ইরানে বিক্ষোভে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৭৬: মানবাধিকার সংস্থা

ইরানে পুলিশি হেফাজতে মাহসা আমিনির মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে আজ ১১ দিন ধরে বিক্ষোভ চলছে। একটি মানবাধিকার সংস্থার দাবি, ইরানের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের হাতে অন্তত ৭৬ জন নিহত হয়েছেন।
মাহসা আমিনির মৃত্যুতে বিক্ষোভ করছেন সিরিয়ার নারীরা। ছবি: রয়টার্স
মাহসা আমিনির মৃত্যুতে বিক্ষোভ করছেন সিরিয়ার নারীরা। ছবি: রয়টার্স

ইরানে পুলিশি হেফাজতে মাহসা আমিনির মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে আজ ১১ দিন ধরে বিক্ষোভ চলছে। একটি মানবাধিকার সংস্থার দাবি, ইরানের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের হাতে অন্তত ৭৬ জন নিহত হয়েছেন।

আজ বুধবার যুক্তরাজ্যের সংবাদ মাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

মাহসা আমিনির মৃত্যুতে তেহরানে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ। ছবি: রয়টার্স
মাহসা আমিনির মৃত্যুতে তেহরানে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ। ছবি: রয়টার্স

নরওয়ে ভিত্তিক সংগঠন ইরান হিউম্যান রাইটস (আইএইচআর) কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে, তারা বিক্ষোভ দমনে অসঙ্গতিপূর্ণ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে এবং তাজা গোলাবারুদ ব্যবহার করছে। 

রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যমে মৃতের সংখ্যা ৪১ দাবি করা হয়েছে। দাবি অনুযায়ী, বেশ কয়েকজন নিরাপত্তা কর্মীও 'দাঙ্গাকারীদের' হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন।

এছাড়াও, ২০ সাংবাদিক সহ শত শত মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আইএইচআরের পরিচালক মাহমুদ আমিরি-মোঘাদ্দাম বলেন, 'বিক্ষোভকারীদের নির্যাতন ও দুর্ব্যবহারের  গুরুতর ঝুঁকি রয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে তাজা গোলাবারুদের ব্যবহার একটি আন্তর্জাতিক অপরাধ।'

'বিশ্বকে অবশ্যই ইরানের জনগণের মৌলিক অধিকারের দাবি রক্ষা করতে হবে', যোগ করেন তিনি।

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় বিক্ষোভ দমনে কর্তৃপক্ষের সহিংস প্রতিক্রিয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংস্থাটি ইরানের জনগণের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করার অধিকারের প্রতি সম্মান দেখানোর অনুরোধ জানিয়েছে। 

মাহসা আমিনির গ্রেপ্তার ও মৃত্যু

মাহসা আমিনি। ছবি: রয়টার্স
মাহসা আমিনি। ছবি: রয়টার্স

১৭ সেপ্টেম্বর মাহসা আমিনির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পর সরকারবিরোধী বিক্ষোভের সূত্রপাত ঘটে। এ মুহূর্তে ইরানের ৮০টি শহরে এই বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে।

১৩ সেপ্টেম্বর ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের শহর সাকেজের বাসিন্দা কুর্দি বংশোদ্ভূত নারী মাহসা আমিনি (২২) রাজধানী তেহরানে বেড়াতে আসেন। সে সময় তাকে সঠিক নিয়মে হিজাব দিয়ে মাথার চুল ঢেকে না রাখার অভিযোগে ইরানের নৈতিকতা পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

তাকে একটি বন্দীশালায় নিয়ে যাওয়ার পর তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনি ৩ দিন কোমায় থেকে অবশেষে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

পুলিশের দাবি, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মাহসা প্রাণ হারিয়েছেন। কিন্তু মাহসার পরিবার এই দাবী নাকচ করে অভিযোগ করেছে, পুলিশ তাকে মারধর করে।

বিক্ষোভের সূত্রপাত

মাহসার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে দ্রুত নৈতিকতা পুলিশ ও হিজাব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়।

বিক্ষোভকারীরা পুলিশের মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। ছবি: রয়টার্স
বিক্ষোভকারীরা পুলিশের মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। ছবি: রয়টার্স

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভিডিওতে দেখা গেছে, নারীরা তাদের মাথার হিজাব পুড়িয়ে ফেলছেন এবং জনসম্মুখে মাথার চুল কেটে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। এ সময় 'নারী, জীবন, স্বাধীনতা' ও 'একনায়কের মৃত্যু হোক' শ্লোগান দিচ্ছিলেন তারা।

সোমবার তেহরান, ইয়াজদ, তাবরিজ, সানানদাজসহ আরও বেশ কিছু শহরে বিক্ষোভের সংবাদ পাওয়া গেছে। ২০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা ধর্মঘট পালন করেন এবং তাদের নিজ নিজ শ্রেণীকক্ষ থেকে বের হয়ে যান।

আইএইচআর জানিয়েছে, তারা সোমবার পর্যন্ত ১৪টি প্রদেশে ৭৬ জন বিক্ষোভকারীর মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে। মৃতদের মধ্যে ৬ নারী ও ৪ শিশু রয়েছে। তবে সংস্থাটি জানিয়েছে, ইন্টারনেটের ওপর আরোপ করা বিধিনিষেধের কারণে সংবাদ পেতে দেরি হচ্ছে।

সংস্থাটি আরও জানায়, তেহরানের উত্তরে মাজানদারান ও গিলান প্রদেশে ৩৫ জন নিহত হন। কুর্দি সংখ্যাগরিষ্ঠ উত্তর-পশ্চিমের প্রদেশ পশ্চিম আজারবাইজান, কেরমানশাহ, কুর্দিস্তান ও ইলহামে আরও ২৪ জন মারা যান।

আইএইচআর দাবি করেছে, তারা যেসব ভিডিও ও মৃত্যু সনদ দেখেছে, তাতে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে তাজা গুলি ছুঁড়ছেন। ইরানের কর্তৃপক্ষ এ দাবি অস্বীকার করেছে।

ইরানের কর্মকর্তারা মোট ১ হাজার ২০০ মানুষকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে।

দেশটির প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম রাইসি বলেন, 'দেশের নিরাপত্তা ও শান্তির বিপক্ষে যারা আছেন, তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নিতে হবে।'

Comments