তিন বার ভেটোর পর এবার গাজায় যুদ্ধবিরতি চেয়ে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব
যুক্তরাষ্ট্র গাজা উপত্যকায় 'জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির' একটি খসড়া প্রস্তাব জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কাছে জমা দিয়েছে। এর আগে দেশটি একই ধরনের তিনটি প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছিল।
আজ বৃহস্পতিবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।
ব্লিঙ্কেন বলেন, 'আমরা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কাছে এমন একটি প্রস্তাব জমা দিয়েছি যাতে জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিতের জন্য গাজায় তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আমরা আশা করি অন্যান্য দেশ এতে সমর্থন দেবে।'
ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ বিষয়ে আলোচনার জন্য ব্লিঙ্কেন বুধবার সৌদি আরবে অবস্থান করছিলেন। তিনি স্থানীয় গণমাধ্যল আল হাদাথকে বলেন, 'আমি মনে করি, এটি একটি কঠোর বার্তা। একটি বলিষ্ঠ ইঙ্গিত।'
ব্লিঙ্কেন সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান ও দেশটির নেতা মোহাম্মাদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠক করেন। তার সফরসূচিতে মিশর ও ইসরায়েলও অন্তর্ভুক্ত আছে।
ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় মিত্র যুক্তরাষ্ট্র এর আগে একাধিকবার নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে অন্যান্য সদস্য দেশের আনা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে।
ব্লিঙ্কেন বলেন, 'আমরা অবশ্যই ইসরায়েলের পাশে আছি এবং তাদের আত্মরক্ষার অধিকারের প্রতিও আমরা সম্মান জানাই। কিন্তু একইসঙ্গে, যেসব বেসামরিক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন, যারা চরম দুর্দশায় আছেন—তাদের ওপরও আমাদের নজর দিতে হবে। এটাও গুরুত্বপূর্ণ। তাদেরকে প্রাধান্য দিতে হবে। বেসামরিক মানুষকে সুরক্ষিত রাখতে হবে এবং তাদের জন্য মানবিক সহায়তা জোগাড় করতে হবে।'
ফেব্রুয়ারিতে আলজেরিয়ার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ভেটো দেওয়ার পর থেকেই মার্কিন কর্মকর্তারা ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি, ইসরায়েলি জিম্মি ও ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
বুধবার সংশোধিত খসড়াটি নিরাপত্তা পরিষদে জমা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এই খসড়ার কপি এএফপি দেখেছে। সেখানে বলা হয়েছে, 'সব পক্ষের বেসামরিক ব্যক্তিদের সুরক্ষিত রাখতে, অত্যাবশ্যক মানবিক ত্রাণের সরবরাহ অব্যাহত রাখতে ও দুর্দশা দূর করার জন্য জিম্মিদের মুক্তি সাপেক্ষে তাৎক্ষনিক ও টেকসই যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন।'
এই খসড়া প্রস্তাবে ভোটগ্রহণ কবে বা কখন হবে, তা এখনো নির্ধারিত হয়নি।
ইতোমধ্যে কাতারে মধ্যস্থতাকারীরা আলোচনা চালাচ্ছেন। বুধবার তৃতীয় দিনের আলোচনা শেষেও যুদ্ধবিরতির চুক্তি নিয়ে তেমন কোনো অগ্রগতি দেখা দেয়নি।
কাতারের আলোচনায় রয়েছে যুদ্ধে সাময়িক বিরতি, জিম্মি ও বন্দিদের মুক্তি এবং গাজায় আরও বেশি পরিমাণে ত্রাণ সামগ্রী প্রবেশ।
ব্লিঙ্কেন এই আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন, 'আমরা কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। দুই পক্ষের চিন্তাধারার ব্যবধানগুলো কমে এসেছে এবং আমি মনে করি তারা একমত হবেন।'
'আমরা কঠোর পরিশ্রম করে কাতার, মিশর ও ইসরায়েলকে সঙ্গে নিয়ে আলোচনার টেবিলে একটি বলিষ্ঠ প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু হামাস তা গ্রহণ করেনি', যোগ করেন তিনি।
ব্লিঙ্কেন আরও বলেন, 'তারা অন্যান্য অনুরোধ, দাবি নিয়ে আসে। মধ্যস্থতাকারীরা এখন সেগুলো নিয়ে কাজ করছেন'।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অতর্কিত ও নজিরবিহীন হামলা চালায় হামাস। এতে এক হাজার ১৬০ জন নিহত হন এবং হামাসের হাতে জিম্মি হন প্রায় ২৫০ জন মানুষ। জিম্মিদের মধ্যে ১৩০ জন এখনো গাজায় আছেন এবং ৩৩ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
এ ঘটনার পর থেকে হামাসকে নির্মূলের লক্ষ্যে গাজায় প্রায় ছয় মাস ধরে সর্বাত্মক ও নিরবচ্ছিন্ন হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই হামলায় নিহত হয়েছেন প্রায় ৩২ হাজার মানুষ। নিহতের মধ্যে ১৩ হাজার শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। বাকিদের মধ্যে নারীর সংখ্যা বেশি।
Comments