লোহিত সাগরে ইসরায়েলগামী যেকোনো জাহাজে হামলার হুমকি হুতিদের

শনিবার হুতিদের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেন, ‘যদি গাজা তার প্রয়োজন অনুযায়ী খাবার ও ওষুধ না পায়, তাহলে লোহিত সাগর দিয়ে ইসরায়েলি বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া সব জাহাজ, তা সে দেশেরই হোক না, আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর হামলার লক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হবে।’
গত মাসে গ্যালাক্সি লিডার জাহাজটি আটক করে হুতিরা। ছবিতে জাহাজটির ওপর হুতিদের হেলিকপ্টার দেখা যাচ্ছে। ছবি: রয়টার্স
গত মাসে গ্যালাক্সি লিডার জাহাজটি আটক করে হুতিরা। ছবিতে জাহাজটির ওপর হুতিদের হেলিকপ্টার দেখা যাচ্ছে। ছবি: রয়টার্স

ইয়েমেনের সশস্ত্র সংগঠন হুতি হুমকি দিয়ে জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলগামী সব জাহাজকেই হামলার লক্ষ্যবস্তু হিসেবে বিবেচনা করবে। সংগঠনটি আন্তর্জাতিক নৌপরিবহন প্রতিষ্ঠানগুলোকে ইসরায়েলি বন্দরের সঙ্গে বাণিজ্যের বিষয়ে সতর্ক করেছে।

গতকাল শনিবার এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা।

শনিবার হুতিদের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেন, 'যদি গাজা তার প্রয়োজন অনুযায়ী খাবার ও ওষুধ না পায়, তাহলে লোহিত সাগর দিয়ে ইসরায়েলি বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া সব জাহাজ, তা সে দেশেরই হোক না, আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর হামলার লক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হবে।'

পশ্চিমা বিশ্লেষকদের মতে, ইরান সমর্থিত সংগঠনটি এই উদ্যোগের মাধ্যমে আঞ্চলিক সংঘাত সৃষ্টির ঝুঁকি তৈরি করছে।

ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছেন ইয়েমেনের বাসিন্দারা। ছবি: রয়টার্স
ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছেন ইয়েমেনের বাসিন্দারা। ছবি: রয়টার্স

অপরদিকে, হামাসকে নির্মূলের উদ্দেশ্যে ইসরায়েলের নির্বিচার হামলা তৃতীয় মাসে গড়িয়েছে।

৭ অক্টোবর হামাসের সদস্যরা ইসরায়েলি ভূখণ্ডে প্রবেশ করে এক হাজার ২০০ ইসরায়েলিকে হত্যা ও ২৪০ জন ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিককে জিম্মি করার পর থেকে এই প্রতিশোধমূলক হামলা শুরু হয়েছে।

এই হামলায় এখন পর্যন্ত ১৭ হাজার ৭০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং ৪৯ হাজার আহত হয়েছেন। মাঝে সাত দিনের যুদ্ধবিরতির পর আবার তীব্র আকার ধারণ করেছে এই সংঘাত। উত্তর গাজার পাশাপাশি দক্ষিণ গাজাতেও অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে হুতিরা লোহিত সাগর ও বাব আল-মানদাব প্রণালীতে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বেশ কয়েকটি জাহাজে হামলা করে। এই নৌপথ দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য থেকে পৃথিবীর বেশিরভাগ তেল রপ্তানি হয়। এ ছাড়া, হুতিরা ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ড্রোন ও ব্যালিসটিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।

আটকের পর গ্যালাক্সি লিডার জাহাজ। ছবি: রয়টার্স
আটকের পর গ্যালাক্সি লিডার জাহাজ। ছবি: রয়টার্স

গত সপ্তাহে হুতিরা তিনটি বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা চালালে একটি মার্কিন নৌবাহিনীর ডেস্ট্রয়ার জাহাজ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়। আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমায় এই ঘটনা ঘটে।

এ ছাড়াও, গত সপ্তাহে হুতিরা ইয়েমেনের উপকূলে অপর দুই জাহাজে হামলা চালায়। যার মধ্যে বাহামার পতাকা সম্বলিত একটি জাহাজও ছিল। হুতিদের দাবি, জাহাজগুলো ইসরায়েলি মালিকানাধীন।

এর আগে, গত মাসে হুতি বিদ্রোহীরা ইসরায়েল সংশ্লিষ্ট গ্যালাক্সি লিডার নামে একটি পণ্যবাহী জাহাজ আটক করে। সংগঠনটি বিভিন্ন দেশের প্রতি আহ্বান জানায়, তারা যেন ইসরায়েলের জাহাজে তাদের দেশের নাগরিকদের ক্রু হিসেবে কাজ করার অনুমতি না দেয়।

নতুন করে নিয়োগ দেওয়া হুতি সদস্যরা মহড়ায় অংশ নিচ্ছেন। তারা ফিলিস্তিনকে সহায়তা করতে গাজায় যাবেন। ছবি: রয়টার্স (২ ডিসেম্বর, ২০২৩)
নতুন করে নিয়োগ দেওয়া হুতি সদস্যরা মহড়ায় অংশ নিচ্ছেন। তারা ফিলিস্তিনকে সহায়তা করতে গাজায় যাবেন। ছবি: রয়টার্স (২ ডিসেম্বর, ২০২৩)

হুতি কর্মকর্তারা জানান, ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানাতে তারা এসব উদ্যোগ নিচ্ছেন।

ইসরায়েল বলেছে, জাহাজের ওপর হামলা 'ইরানের জঙ্গি কার্যক্রম', যা আন্তর্জাতিক নৌপরিবহনের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য এসব হামলার নিন্দা জানিয়েছে। তাদের দাবি, ইরানের সমর্থন নিয়েই হুতিরা এসব হামলা চালাচ্ছে।

তেহরান উত্তরে জানিয়েছে, তাদের মিত্ররা স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।

 

Comments