আলোচনায় ১ মাসের যুদ্ধবিরতি, আগের প্রস্তাবে হামাসের ‘না’

স্থায়ীভাবে গাজার সংঘাত নিরসনের সম্ভাব্য উপায় নিয়ে দুই পক্ষের দ্বিমতের কারণে এখনো এই পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়নি।
গাজায় অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। ছবি: রয়টার্স
গাজায় অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। ছবি: রয়টার্স

ইসরায়েলের দেওয়া দুই মাসের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হয়নি হামাস। আপাতত এক মাসের যুদ্ধবিরতি নিয়ে নতুন করে আলোচনা চলছে দুই পক্ষের মধ্যে। এই যুদ্ধবিরতি শেষে স্থায়ীভাবে সংঘাত নিরসনের নিশ্চয়তা চেয়েছে হামাস।

আজ বুধবার এই তথ্য জানিয়েছে ইসরায়েলের গণমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল।

এক মাসের যুদ্ধবিরতিতে 'নীতিগত' সমর্থন

গাজায় স্থল অভিযানে ইসরায়েলি বাহিনী। ছবি: রয়টার্স
গাজায় স্থল অভিযানে ইসরায়েলি বাহিনী। ছবি: রয়টার্স

ইসরায়েল ও হামাস নীতিগতভাবে একমত হয়েছে, এক মাসের যুদ্ধবিরতিতে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগারে আটক ফিলিস্তিনিরা মুক্তি পাবেন। রয়টার্সকে তিনজন সূত্র জানান, তবে স্থায়ীভাবে গাজার সংঘাত নিরসনের সম্ভাব্য উপায় নিয়ে দুই পক্ষের দ্বিমতের কারণে এখনো এই পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়নি।

কাতার, ওয়াশিংটন ও মিশরের উদ্যোগে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে পর্যায়ক্রমে সব ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার একটি প্রক্রিয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে। শুরুতে বেসামরিক ব্যক্তি ও পরবর্তীতে সেনাদের মুক্তি, দুই পক্ষের সহিংসতায় বিরতি, ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি ও গাজায় আরও ত্রাণ পাঠানো—এ বিষয়গুলো আলোচিত হয়েছে।

ইসরায়েল এ সপ্তাহে দুই মাস যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাব হামাসের কাছে পাঠায়। এই প্রস্তাবে জিম্মি ও বন্দি মুক্তির পাশাপাশি গাজায় অবস্থানরত ইয়াহিয়া সিনওয়ারসহ গাজার জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিরাপদে অন্য কোনো দেশে চলে যেতে দেওয়ার কথা বলা হয়।

আলোচনার বিষয়ে অবগত আছেন এমন এক সূত্র জানান, এ পর্যায়ের আলোচনা শুরু হয় ২৮ ডিসেম্বর থেকে। প্রায় এক মাস ধরে চলমান এ আলোচনায় বেশিরভাগ বিষয়ে একমত হতে সমর্থ হয়েছে দুই পক্ষ। প্রাথমিকভাবে এক মাস যুদ্ধবিরতির দিকে এখন নজর দেওয়া হচ্ছে। হামাস শুরুতে 'কয়েক মাস' যুদ্ধবিরতির দাবি করেছিল।

ছয়টি সূত্র জানান, এরপর হামাস শর্ত দেয়, স্থায়ী যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ঐক্যমত প্রতিষ্ঠা না হলে তারা এ ধরনের সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে রাজি হবে না।

রয়টার্সের সঙ্গে যারা কথা বলেছেন, তারা প্রায় সবাই নাম না প্রকাশের অনুরোধ করেছেন।

'প্যাকেজ চুক্তি' ও আগ্রাসন বন্ধের নিশ্চয়তা চাইছে হামাস

২০২১ সালের গাজার ড্রোন-ভিউ। ফাইল ছবি: রয়টার্স
২০২১ সালের গাজার ড্রোন-ভিউ। ফাইল ছবি: রয়টার্স

ইসরায়েল কয়েক পর্যায়ে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির আলোচনায় আগ্রহী হলেও, হামাস একটি 'প্যাকেজ চুক্তি' করতে চাচ্ছে, যার মাধ্যমে অদূর ভবিষ্যতে স্থায়ীভাবে ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ হবে।

বাকি সব জিম্মি মুক্তি দেওয়ার আগেই তারা এটি নিশ্চিত করতে চাইছে।

ইসরায়েল ও হামাস মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে আলোচনা করছে। দুই পক্ষের মধ্যে আপাতত সরাসরি কোন আলোচনা হচ্ছে না।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, হোয়াইট হাউস, কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মিশরের রাষ্ট্রীয় তথ্য বিভাগের সঙ্গে এসব বিষয়ে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হলেও তারা সাড়া দেয়নি।

মিশরের নিরাপত্তা বাহিনী সংশ্লিষ্ট দুই সূত্র জানান, হামাসকে এক মাসের যুদ্ধবিরতি ও পরবর্তীতে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির শর্তে রাজি করানোর প্রচেষ্টা চলছে। তবে হামাস এই চুক্তিতে রাজি হওয়ার আগে চুক্তির দ্বিতীয় পর্যায়ের (স্থায়ী যুদ্ধবিরতি) বিষয়ে নিশ্চয়তা চাইছে।

এই নিশ্চয়তা বা 'গ্যারান্টি' বিষয়ে বিস্তারিত জানাননি সূত্র।

সোমবার হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা সামি আবু জুহরি রয়টার্সকে জানান, হামাস বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী কিন্তু এখনো কোনো চুক্তি চূড়ান্ত হয়নি।

'আমরা সব ধরনের উদ্যোগ ও প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় আগ্রহী, কিন্তু যেকোনো চুক্তিতে যাওয়ার পূর্বশর্ত হল স্থায়ীভাবে (ইসরায়েলের) আগ্রাসন বন্ধ এবং গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীকে প্রত্যাহার করা'। 

বিকল্প প্রস্তাব

হামাসের শীর্ষ নেতা সিনওয়ার। ফাইল ছবি: রয়টার্স
হামাসের শীর্ষ নেতা সিনওয়ার। ফাইল ছবি: রয়টার্স

ইসরায়েলের একটি প্রস্তাব ছিল হামাসের ছয় নেতাকে গাজা থেকে সরিয়ে নিলে যুদ্ধ বন্ধ করা হবে।

তবে হামাসের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের সূত্রে জানান, সংগঠনটি এই প্রস্তাব নাকচ করেছে।

সূত্র জানান, ছয় জনের মধ্যে আছেন সিনওয়ার ও মুহাম্মাদ দেইফের মতো শীর্ষ নেতারা।

পাঁচ সূত্র জানান, হামাসকে 'ভেঙে দেওয়া' না হলে যুদ্ধ বন্ধ হবে না, এমন শর্ত দিয়েছে ইসরায়েল। তবে হামাসের নেতাদের নির্বাসনে পাঠানো হলে এই শর্ত পূরণ হবে কী না, তা জানাননি সূত্ররা।

যেভাবে এগিয়েছে আলোচনা

গাজায় মহড়ায় অংশ নিচ্ছেন হামাস যোদ্ধারা। ছবি: রয়টার্স
গাজায় মহড়ায় অংশ নিচ্ছেন হামাস যোদ্ধারা। ছবি: রয়টার্স

এই আলোচনা সম্পর্কে অবগত, এমন এক কর্মকর্তা জানান ২৮ ডিসেম্বর কাতারের মধ্যস্থতাকারীরা হামাস ও ইসরায়েলের কাছে একটি খসড়া চুক্তি পাঠিয়ে দুই পক্ষের দাবি ও শর্তগুলো জানতে চায়।

এ মাসের শুরুতে দুই পক্ষ এর জবাব দেয়। হামাস কয়েকমাসব্যাপী যুদ্ধবিরতি চায় আর ইসরায়েলের দাবি ছিল কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বাকি সব জিম্মির মুক্তি।

গত কয়েক সপ্তাহে মধ্যস্থতাকারীরা দুই পক্ষের কাছ থেকে এক মাসের যুদ্ধবিরতির নীতিগত সম্মতি আদায় করেছে। কর্মকর্তার মতে, মূল শর্তগুলো হল, ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি, সব জিম্মির মুক্তি, গাজায় আরও ত্রাণ প্রবেশ করতে দেওয়া ও ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি।

অপর এক সূত্র জানান, 'যেকোনো মুহূর্তে চুক্তি চূড়ান্ত হতে পারে'।

এক মার্কিন সূত্র জানান, হামাস নিশ্চয়তা চাইছে যে যুদ্ধবিরতি শেষে আবার যেনও ইসরায়েল হামলা শুরু না করে।

হামাস এই শর্ত বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্র, মিশয়র ও কাতারের কাছ থেকে গ্যারান্টি চাইছে। হামাসের উদ্বেগের কারণ হল, সব বেসামরিক জিম্মি মুক্তি পেলে ইসরায়েল আবারও হামলা শুরু করতে পারে। এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা জানান, এ ক্ষেত্রে সেনারা বন্দি থাকলেও ইসরায়েল তাতে খুব একটা চিন্তিত থাকবে না, তার মতে, নেতানিয়াহুর সরকারের জন্য এ মুহূর্তে প্রাধান্যের বিষয় বেসামরিক জিম্মিদের মুক্তি।

ধারণা করা হচ্ছে, এখনো ১৩২ জন জিম্মি হামাসের হাতে বন্দি আছেন। আইডিএফ নিশ্চিত করেছে, ২৮ জিম্মি ইতোমধ্যে নিহত হয়েছেন।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হামলা চালায় হামাস। এতে এক হাজার ২০০ জন নিহত হন এবং তাদের হাতে জিম্মি হন ২৪০ জন। এরপর প্রতিশোধমূলক ও নির্বিচার হামলা চালিয়ে গাজায় ২৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল।

Comments

The Daily Star  | English

How Islami Bank was taken over ‘at gunpoint’

Islami Bank, the largest private bank by deposits in 2017, was a lucrative target for Sheikh Hasina’s cronies when an influential business group with her blessing occupied it by force – a “perfect robbery” in Bangladesh’s banking history.

8h ago