখাইনের প্রায় ৯০ শতাংশ এলাকা এখন সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির দখলে; যে আরাকান আর্মির সঙ্গে রোহিঙ্গাদের সম্পর্ক বৈরী। ফলে আরাকান আর্মির দখলে থাকা রাখাইনে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন এই মুহূর্তে খুব কঠিনই কেবল নয়, রীতিমতো অসম্ভব। সুতরাং, মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফেরত নিয়ে এখন কোথায় রাখবে? অন্য কোনো রাজ্যে? সেটির সম্ভাবনাও ক্ষীণ। তাহলে তারা কেন বলছে যে, এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার যোগ্য? এটি কি তাদের নতুন কোনো কৌশল?

রোহিঙ্গারা কী বলছেন?

সরকারি হিসাবে কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফ এবং নোয়াখালীর ভাসানচরে বর্তমানের আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১০ লাখের কিছু বেশি হলেও বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা ১২ লাখের বেশি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের এই সাম্প্রতিক আলোচনা নিয়ে কথা হয় কক্সবাজারের সাংবাদিক তৌহিদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, বাংলাদেশে আশ্রিতদের মধ্য থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নেওয়ার যোগ্য হিসেবে মিয়ানমার সরকার ঘোষণা দিলেও এখনই আশাবাদী হতে পারছেন না রোহিঙ্গারা। তারা বলছেন, মিয়ানমার সরকার চাইলেও রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে পারবে না। এ অবস্থায় রোহিঙ্গারা রাখাইনে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একটি নিরাপদ অঞ্চল গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন। রোহিঙ্গা নেতারা বলছেন, তারা নিজ দেশে ফিরতে আগ্রহী। কিন্তু তার আগে তাদের ফেরার মতো নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তৌহিদ জানান, ২০২৩ সালে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর আমন্ত্রণে একদল রোহিঙ্গাকে রাখাইন পর্যবেক্ষণের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা টেকনাফ জেটিতে ফিরে এসে বলেছিলেন, রাখাইনে তাদের জন্য নিরাপত্তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তারা সেখানে যেতে রাজি নন।

প্রত্যাবাসনের পুরোনো গল্প

মনে রাখতে হবে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের 'গল্প' এটিই প্রথম নয়। ২০১৭ সালে যখন জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা নাফ নদী পার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করল, সেই বছর থেকেই শোনা যাচ্ছে, মিয়ানমার সরকারে ধাপে ধাপে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে। কিন্তু যে প্রশ্নটি একজন সাধারণ মানুষের মনেও ছিল বা এখনো আছে সেটি হলো, যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের তাদের নাগরিকই মনে করে না এবং যাদের তারা হত্যা, ধর্ষণ, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার মতো বীভৎস নারকীয়তার মধ্য দিয়ে বাস্তচ্যুত করেছে—তারা কেন সেই রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে? এটা কি আদৌ বিশ্বাসযোগ্য? তারা ফেরত নিতে পারে যদি তাদেরকে বাধ্য করা যায়। কিন্তু কে তাদেরকে বাধ্য করবে? জাতিসংঘ বিভিন্ন সময়ে উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু মিয়ানমারের জান্তা সরকার জাতিসংঘ বা অন্য কোনো আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংগঠন কিংবা কোনো পরাশক্তিকে পাত্তা দেয় বলে মনে হয় না। কেননা তারাও চীন ও রাশিয়ার মতো পরাশক্তির বলয়ে রয়েছে। ফলে বাংলাদেশ কিংবা জাতিসংঘ চাইলেই তারা রোহিঙ্গাদের ফেরত নিয়ে যাবে—বিষয়টা এত সহজ নয়।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি সই করেছিল মিয়ানমার। চুক্তি সইয়ের দুই মাসের মধ্যে প্রত্যাবাসনপ্রক্রিয়া শুরুর কথা ছিল। বাংলাদেশ ২০১৮ থেকে ২০ সালের মধ্যে ছয় ধাপে মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের তালিকাও দিয়েছিল। এরপর ২০২৩ সালে ১ হাজার ১০০ রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানোর জন্য একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। সেটিও সফল হয়নি।

মূল চ্যালেঞ্জ আরাকান আর্মি

২০২৩ সালের বছরের অক্টোবর থেকে রাখাইনে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীকে হটিয়ে আরাকান আর্মির আধিপত্য বিস্তারের খবর গণমাধ্যমের শিরোনাম হতে থাকে। ওই বছরের নভেম্বরে রাখাইনে জান্তা বাহিনীর ঘাঁটি ও অবস্থান নিশানা করে বড় পরিসরে হামলা শুরু করে আরাকান আর্মি। এরপর থেকে রাজ্যটির ১৭টি শহরের মধ্যে ১২টির নিয়ন্ত্রণ নেয় বিদ্রোহীরা।

গত মার্চের প্রথম সপ্তাহে মিয়ানমারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইরাবতি নিউজের একটি খবরে বলা হয়, রাখাইনে ১৪ শহর আরাকান আর্মির দখলে, জান্তার হাতে আছে তিনটি। রাজ্যের রাজধানী শহর সিত্তে, বন্দরনগনরী কিয়াউকফিউ এবং বঙ্গোপসাগরীয় দ্বীপাঞ্চল মানাউং কেবল জান্তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

গত ডিসেম্বরে আরেকটি খবরে বলা হয়, রাখাইনের মংডু দখলের মধ্য দিয়ে আরাকান আর্মি এখন বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের ২৭০ কিলোমিটারের বেশি সীমান্তের পূর্ণ অংশের নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করেছে। আরাকান আর্মির বরাত দিয়ে ইরাবতির খবরে বলা হয়, মংডুর সর্বশেষ জান্তা ঘাঁটিটি দখলের সময় 'কুখ্যাত' ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থুরিন তুনসহ কয়েকশো সরকারি সেনাকে আটক করা হয়েছে।

গত ২২ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপির একটি খবরে বলা হয়, রাখাইনের আঞ্চলিক সেনা সদর দপ্তরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দাবি করেছে আরাকান আর্মি। এর মধ্য দিয়ে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে তীব্র লড়াইয়ে দ্বিতীয় কোনো আঞ্চলিক সামরিক কমান্ডের নিয়ন্ত্রণ হারাল ক্ষমতাসীন জান্তা।

বিশ্ব সম্প্রদায় কী চায়?

রাখাইনে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির এই আধিপত্য বিস্তারের সময়কালেই সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করে গেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। চারদিনের সফরে বাংলাদেশে এসে গত ১৪ মার্চ কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের পাশাপাশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় এক লাখ মানুষের সঙ্গে তিনি ইফতার করেন। পরদিন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে এবং তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আরাকান আর্মির সঙ্গে বাংলাদেশের আলোচনা চালিয়ে যাওয়া অত্যন্ত জরুরি। (যুগান্তর, ১৬ মার্চ ২০২৫)।

তার মানে আরাকান আর্মির মতো একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের পরামর্শ দেয়ার মধ্য দিয়ে জাতিসংঘ মূলত তাদের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিয়েছে।

এর পাঁচদিনের মাথায় গত ২০ মার্চ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের একটি প্রতিনিধি দলও রোহিঙ্গা বিদ্রোহী নেতা আতাউল্লাহকে গ্রেপ্তারের জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানায় এবং রাখাইন রাজ্যের বিশাল অংশ নিয়ন্ত্রণকারী আরাকান আর্মির সঙ্গে সরকারের কার্যকর যোগাযোগের পরামর্শ দেয়। (ডেইলি স্টার অনলাইন, ২০ মার্চ ২০২৫)।

এই যখন পরিস্থিতি, তখন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের আলোচনাটি নতুন করে সামনে এলো। প্রশ্ন হলো, এই ইস্যুতে মিয়ানমার আসলে কী করতে চায়? তারা যে আদৌ রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে না, সেটি গত আট বছরে তাদের নানাবিধ কর্মকাণ্ডে প্রতীয়মান হয়েছে।

মিয়ানমারের উদ্দেশ্য কী?

মিয়ানমার সরকার যেহেতু রাখাইনে আরাকান আর্মির সঙ্গে পেরে উঠছে না, ফলে তাদের দমন করার জন্য তারা কি আরও ব্যাপক যুদ্ধ বা অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে? তারা কি সেই যুদ্ধে বাংলাদেশকে পাশে চায়? যেহেতু রাখাইনের নিকটতম প্রতিবেশী বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদো থেকে রাখাইনে যাওয়ার চেয়ে ঢাকা বা টেকনাফ থেকে সেখানে পৌঁছানো অনেক সহজ—এই বিবেচনাটিও কি মিয়ানমার করছে? অর্থাৎ বাংলাদেশে থেকে এক দেড় লাখ রোহিঙ্গাকে ফেরত নিয়ে মিয়ানমার সরকার তাদেরকে আরাকান আর্মির সঙ্গে যুদ্ধের সৈনিক হিসেবে ব্যবহার করবে কি না—সেই সন্দেহও উড়িয়ে দেয়া যায় না। কেননা এরই মধ্যে রোহিঙ্গাদের একটি অংশ তাদের 'মাতৃভূমি' পুনরুদ্ধারে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। মিয়ানমার সরকার তাদের এই অনুভূতি ও পদক্ষেপকে রাখাইন রাজ্য আরাকান আর্মির হাত থেকে মুক্ত করার কাজে লাগাতে চায় কি না, সেটি ভেবে দেখা দরকার। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সেখানে এরই মধ্যে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে রোহিঙ্গাদেরকে দিয়েই তারা এখন আরাকান আর্মির মোকাবিলা করতে চাইতে পারে। এর মধ্য দিয়ে শেষ পর্যন্ত উভয় পক্ষের অনেক লোক নিহত হলেও এবং রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির আধিপত্য কমলেও শেষ পর্যন্ত রাখাইন রাজ্য রোহিঙ্গাদের হবে কি না বা তারা নিজ ভূমিতে ফিরতে পারবে কি না—সেটি বিরাট প্রশ্ন হিসেবেই থেকে যায়।

সুতরাং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে জাতিসংঘ এবং ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ যে সময়ে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগের জন্য বাংলাদেশকে পরামর্শ দিয়েছে, সেই সময়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমার সরকারের এই 'আন্তরিকতা'য় চট করে আনন্দিত হওয়ার সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। কারণ মিয়ানমার হয়েতো ভাবছে, বাংলাদেশ যদি সত্যি সত্যিই আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ করে বা তাদেরকে সহযোগিতা দেয়, তাহলে রাখাইনের ওপর মিয়ানমার হয়তো পরিপূর্ণভাবে তার নিয়ন্ত্রণ হারাবে এবং একসময় রাখাইনে আরাকান আর্মির স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। এমনকি স্বাধীন আরাকান রাষ্ট্রও গঠিত হয়ে যেতে পারে—যেটি মিয়ানমারের জন্য একটি বিরাট পরাজয় হিসেবে চিহ্নিত হবে।

একদিকে স্মরণকালের ভয়াবহ ভূমিকম্প অন্যদিকে গৃহযুদ্ধ—সবকিছু মিলিয়ে মিয়ানমার নিজেই যখন নানাবিধ চাপে রয়েছে, সেই সময়ে রাখাইনের মতো একটি বড় রাজ্য হাতছাড়া হয়ে গেলে, সেটি মিয়ানমারের জন্য হজম করা কঠিন হবে। এসব কারণে, অর্থাৎ রাখাইনে আরাকান আর্মির আধিপত্য কমানো তথা সেখানে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য মিয়ানমার এখন বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে ফেরত নেয়ার কথা বলছে কি না—সেটিও ভেবে দেখতে হবে। যদি তাই হয়, তাহলে রাখাইনে আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার সরকারের এই বিরোধ বা যুদ্ধে বাংলাদেশ কোনোভাবে জড়াবে কি না; জড়ালে তার পরিণতি কী হবে; বাংলাদেশের সীমান্তসংলগ্ন এই রাজ্য অস্থিতিশীল হলে বা সেখানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন যদি চলে আসে, তারও প্রভাব বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কী পড়বে—এসব দূরবর্তী অংকও করতে হবে।

মনে রাখতে হবে, রোহিঙ্গা সংকট এখন আর বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বরং এটি এখন আঞ্চলিক ইস্যু, বিশেষ করে রাখাইনে যেসব দেশের বিনিয়োগ আছে; নিরাপত্তার স্বার্থ আছে এমনকি এই অঞ্চলে চীনের আধিপত্য নিয়ন্ত্রণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থও আছে। ফলে রোহিঙ্গা এখন আন্তর্জাতিক ইস্যুও বটে।

অতএব মিয়ানমার সরকার বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে চায় বা ফেরত নেয়ার যোগ্য মনে করে বলে যে সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে—তাতে এখনই আশাবাদী হওয়ার কিছু নেই। এখানে অনেকগুলো পক্ষ জড়িত। কে কোন স্বার্থে কী করবে, কীভাবে তারা নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবে—তা বলা মুশকিল। সেজন্য বাংলাদেশকে খুবই কৌশলী হতে হবে। চোখকান খোলা রাখতে হবে।

আমীন আল রশীদ: সাংবাদিক ও লেখক

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh alleges border abuse by BSF

Those pushed-in allege torture, abuses in India

A Bangladeshi woman has alleged that India’s Border Security Force (BSF) tied empty plastic bottles to her and her three daughters to keep them afloat, then pushed them into the Feni river along the Tripura border in the dark of night, in a chilling account of abuse at the border.

5h ago