গাজায় গণহত্যা হচ্ছে না: যুক্তরাষ্ট্র

গাজার কেন্দ্রে মাঘাজি রিফিউজি ক্যাম্পে ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন এই ফিলিস্তিনি নারী। তার মরদেহ বহন করে নিয়ে যাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। ফাইল ছবি: রয়টার্স
গাজার কেন্দ্রে মাঘাজি রিফিউজি ক্যাম্পে ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন এই ফিলিস্তিনি নারী। তার মরদেহ বহন করে নিয়ে যাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। ফাইল ছবি: রয়টার্স

প্রায় তিন মাস ধরে গাজায় সর্বাত্মক হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর নির্বিচার বোমাবর্ষণ ও স্থল অভিযানে প্রাণ হারিয়েছেন ২২ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। তা সত্ত্বেও, যুক্তরাষ্ট্র বলছে 'গণহত্যা হচ্ছে না'।

গতকাল বুধবার এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

গত শনিবার গাজায় 'গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ডে' জড়িত থাকার অভিযোগে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মামলা করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।

এর প্রেক্ষাপটে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার গতকাল বুধবার মন্তব্য করেন, গাজায় এ ধরনের কার্যক্রম হচ্ছে বলে মনে করে না যুক্তরাষ্ট্র।

তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বলেন, 'এ ধরনের অভিযোগকে হালকা ভাবে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে আমরা এমন কোনো কর্মকাণ্ড দেখিনি যাকে গণহত্যা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যায়'।

'এটাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত', যোগ করেন তিনি।

ম্যাথু মিলার। ছবি: সংগৃহীত

১৯৪৮ সালের গণহত্যা কনভেনশনের শর্ত ভঙ্গ করেছে ইসরায়েল—জরুরী ভিত্তিতে এমন ঘোষণা দিতে আইসিজেকে মঙ্গলবার অনুরোধ করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। 

দক্ষিণ আফ্রিকার আবেদনের ভিত্তিতে ১১ ও ১২ জানুয়ারি আদালতে এ বিষয়টি নিয়ে শুনানির আয়োজন করা হয়েছে। ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা এই অভিযোগের বিরুদ্ধে লড়বে।

ম্যাথু মিলার জানান, গাজায় যুদ্ধাপরাধ বা মানবতার বিরুদ্ধে কোনো অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কী না, সে বিষয়ে তার কাছে কোনো বিশ্লেষণ নেই।

মঙ্গলবার ওয়াশিংটন দুই ইসরায়েলি মন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতি কড়া ভাষায় নিন্দা জানায়। এই মন্ত্রীরা মত প্রকাশ করেন, ফিলিস্তিনিদের গাজার বাইরে অন্য কোনো অঞ্চলে পুনর্বাসন করা উচিত।

তবে এই দুই মন্ত্রীর বক্তব্য ইসরায়েল সরকারের চিন্তাধারার প্রতিফলন নয়, এমন আশ্বাস পেয়েছে ওয়াশিংটন।

সরাসরি যুদ্ধ বন্ধ বা স্থায়ী যুদ্ধবিরতির স্বপক্ষে অবস্থান নিচ্ছে না ইসরায়েলের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র।

তবে দেশটির কর্মকর্তারা একাধিকবার মন্তব্য করেন, এই সংঘাতে অনেক বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হচ্ছেন। তারা ইসরায়েলকে অনুরোধ করেছেন বেসামরিক ব্যক্তিদের সুরক্ষা দেওয়ার উদ্যোগ বাড়াতে।

ইসরায়েলি হামলায় নিহত এক ফিলিস্তিনির মরদেহে জড়ানো কাফনের কাপড়ে তার নাম-পরিচয় লিখছেন স্বেচ্ছাসেবক মোহাম্মেদ আবু মুসা। ফাইল ছবি: রয়টার্স
ইসরায়েলি হামলায় নিহত এক ফিলিস্তিনির মরদেহে জড়ানো কাফনের কাপড়ে তার নাম-পরিচয় লিখছেন স্বেচ্ছাসেবক মোহাম্মেদ আবু মুসা। ফাইল ছবি: রয়টার্স

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালায়। ইসরায়েল কর্তৃপক্ষের সর্বশেষ তথ্য মতে, এই হামলায় প্রায় এক হাজার ১৪০ ইসরায়েলি নাগরিককে হত্যা করে হামাসের সদস্যরা। তাদের হাতে জিম্মি হন প্রায় ২৫০ জন। এ ঘটনার পর একইদিনে হামাসকে নির্মূলের উদ্দেশ্যে গাজার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক হামলা শুরু করে ইসরায়েল।

ইসরায়েলের নির্বিচার ও নিরবচ্ছিন্ন স্থল ও বিমানহামলায় এখন পর্যন্ত গাজায় ২২ হাজার ৩১৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে আরও অসংখ্য মরদেহ। নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। ফিলিস্তিনি হতাহতের তথ্য জানায় গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

  গাজায় চলমান সংঘাতের মাঝেই জন্ম নেয় ফিলিস্তিনি শিশু ইদরেস-আল-দারির। এই সংঘাতেই প্রাণ হারায় সে। তার মরদেহকে কোলে নিয়ে চোখের পানি ফেলছেন তার দাদী ও অন্যান্য আত্মীয়রা। দক্ষিণ গাজার রাফাহ হাসপাতালে তোলা ছবি। ফাইল ছবি: রয়টার্স
গাজায় চলমান সংঘাতের মাঝেই জন্ম নেয় ফিলিস্তিনি শিশু ইদরেস-আল-দারির। এই সংঘাতেই প্রাণ হারায় সে। তার মরদেহকে কোলে নিয়ে চোখের পানি ফেলছেন তার দাদী ও অন্যান্য আত্মীয়রা। দক্ষিণ গাজার রাফাহ হাসপাতালে তোলা ছবি। ফাইল ছবি: রয়টার্স

ইসরায়েল গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগকে 'ভিত্তিহীন' বলে উড়িয়ে দিয়েছে। তাদের দাবি, হামাস ফিলিস্তিনিদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে এবং তাদের কাছ থেকে ত্রাণ উপকরণ ছিনিয়ে নিচ্ছে।

হামাস উভয় অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

 

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

3h ago