গাজায় নিহত ৭ হাজার ছাড়াল, ইসরায়েলের হামলায় ৫০ জিম্মির মৃত্যু: হামাস

ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ৭ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৩ হাজার শিশু বলে জানিয়েছেন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা।
ইসরায়েলের বোমা হামলায় ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে এক নারীকে বের করে আনার চেষ্টা করছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: রয়টার্স

ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ৭ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৩ হাজার শিশু বলে জানিয়েছেন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা।

এ ছাড়া, গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর অনবরত বোমা হামলায় গাজার প্রায় ২ লাখ বাসভবন সম্পূর্ণ বা আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে, যা গাজার জনবহুল এলাকার ২৫ শতাংশেরও বেশি বলে জানিয়েছেন সেখানকার গণপূর্ত ও গৃহায়ন মন্ত্রী মোহাম্মদ জিয়ারা। 

এদিকে হামাসের আল-কাসাম ব্রিগেড আজ বৃহস্পতিবার তাদের টেলিগ্রাম পোস্টে জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় হামাসের হাতে জিম্মিদের মধ্যে নিহত হয়েছেন প্রায় ৫০ জন।

এর আগে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী জানায় যে, হামাস ইসরায়েল থেকে কমপক্ষে ২২৪ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে গেছে।

ইসরায়েল ও হামাসের রক্তক্ষয়ী সংঘাত নিরসনে আজ যৌথ বিবৃতি দিয়েছে আরব বিশ্বের দেশগুলো।

বিবৃতিতে বাহরাইন, মিশর, জর্ডান, কুয়েত, মরক্কো, ওমান, কাতার, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বলেছেন, আত্মরক্ষার অধিকার আইন ভঙ্গ এবং ফিলিস্তিনিদের অধিকারকে উপেক্ষা করার ন্যায্যতা দেয় না।

গাজা উপত্যকায় জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি ও সম্মিলিত শাস্তির জন্য ইসরায়েলের প্রতি নিন্দাও জ্ঞাপন করেছেন তারা।

'নজিরবিহীন মানবিক বিপর্যয়ের' মধ্যে গাজায় ত্রাণ সরবরাহে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে আজ বিবৃতি দিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও।

সংস্থাটির সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেন, 'গাজায় সব পক্ষের দ্বারাই যুদ্ধাপরাধসহ আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন হচ্ছে। এই ধরনের নজিরবিহীন ধ্বংসযজ্ঞ ও দুর্ভোগের মুখে মানবতাকে অবশ্যই জয়ী হতে হবে।'

ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ আল-মালিকি গাজায় ইসরায়েলি 'অপরাধ এবং ধ্বংসযজ্ঞ' সম্পর্কে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে ব্রিফ করার একদিন পর আজ নেদারল্যান্ডসের হেগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন।

গাজায় জরুরি মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে ইসরায়েলকে একটি পরিপূর্ণ যুদ্ধবিরতিতে যেতে সম্মত হতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এবার ইসরাইল যে যুদ্ধ চালাচ্ছে তা ভিন্ন। এই মুহূর্তে... মনে হচ্ছে এটি একটি প্রতিশোধের যুদ্ধ।'

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা ডি সিলভা বলেছেন, গাজায় হাজার হাজার শিশু নিহত হচ্ছে। এটি 'যুদ্ধ নয়, গণহত্যা।'

'মধ্যপ্রাচ্যে এই মুহূর্তে যা ঘটছে তা খুবই গুরুতর। কার কারণ আছে বা কে ভুল তা নিয়ে আলোচনা করার সময় এখন নয়। সমস্যাটি হলো- এটি যুদ্ধ নয়, গণহত্যা। ইতোমধ্যে ২ হাজার শিশু নিহত হয়েছে, যারা এই যুদ্ধে জড়িত নয় তবে ভুক্তভোগী', বলেন তিনি।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছেন, গাজায় ইসরায়েলের হামলা 'গণহত্যার পর্যায়ে পৌঁছেছে' এবং এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতা 'মানবতার জন্য লজ্জা'।

পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে ফোনালাপে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি গাজার বেসামরিকদের জন্য 'নিরবচ্ছিন্ন সহায়তা' প্রদানের প্রচেষ্টাকে সবার সমর্থন করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি। 

গতকাল এরদোয়ান বলেছিলেন, গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাস কোনো সন্ত্রাসী সংগঠন নয়। বরং তারা একটি স্বাধীনতাকামী সংগঠন, যারা ফিলিস্তিনের মানুষ ও ভূখণ্ড রক্ষায় লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গতকাল সতর্ক করে বলেছেন, 'সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যের বাইরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। কিছু মানুষের অপরাধের জন্য গাজার নারী, শিশু ও বয়স্ক মানুষকে শাস্তি দেওয়াটা বড় ভুল।'

মস্কোয় বিভিন্ন ধর্মের নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে পুতিন বলেন, 'আজ আমাদের মূল কাজ হচ্ছে রক্তপাত ও সহিংসতা বন্ধ করা। অন্যথায় এই সংকট আরও গভীর ও ভয়াবহ হয়ে উঠবে এবং ধ্বংসাত্মক পরিণতি ডেকে আনবে।'

ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান যুদ্ধের মধ্যেই হামাসের একটি প্রতিনিধি দল রাশিয়ায় পৌঁছেছে।

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আরআইএ'র বরাত দিয়ে আল-জাজিরা জানায়, হামাসের প্রতিনিধি দলে সংগঠনের জ্যেষ্ঠ সদস্য আবু মারজুকও আছেন।

অপরদিকে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী বাঘিরি কানিও মস্কো সফর করছেন বলে জানিয়েছেন রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা।

 

Comments

The Daily Star  | English

Int'l day to end corporal punishment: The children grow but the scars remain

A few days ago, a post went viral on Facebook, saying “Today’s children may not comprehend why we were beaten in our childhoods”.

14h ago