তুরস্ক ও সিরিয়ার ভূমিকম্প

ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার হওয়া নবজাতককে দত্তক নিতে চাইছে হাজারো মানুষ

এক স্থানীয় সাংবাদিক জানান, জিন্দেরিস শহরের অন্তত ৯০ শতাংশ এলাকা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। ছবি: রয়টার্স
এক স্থানীয় সাংবাদিক জানান, জিন্দেরিস শহরের অন্তত ৯০ শতাংশ এলাকা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। ছবি: রয়টার্স

তুরস্ক-সিরিয়ার ভয়াবহ ভূমিকম্পের ঘটনায় অলৌকিকভাবে বেঁচে যায় একটি নবজাতক শিশু। উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে তাকে বের করে নিয়ে আসেন উদ্ধারকর্মীরা।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিবিসি জানায়, যখন 'আয়া' নামের মেয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়, সে তখনো তার মায়ের নাড়ীর সঙ্গে যুক্ত ছিল।

আরবি ভাষায় আয়া শব্দের অর্থ 'অলৌকিক ঘটনা'। জিন্দেরিস শহরে ভূমিকম্প আঘাত হানলে আয়ার মা, বাবা ও ৪ ভাই-বোন মারা যায়। আয়া এখন হাসপাতালে আছে।

তার চিকিৎসার দায়িত্বে আছেন শিশু চিকিৎসক হানি মারুফ। তিনি বলেন, 'সোমবার তাকে যখন নিয়ে আসা হলো, তখন খুব সে খুব করুণ অবস্থায় ছিল। তার সারা শরীর ফুলে গিয়েছিল এবং সর্বত্র আঘাতের চিহ্ন ছিল। ওর সারা শরীর ঠাণ্ডায় জমে ছিল এবং নিঃশ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছিল।'

তবে এখন আয়া স্থিতিশীল অবস্থায় আছে বলে জানান তিনি।

স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা জিন্দেরিস শহরে উদ্ধার কার্যক্রম চালাচ্ছেন। ছবি: এএফপি
স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা জিন্দেরিস শহরে উদ্ধার কার্যক্রম চালাচ্ছেন। ছবি: এএফপি

এদিকে আয়াকে উদ্ধারের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভাইরাল ওই ফুটেজে দেখা যায়, এক উদ্ধারকর্মী ধুলায় ধূসরিত সদ্যজাত শিশুকে নিয়ে একটি ভবনের ধসে পড়া ধ্বংসাবশেষ থেকে দৌঁড়ে বের হয়ে আসছেন।

আয়ার দূর-সম্পর্কের আত্মীয় খলিল আল-সুওয়াদি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তিনি সদ্যজাত শিশুটিকে সিরিয়ার আফরিন শহরে ড. মারুফের কাছে নিয়ে আসেন।

এ ঘটনার পর হাজারো মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ শিশুটিকে দত্তক নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।

টেলিভিশন অনুষ্ঠানেও অনেকে শিশুটির দায়িত্ব নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহের কথা জানান।

কুয়েটের টিভি অনুষ্ঠানের এক সঞ্চালক বলেন, 'আমি এই শিশুটিকে দত্তক নিতে এবং তার যত্ন নিতে প্রস্তুত। যদি আইনি প্রক্রিয়ায় তা করা সম্ভব হয়।'

শিশু আয়াকে দত্তক নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের ব্যবস্থাপক খালিদ আত্তিয়াহ। তিনি বলেন, 'বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমি অসংখ্য ফোন পাচ্ছি। অনেকেই শিশু আয়াকে দত্তক নেওয়ার ব্যাপারে অনুরোধ করছেন।'

'তবে এখনই আয়াকে কেউ দত্তক নিতে পারবেন না। যতক্ষণ না পর্যন্ত তার দূর সম্পর্কের আত্মীয় ফিরে আসছে, ততক্ষণ আমি আমার নিজের সন্তানের মতো তার দেখভাল করছি,' বলেন তিনি।

ড. আত্তিয়াহের একটি ৪ মাস বয়সী কন্যা সন্তান রয়েছে।

এ মুহূর্তে ড. আত্তিয়াহর স্ত্রী নিজ সন্তানের পাশাপাশি আয়াকেও মায়ের দুধ পান করাচ্ছেন।

গত এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক এই ভূমিকম্পে ভেঙে পড়া কয়েক হাজার ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে মরদেহ উদ্ধারে দিনরাত কাজ করছে উদ্ধারকারী দল।

এক স্থানীয় সাংবাদিক বিবিসিকে জানান, জিন্দেরিস শহরের পরিস্থিতি খুবই খারাপ। অসংখ্য মানুষ ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপা পড়ে আছে। শহরটির অন্তত ৯০ শতাংশ এলাকা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে বলে ধারণা করছেন তিনি।

 

Comments

The Daily Star  | English

IMF sets new loan conditions

Bangladesh must clear dues, hit steep revenue, reserve targets for next tranche

7h ago