যে কারণে চূড়ান্ত হচ্ছে না গাজার যুদ্ধবিরতি চুক্তি

বাম থেকে ডানে: হামাসের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা হানিয়ে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও গাজায় হামাস-প্রধান সিনওয়ার। ছবি: রয়টার্স/কোলাজ
বাম থেকে ডানে: হামাসের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা হানিয়ে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও গাজায় হামাস-প্রধান সিনওয়ার। ছবি: রয়টার্স/কোলাজ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপস্থাপন করা যুদ্ধবিরতির খসড়া প্রস্তাবের জবাব দিয়েছে হামাস। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হামাসের একটি দাবিতে অনড় থাকার কারণেই এখনো চূড়ান্ত হচ্ছে না এই চুক্তি।

আজ বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি গণমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল এই তথ্য জানিয়েছে।

খসড়া চুক্তি নিয়ে আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুই ইসরায়েলি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হামাস চাইছে এই চুক্তির অংশ হিসেবে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সম্মতি ও এটি বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা দেবে ইসরায়েল।

২৭ মে জো বাইডেনের উপস্থাপন করা ইসরায়েলি প্রস্তাবে এ বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। পরিবর্তে সেখানে বলা হয়েছে, দুই পক্ষ শুরুতে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি দেবে। এই যুদ্ধবিরতি চলাকালীন সময়য় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা শুরু হবে, যেটি এই চুক্তির দ্বিতীয় পর্যায়ে বাস্তবায়ন হওয়ার কথা।

প্রথম পর্যায়ের যুদ্ধবিরতির সময় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আলোচনা সফল না হলে প্রয়োজনে ছয় সপ্তাহ থেকে এর মেয়াদ আরও বাড়ানো যাবে। ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস প্রস্তাবের এই অংশটি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। বস্তুত, খসড়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে, হামাস যদি চুক্তির অঙ্গীকার না মানে, বা পরবর্তীয় পর্যায়ের শর্তে সম্মতি না দেয়, তাহলে ইসরায়েল আবারও হামলা শুরু করতে পারবে। এক আরব কূটনীতিক ও অপর এক সূত্র টাইমস অব ইসরায়েলকে এই তথ্য জানিয়েছে।

কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতাকারীদের কাছে জবাব দেওয়ার আগে আলোচনা করছেন হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ে ও ইসলামিক জিহাদের নেতা জিয়াদ আলি নাখালাজ। ছবি: রয়টার্স
কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতাকারীদের কাছে জবাব দেওয়ার আগে আলোচনা করছেন হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ে ও ইসলামিক জিহাদের নেতা জিয়াদ আলি নাখালাজ। ছবি: রয়টার্স

দুই কর্মকর্তা স্বীকার করেন, হামাসের জবাবে খসড়া প্রস্তাবে আরও কিছু পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। তবে তারা দাবি করেন, সেসব পরিবর্তন তেমন বড় কিছু নয় এবং ইসরায়েল যদি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির বিষয়টি মেনে নেয়, তাহলে সেগুলোরও সমাধান হয়ে যাবে।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বারবার বলেছেন, তিনি হামাসের প্রশাসনিক ও সামরিক সক্ষমতা নির্মূল করতে চান। এই দুই লক্ষ্য পূরণ হওয়ার আগে যুদ্ধের অবসান হবে এমন কোনো চুক্তিতে সম্মতি দেবেন না বলে জানিয়েছেন 'বিবি' নামেও পরিচিত নেতানিয়াহু।

তিনি জানিয়েছেন, খসড়া চুক্তির বিস্তারিত প্রকাশ করা না হলেও এটি এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে ইসরায়েলের লক্ষ্যগুলো পূরণ হয়।

তবে এ সপ্তাহের শুরুতে গণমাধ্যমে চুক্তির যতটুকু অংশ প্রকাশ করা হয়েছে, তা নেতানিয়াহুর এই দাবির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

দুই কর্মকর্তা জানান, হামাস স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে চাইছে, কারণ তাদের আশঙ্কা, প্রথম পর্যায়ের যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন করে কোনো এক অজুহাত দেখিয়ে আবারও যুদ্ধ শুরু করবেন নেতানিয়াহু।

উল্লেখ্য, খসড়া চুক্তি অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ে হামাসের হাতে বন্দি থাকা নারী, বয়স্ক ও অসুস্থ জিম্মিরা মুক্তি পাবেন।

৯ মাসের যুদ্ধে গাজার বেশিরভাগ অংশ ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। ছবি: রয়টার্স
৯ মাসের যুদ্ধে গাজার বেশিরভাগ অংশ ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। ছবি: রয়টার্স

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস। এএফপির সর্বশেষ হিসাব মতে, এই হামলায় এক হাজার ১৯৪ জন নিহত হন। একইসঙ্গে ২৫০ জনকে জিম্মি করে হামাস। গত নভেম্বরে বন্দি বিনিময়ের সময় মুক্তি পান ১০০ জিম্মি। বাকি জিম্মিদের মধ্যে ১১৬ জন এখনো গাজায় আছেন। ইসরায়েলের দাবি, অন্তত ৪০ জিম্মি নিহত হয়েছেন।

এই হামলার প্রতিশোধ হিসেবে সেদিনই গাজার বিরুদ্ধে নজিরবিহীন ও নির্বিচার বিমানহামলা শুরু করে ইসরায়েল। পরবর্তীতে স্থলবাহিনীও এতে যোগ দেয়। গত ৭ মাসে ফিলিস্তিনি নিহতের সংখ্যা অন্তত ৩৭ হাজার ১৬৪। আহতের সংখ্যা ৮৪ হাজার অন্তত ৮৩২। হতাহতের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

 

Comments

The Daily Star  | English

Police struggle as key top posts lie vacant

Police are grappling with operational challenges as more than 400 key posts have remained vacant over the past 10 months, impairing the force’s ability to combat crime. 

9h ago