পরিবারের ১২ সদস্যকে হারানোর পরদিনই কাজে ফিরলেন আল জাজিরার সাংবাদিক

আল জাজিজার গাজা ব্যুরো প্রধান ওয়ায়েল দাদুহর তার এক নিহত সন্তানের লাশ বহন করছেন। ছবি: এএফপি
আল জাজিজার গাজা ব্যুরো প্রধান ওয়ায়েল দাদুহর তার এক নিহত সন্তানের লাশ বহন করছেন। ছবি: এএফপি

ইসরায়েলের নির্বিচার বিমান হামলায় নিহত পরিবারের ১২ সদস্যকে সমাহিত করার একদিন পরেই কাজে ফিরেছেন গাজায় আল জাজিরার ব্যুরো প্রধান ওয়ায়েল আল-দাহদু।

গতকাল বৃহস্পতিবার হাফিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।

বুধবার ইসরায়েল দক্ষিণ গাজার নুসিরাত শরণার্থী শিবিরে বিমান হামলা চালায়। এ হামলায় নিহত হন ওয়ায়েলের স্ত্রী আমনা (৪৪), ছেলে মাহমুদ (১৬), মেয়ে শাম (৭) ও অপ্রাপ্তবয়স্ক নাতি অ্যাডাম। পরিবারের আরও আটজন সদস্যও এই হামলায় প্রাণ হারান, যাদের মধ্যে আছেন তার চাচাতো ভাইয়ের মেয়ে হাদির ও তার চার সন্তান। তারা সবাই ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নির্দেশ মেনে উত্তর গাজা ছেড়ে দক্ষিণে এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

আল জাজিরার ডিজিটাল চ্যানেল এজে প্লাসে পোস্ট করা এক ভিডিওতে ওয়ায়েল আল-দাহদু জানান, তার পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য মারা গেলেও দ্রুত কাজে ফেরা তার 'দায়িত্ব' ছিল।

গাজার ব্যুরো প্রধান ওয়ায়েল আরও বলেন, 'আপনারা দেখতে পাচ্ছেন, এখনো সবখানে হামলা চলছে।'

ভিডিওতে দেখা যায়, কাছাকাছি একটি জায়গা থেকে ধোঁয়া উঠছে। সেদিকে আঙ্গুল দেখিয়ে ওয়ায়েল যোগ করেন, 'এটা হচ্ছে বিমান হামলা ও কামানের গোলাবর্ষণের পরবর্তী দৃশ্য। এবং হামলা থামছে না।'

ওয়ালের বড় মেয়ে বিসান (২৭) সে সময় শিবিরে না থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। তার আরও চার ভাই-বোন সোনদোস, খোলুদ, বাতুল ও ইয়াহিয়া আহত অবস্থায় আল-আকসা মারটায়ার্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

এই সাংবাদিকের শাশুড়ি হানান (৮১) হামলায় বেঁচে গেলেও আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছেন। ওয়ায়েলের শ্যালক আলি বৃহস্পতিবার আল জাজিরাকে এই তথ্য জানান।

পরিবারের সদস্যদের জানাজায় অংশ নিচ্ছেন ওয়ায়েল। ছবি: রয়টার্স
পরিবারের সদস্যদের জানাজায় অংশ নিচ্ছেন ওয়ায়েল। ছবি: রয়টার্স

ওয়ায়েলের পরিবার উত্তর গাজার তাল আল-হাওয়া মহল্লায় বসবাস করতেন। সম্প্রতি তারা নুসিরাত শিবিরে আসেন।

বেশ কয়েক বছর ধরে সাংবাদিক ওয়ায়েল গাজা ও অন্যান্য অধিকৃত অঞ্চলে সাংবাদিকতা করছেন। যে হামলায় তার পরিবারের সদস্যরা প্রাণ হারিয়েছেন, তিনি সেটারই লাইভ কভারেজ দিচ্ছিলেন বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটনভিত্তিক সাংবাদিকদের সংগঠন ন্যাশনাল প্রেস ক্লাব।

গাজায় ওয়ায়েলের সহকর্মী ও অন্যান্য সাংবাদিকদের তোলা ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায় তিনি হাসপাতালে এসে সন্তানদের কাপড়ে মোড়ানো রক্তাক্ত লাশ জড়িয়ে ধরে বসে আছেন। এছাড়া তাকে দুই নারীর সহায়তায় নাতির লাশ বহন করে এগিয়ে যেতেও দেখা যায়।

এজে প্লাস নেটওয়ার্কের ভিডিওতে ওয়ায়েল জানান, তিনি অনেকের কাছ থেকে শোকবার্তা ও সান্ত্বনার বাণী পেয়েছেন, যার জন্য তিনি কৃতজ্ঞ।

পরিবারের সব সদস্যকে হারানোর পরেও ওয়ায়েল গাজার মানবিক সংকটের সংবাদ পরিবেশনের কাজ দেওয়া চালিয়ে যেতে চান জানিয়ে তিনি বলেন, 'আমার কাছে মনে হয়েছে অবর্ণনীয় বেদনা ও যাতনার মধ্য দিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও যত দ্রুত সম্ভব ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে আপনাদের কাছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসাটা আমার দায়িত্ব'।

পরিবারের সদস্যদের জানাজায় অংশ নিচ্ছেন ওয়ায়েল। ছবি: এএফপি
পরিবারের সদস্যদের জানাজায় অংশ নিচ্ছেন ওয়ায়েল। ছবি: এএফপি

বার্তা সংস্থা এপি গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে চলমান ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় সাত হাজার ২৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই হাজার ৯১৩ জন শিশু। এই সংঘাতে মারা গেছেন এক হাজার ৪০০ ইসরায়েলি।

ফিলিস্তিনি নিহতের সংখ্যা নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সন্দেহ প্রকাশ করলেও হাফিংটন পোস্ট জানিয়েছে, মার্কিন সরকার অভ্যন্তরীণ যোগাযোগে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়ার সংখ্যাটিই ব্যবহার করছে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Protests continue in Khulna for 3rd day demanding KMP commissioner’s removal

Protesters staged a sit-in outside the KMP headquarters, blocking roads and chanting slogans

53m ago