উত্তর গাজার হাসপাতালগুলোতে অনাহারে মারা যাচ্ছে শিশু: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রধান

দক্ষিণ গাজার একটি দাতব্য লঙ্গরখানা থেকে খাবার সংগ্রহ করছে ফিলিস্তিনিরা। ছবি: এএফপি
দক্ষিণ গাজার একটি দাতব্য লঙ্গরখানা থেকে খাবার সংগ্রহ করছে ফিলিস্তিনিরা। ছবি: এএফপি

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি ত্রাণ মিশন উত্তর গাজার দুইটি হাসপাতাল পরিদর্শন করে এক মর্মান্তিক পরিস্থিতির মুখে পড়েছে। মিশনের সদস্যরা জানান, সেখানে শিশুরা অনাহারে মারা যাচ্ছে।

গতকাল সোমবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসাস জানান, গত সপ্তাহান্তে এজেন্সির কর্মকর্তারা উত্তর গাজার আল-আওদা ও কামাল আদওয়ান হাসপাতাল পরিদর্শনে যান।

'২০২৩ এর অক্টোবরের পর এটাই ছিল (এই হাসপাতালগুলোতে) আমাদের প্রথম সফর। আমরা উত্তর গাজায় নিয়মিত পরিদর্শনের চেষ্টা চালালেও এই উদ্যোগ সফল হয়নি', যোগ করেন তেদ্রোস।

সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে তিনি জানান, সেখানে সংস্থাটির কর্মীরা 'ভয়াবহ' পরিস্থিতির মুখে পড়েন। তিনি জানান, 'আল-আওদা (হাসপাতালের) পরিস্থিতি ছিল বিশেষভাবে উদ্বেগজনক, কারণ সেখানে একটি ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে।'

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়াসেস। ফাইল ছবি: এএফপি
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়াসেস। ফাইল ছবি: এএফপি

উত্তর গাজার একমাত্র শিশু হাসপাতাল কামাল আদওয়ানে রোগীদের ভিড় সামলাতে চিকিৎসাকর্মীরা হিমশিম খাচ্ছেন বলে জানান তেদ্রোস।

'সেখানে খাবার না পেয়ে ১০ শিশু মারা গেছে', যোগ করেন তিনি।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ত্রাণ-বঞ্চিত উত্তর গাজায় সব মিলিয়ে অন্তত ১৬টি শিশু অপুষ্টিজনিত কারণে মারা গেছে।

গত সপ্তাহে জাতিসংঘ হুশিয়ারি দেয়, হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান যুদ্ধের কারণে তৈরি হওয়া বৈরি পরিস্থিতিতে গাজা উপত্যকায় দুর্ভিক্ষ 'এড়ানোর উপায় নেই বললেই চলে।'

উত্তর গাজার দুই হাসপাতালে খাবারের ভয়াবহ সংকটের পাশাপাশি তেদ্রোস আরও সতর্ক করেন, 'নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা বিঘ্নিত হচ্ছে। বিশেষত শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে সব সময় বিদ্যুৎ না থাকায় রোগীদের জীবন বিপন্ন হচ্ছে।'

তেদ্রোস জানান, সপ্তাহান্তের এই মিশনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা উভয় হাসপাতালে নয় হাজার ৫০০ লিটার করে জ্বালানি তেল ও কিছু জরুরি চিকিৎসা সামগ্রী দিয়েছে।

'সবার জীবন বাঁচাতে যতটুকু উপকরণ দরকার, এটা তার একটি সামান্য অংশ মাত্র', যোগ করেন তেদ্রোস।

তিনি ইসরায়েলের প্রতি 'নিরাপদে ও নিয়মিত মানবিক ত্রাণ সরবরাহ' নিশ্চিতের আহ্বান জানান। 

উত্তর গাজার হাসপাতালে অপুষ্টিজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে শিশুরা। ছবি: রয়টার্স
উত্তর গাজার হাসপাতালে অপুষ্টিজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে শিশুরা। ছবি: রয়টার্স

তিনি বলেন, 'বেসামরিক মানুষ, বিশেষত, শিশুরা এবং স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের জন্য বড় আকারে সহায়তা প্রয়োজন।'

'গাজার সব রোগীর জন্য সবচেয়ে বড় ওষুধ হল শান্তি ও যুদ্ধবিরতি', যোগ করেন তিনি।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস। এতে এক হাজার ২০০ জন নিহত হন এবং হামাসের হাতে জিম্মি হন প্রায় ২৫৩ জন মানুষ। জিম্মিদের মধ্যে ১৩০ জন এখনো গাজায় আছেন এবং ৩১ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

উত্তর গাজার হাসপাতালে অপুষ্টিজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে শিশুরা। ছবি: রয়টার্স
উত্তর গাজার হাসপাতালে অপুষ্টিজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে শিশুরা। ছবি: রয়টার্স

এ ঘটনার পর থেকে প্রায় হামাসকে নির্মূলের লক্ষ্যে গাজায় পাঁচ মাস ধরে সর্বাত্মক ও নিরবচ্ছিন্ন হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। এই হামলায় নিহত অন্তত ৩০ হাজারে ৩২০ জন মানুষের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী নিহত শিশুর সংখ্যা প্রায় ১৩ হাজার ও নারীর সংখ্যা প্রায় আট হাজারের মতো। পাশাপাশি, আহত হয়েছেন অন্তত ৭১ হাজার ৫৩৩ জন।

Comments

The Daily Star  | English

Will resign if govt interferes in election process: CEC

He has issued a stern warning against any kind of irregularity ahead of the polls

43m ago