ফ্রান্সব্যাপী ধর্মঘট

ফ্রান্সের ট্রেড ইউনিয়নগুলো দেশব্যাপী ধর্মঘট শুরু করেছে। গত এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতিতে বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবিতে আজ মঙ্গলবার এই ধর্মঘট শুরু হয়েছে।
প্যারিসের একটি স্কুলের সামনে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছেন। ছবি: রয়টার্স
প্যারিসের একটি স্কুলের সামনে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছেন। ছবি: রয়টার্স

ফ্রান্সের ট্রেড ইউনিয়নগুলো দেশব্যাপী ধর্মঘট শুরু করেছে। গত এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতিতে বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবিতে আজ মঙ্গলবার এই ধর্মঘট শুরু হয়েছে।

আজ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে।

ইতোমধ্যে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ফ্রান্সের তেল পরিশোধনাগারের কর্মীরা কর্মবিরতী পালন করছে, যার ফলে কার্যত দেশটিতে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। সঙ্গে আজ যোগ দিয়েছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গণপরিবহনের মতো সরকারি খাতের কর্মীরা।

ট্রেড ইউনিয়নের নেতারা আশাবাদী, সরকারের জোরপূর্বক কিছু কর্মীকে পেট্রল পাম্পে কাজ করতে পাঠানোর আদেশের কারণে আন্দোলনকারীরা আরও দৃড়প্রতিজ্ঞ থাকবেন।

উল্লেখ্য, ফরাসি সরকার বিশেষ ক্ষমতাবলে জরুরি পরিস্থিতিতে সেবা খাতে কর্মীদের 'রিকুইজিশন' করতে পারেন। সে সময় কর্মীরা ধর্মঘট করলেও কাজে যোগ দিতে বাধ্য থাকেন। বিশ্লেষকদের মতে, কর্মীদের দাবি নিয়ে আলোচনা ফলপ্রসূ হওয়ার আগেই রিকুইজিশনের সরকারি সিদ্ধান্তে হিতে বিপরীত হয়েছে।

ফরাসি সরকারের মুখপাত্র অলিভিয়ের ভেরান জানান, আজ মঙ্গলবার আরও কর্মীদের রিকুইজিশন দেওয়া হতে পারে, কারণ পেট্রল স্টেশনে জ্বালানির জন্য অপেক্ষমাণ গাড়ি চালকদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

গাড়ির পেট্রলের জন্য বিশাল লাইন। ছবি: রয়টার্স
গাড়ির পেট্রলের জন্য বিশাল লাইন। ছবি: রয়টার্স

ভেরান বলেন, 'যতজনকে প্রয়োজন, ততজনকেই রিকুইজিশন করা হবে। যখন বেতন নিয়ে এক ধরনের ঐক্যমতে পৌঁছানো গেছে, তখন পরিশোধনাগার বন্ধ করে রাখা কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়।'

বামপন্থী সিজিটি ইউনিয়ন টানা চতুর্থ সপ্তাহের জন্য ফরাসি জ্বালানি সংস্থা টোটালএনার্জিসের কর্মীদের কাজে যোগ না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। শুক্রবার ৭ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি ও একটি বোনাস দেওয়ার প্রস্তাবে একমত হয়েছে টোটালএনার্জিস ও মধ্যপন্থা অবলম্বনকারী কিছু ইউনিয়ন। তবে সিজিটি প্রতিষ্ঠানটির উচ্চ মুনাফা ও মূল্যস্ফীতির প্রেক্ষাপটে ১০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি হওয়া না পর্যন্ত ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

ইউরোস্টার জানিয়েছে ধর্মঘটের কারণে তারা লন্ডন ও প্যারিসের মধ্যে কিছু নির্ধারিত ট্রেনযাত্রা বাতিল করছে।

ফরাসি সরকারি রেল প্রতিষ্ঠান এসএনসিএফ জানায়, অভ্যন্তরীণ রুটে ৫০ শতাংশ কম ট্রেন চলাচল করলেও জাতীয় রেলপথের ওপর ধর্মঘটের কোনো প্রভাব নেই।

ধর্মঘটের রেশ তেলের পাশাপাশি পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতেও ছড়িয়ে পড়েছে।

সিজিটি ইউনিয়নের এক মুখপাত্র সোমবার জানান, ধর্মঘটের কারণে ১০টি ফরাসি পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়েছে। এছাড়াও, আরও ১৩টি পারমাণবিক চুল্লীতে রক্ষণাবেক্ষণের কাজে দীর্ঘসূত্রিতা দেখা দিয়েছে। সব মিলিয়ে, ফ্রান্সের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে ২ দশমিক ২ গিগাওয়াট।

পৌরসেবা কর্মীদের ইউনিয়নও মঙ্গলবার থেকে ধর্মঘটে যোগ দেওয়ার কথা জানিয়েছে। ফলে স্কুল ও বিভিন্ন সরকারি স্থাপনার সেবা বিঘ্নিত হতে পারে।

এমন এক সময় এই ধর্মঘট শুরু হয়েছে যখন ফ্রান্সের রাজনীতির অঙ্গনে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি চলছে।

রোববার দেশটির প্রধানমন্ত্রী এলিসাবেথ বোর্ন জানান, সরকার বিশেষ সাংবিধানিক ক্ষমতা ব্যবহার করে সংসদে ভোটগ্রহণ ছাড়াই ২০২৩ সালের বাজেট পাস করানোর চেষ্টা চালাবে।

আজ প্যারিসের বিভিন্ন অংশে বিক্ষোভ কর্মসূচীর ঘোষণা করেছে ফ্রান্সের বামপন্থী বিরোধীদলগুলো। 'ফ্রান্স আনবাওড' নামের দলটি দেশব্যাপী ধর্মঘটের ডাক দেয়।

রোববার এ বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার জয়ী অ্যানি এখঁনো ও ফ্রান্স আনবাওড দলের নেতা জঁ লুক মেলেনশ বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন।

রোববার এ বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার জয়ী অ্যানি এখঁনো ও ফ্রান্স আনবাওড দলের নেতা জঁ লুক মেলেনশ বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন। ছবি: এপি
রোববার এ বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার জয়ী অ্যানি এখঁনো ও ফ্রান্স আনবাওড দলের নেতা জঁ লুক মেলেনশ বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন। ছবি: এপি

সব মিলিয়ে বলা যায়, প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর সরকার খুব একটা ভালো অবস্থায় নেই।

 

Comments