গাজা যুদ্ধে সীমা লঙ্ঘন করলেও ইসরায়েলকে ছেড়ে যাবে না যুক্তরাষ্ট্র: বাইডেন

গত মাসে বাইডেন আশা প্রকাশ করেছিলেন যে ইসরায়েল ও হামাস রমজান মাসের আগেই যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে সম্মত হবে। তবে গত সপ্তাহের শেষে মধ্যস্থতাকারীরা কোনো চুক্তি চূড়ান্ত না করেই মিশর ছেড়ে গেছেন, যার ফলে এ ধরনের চুক্তির আশা ফিকে হয়ে গেছে।
আটলান্টায় নির্বাচনী প্রচারণায় জো বাইডেন। ছবি: রয়টার্স
আটলান্টায় নির্বাচনী প্রচারণায় জো বাইডেন। ছবি: রয়টার্স

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সতর্ক করেন, গাজার যুদ্ধে ইসরায়েলের জন্য কিছু 'সীমা' নির্ধারণ করা আছে, যা তাদের লঙ্ঘন করা উচিত হবে না। তবে তিনি এটাও জানান যে যুক্তরাষ্ট্র কখনোই তাদের মিত্রকে ছেড়ে যাবে না।

আজ রোববার কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা এই তথ্য জানিয়েছে।

শনিবার মার্কিন গণমাধ্যম এমএসএনবিসিতে প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে বাইডেন আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নির্দেশে ইসরায়েল যদি রাফাহ শহরে হামলা চালায়, তাহলে তা হবে 'সীমা লঙ্ঘন' করা। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি 'ইসরায়েলকে ছেড়ে যাবেন না', যোগ করেন বাইডেন।

আগের বক্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এক বক্তব্যে বাইডেন বলেন, 'ইসরায়েলকে সুরক্ষিত রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে, ইসরায়েল সীমা লঙ্ঘন করলেও তাদেরকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করা হবে না, যাতে তারা আয়রন ডোমের মাধ্যমে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে পারে।' 

ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোমের প্রতি ইঙ্গিত করে বাইডেন এ কথা বলেন।

'তবে তিনি যদি সীমা লঙ্ঘন করেন'—এটুকু বলে বাইডেন তার বাক্য শেষ না করে বলেন, 'এই প্রশাসন চায় না আরও ৩০ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হোক।'

সাম্প্রতিক ইতিহাসে নেতানিয়াহুর সবচেয়ে কড়া সমালোচনা হিসেবে বাইডেন আরও বলেন, 'তিনি (নেতানিয়াহু) ইসরায়েলের উপকারের চেয়ে ক্ষতি বেশি করছেন' এবং 'তার উচিত গাজায় নিরীহ মানুষদের বাঁচানোর বিষয়টিতে আরও মনোযোগ দেওয়া'।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ফাইল ছবি: রয়টার্স
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ফাইল ছবি: রয়টার্স

ইসরায়েলের তথাকথিত হামাস নিধন অভিযানে শুরু থেকেই একনিষ্ঠ সমর্থন দিয়ে এসেছেন বাইডেন। তার এই অবস্থানে নিজ দল ও ভোটারদের কাছেও সমর্থন হারিয়েছেন তিনি।

তবে তার প্রশাসনের অন্যান্য অনেক সদস্য গাজায় নির্বিচার হামলা ও অসংখ্য বেসামরিক মানুষ নিহতের বিষয়টি নিয়ে নেতানিয়াহুর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন। এ ছাড়াও, গাজা উপত্যকায় মানবিক ত্রাণ প্রবেশে বাধা দেওয়ার কারণেও নেতানিয়াহুর সমালোচনা করেন তারা।

বাইডেন প্রশাসন বারবার নেতানিয়াহুকে অনুরোধ করেছে রাফাহর ১৩ লাখ বেসামরিক ফিলিস্তিনিকে নিরাপদ অবস্থানে সরিয়ে নেওয়ার আগে স্থল অভিযান শুরু না করতে।

বৃহস্পতিবার বাইডেন গাজায় একটি অস্থায়ী বন্দর ও জেটি স্থাপনের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। বাইডেনের স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, এই জেটির মাধ্যমে সমুদ্রপথে গাজাবাসীদের জন্য আরও ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে আসা যাবে। উল্লেখ্য, সড়কপথে ত্রাণ প্রবেশে বড় আকারে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ইসরায়েল।

এর আগে, গত মাসে বাইডেন আশা প্রকাশ করেছিলেন যে ইসরায়েল ও হামাস রমজান মাসের আগেই যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে সম্মত হবে। তবে গত সপ্তাহের শেষে মধ্যস্থতাকারীরা কোনো চুক্তি চূড়ান্ত না করেই মিশর ছেড়ে গেছেন, যার ফলে এ ধরনের চুক্তির আশা ফিকে হয়ে গেছে।

শনিবারের সাক্ষাৎকারে বাইডেন আরও জানান, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর পরিচালক বিল বার্নস এখনো মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থান করছেন এবং তিনি আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিষয়টি নিয়ে কাজ করে যাবেন।

বিল বার্নস ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রধান ডেভিড বারনিয়ার সঙ্গে শুক্রবার দেখা করেছেন। 

রাফাহর একটি ভবনে ইসরায়েলি বিমান হামলার পর ফিলিস্তিনিরা ধ্বংসযজ্ঞ পরিদর্শন করছে। ছবি: রয়টার্স
রাফাহর একটি ভবনে ইসরায়েলি বিমান হামলার পর ফিলিস্তিনিরা ধ্বংসযজ্ঞ পরিদর্শন করছে। ছবি: রয়টার্স

মোসাদ শনিবার জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা 'সব সময়ই চলছে'। তবে এখনো কোনো কিছু চূড়ান্ত হয়নি।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস। এতে এক হাজার ২০০ জন নিহত হন এবং হামাসের হাতে জিম্মি হন প্রায় ২৫৩ জন মানুষ। জিম্মিদের মধ্যে ১৩০ জন এখনো গাজায় আছেন এবং ৩১ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

এ ঘটনার পর থেকে প্রায় হামাসকে নির্মূলের লক্ষ্যে গাজায় পাঁচ মাস ধরে সর্বাত্মক ও নিরবচ্ছিন্ন হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৩০ হাজার ৮০০ মানুষ। নিহতের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

Comments