ইসরায়েলের ‘বড়দিনের রক্তস্নান’: নিহত ৭৮ ফিলিস্তিনি
প্রায় ১১ সপ্তাহ ধরে গাজায় নির্বিচার হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। আজ খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব বড়দিনেও থামেনি তাদের এই আগ্রাসন।
গাজার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বড় দিনের আগের সন্ধ্যা থেকে শুরু করে আজ সকাল পর্যন্ত ইসরায়েলি বিমানহামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ৭৮ ফিলিস্তিনি।
আজ সোমবার এই তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।
মধ্যরাতের ঠিক আগ থেকে ইসরায়েলের হামলার তীব্রতা বেড়ে যায়। এই হামলা বড়দিনের সকাল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ফিলিস্তিনি গণমাধ্যম জানিয়েছে, আজ সোমবার গাজার কেন্দ্রে আল-বুরেইজ অঞ্চলে স্থল ও বিমানহামলার মাত্রা বাড়িয়েছে ইসরায়েল।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কিদরা জানান, গাজার কেন্দ্রে অবস্থিত মাঘাজি শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বিমানহামলায় অন্তত ৭০ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই নারী ও শিশু।
আল জাজিরা জানিয়েছে, কয়েক ডজন মরদেহ 'আল-আকসার শহীদদের' হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা মাঘাজির হামলার ঘটনাটির প্রতিবেদনটি যাচাই করছে এবং তারা বেসামরিক ব্যক্তিদের দুর্দশা কমাতে বদ্ধপরিকর।
ইসরায়েলের দাবি, জনবহুল এলাকায় বেসামরিক ব্যক্তিদের মাঝে লুকিয়ে থেকে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাসের যোদ্ধারা তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। এ ছাড়া, বেসামরিক মানুষদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট আহতদের হাসপাতালে স্থানান্তরের ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করেছে।
সংস্থাটি জানায়, ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো গাজার কেন্দ্রের মূল সড়কগুলোতে নির্বিচার বোমা হামলা চালাচ্ছে। যার ফলে অ্যাম্বুলেন্স ও অন্যান্য জরুরি পরিবহনের চলাফেরা বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
চিকিৎসাকর্মীরা জানান, দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে পৃথক এক বিমানহামলায় আট ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।
নভেম্বরে জেরুজালেমের চার্চের প্রধানরা ঠিক করেছিলেন, যিশু খ্রিস্টের জন্মস্থান হিসেবে বিবেচিত পশ্চিম তীরের শহর বেথেলহামে বড়দিনে কোনো উৎসব করা হবে না।
এই হামলার আগে ফিলিস্তিনি খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা অন্যান্য বছরের মতো কোনো উৎসব না করে বেথেলহামে মোম জ্বালিয়ে বড়দিনের সঙ্গীত পরিবেশনা করেন এবং গাজার জন্য প্রার্থনা করেন।
বেথেলহামের প্রথাগত বড়দিন উদযাপনের অংশ হিসেবে কোনো ক্রিসমাস ট্রিও সাজানো হয়নি এবার।
এ মাসের শুরুতে এক সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষে স্থল হামলার মাত্রা বাড়িয়েছে ইসরায়েল। সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন বিমান হামলাও থেমে থাকেনি। যুদ্ধ এখন উত্তর গাজা থেকে দক্ষিণ গাজার জনবহুল এলাকাগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে। যার ফলে গাজার ফিলিস্তিনিদের জন্য কোনো নিরাপদ জায়গা নেই বললেই চলে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ১০ সেনা নিহত হয়েছে। এর আগের দিন নিহত হয়েছেন পাঁচ সেনা। নভেম্বরের পর দুই দিনে এটাই ইসরায়েলের সবচেয়ে বেশি সেনা হারানোর ঘটনা।
গতকাল রোববার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু তার মন্ত্রিসভাকে বলেন, 'আজকের সকালটি আমাদের জন্য কঠিন। গতকাল গাজায় অত্যন্ত কঠিন যুদ্ধও শেষে আজ আমি আপনাদের মুখোমুখি হচ্ছি'
'এই যুদ্ধে আমাদেরকে অনেক বড় দাম দিতে হচ্ছে। তা সত্ত্বেও, যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া ছাড়া আমাদের হাতে কোনো বিকল্প নেই', যোগ করেন তিনি।
পরে আরেক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন ইসরায়েলি সেনারা গাজার গভীরে প্রবেশ করে হামাসের বিরুদ্ধে 'বিজয়' অর্জন না করা পর্যন্ত থামবে না।
গাজায় সর্বাত্মক হামলার পরিবর্তে হামাসের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে হামলা করার সুপারিশ করেছে ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় মিত্র যুক্তরাষ্ট্র।
শনিবার ইসরায়েলের মিলিটারি চিফ অব স্টাফ জানান, উত্তর গাজায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়েছে এবং তারা দক্ষিণ গাজায় অভিযানের সম্প্রসারণ করবেন।
কিন্তু উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর বাসিন্দারা জানান, সেখানে যুদ্ধের তীব্রতা আরও বেড়েছে।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালায়। ইসরায়েল কর্তৃপক্ষের সর্বশেষ তথ্য মতে, এই হামলায় প্রায় এক হাজার ১৩৯ ইসরায়েলি নাগরিককে হত্যা করে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাসের সদস্যরা। তাদের হাতে জিম্মি হন প্রায় ২৪০ জন। এ ঘটনার পর একইদিনে হামাসকে নির্মূলের উদ্দেশ্যে গাজার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক হামলা শুরু করে ইসরায়েল। অক্টোবরের শেষে স্থল হামলা শুরুর পর দেশটি ১৫৭ জন সেনা হারিয়েছে। আহত হয়েছেন আট হাজার ৭৩০ জন।
ইসরায়েলের নির্বিচার ও নিরবচ্ছিন্ন স্থল ও বিমানহামলায় এখন পর্যন্ত গাজার ২০ হাজার ৪২৪ ফিলিস্তিনি নিহত ও ৫৪ হাজার ৩৬ জন আহত হয়েছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে আরও অসংখ্য মরদেহ। নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। ফিলিস্তিনি হতাহতের তথ্য জানায় গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
পাশাপাশি অধিকৃত পশ্চিম তীরে প্রাণ হারিয়েছেন ৩০৩ ও আহত হয়েছেন তিন হাজার ৪৫০ জন।
Comments