ইউক্রেনের ৪ প্রদেশে রাশিয়ায় যোগদান প্রসঙ্গে গণভোট শুরু

রাশিয়া ও মস্কো সমর্থিত বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা ইউক্রেনের ৪ প্রদেশে আজ শুক্রবার রাশিয়ায় যোগ দেওয়ার বিষয়ে গণভোট শুরু হয়েছে।
দনেৎস্ক অঞ্চলের নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা ভোট গ্রহণের আগে একটি ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করেন। ছবি: রয়টার্স
দনেৎস্ক অঞ্চলের নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা ভোট গ্রহণের আগে একটি ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করেন। ছবি: রয়টার্স

রাশিয়া ও মস্কো সমর্থিত বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা ইউক্রেনের ৪ প্রদেশে আজ শুক্রবার রাশিয়ায় যোগ দেওয়ার বিষয়ে গণভোট শুরু হয়েছে।

আজ শুক্রবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে।

এই প্রদেশের রুশ-নিযুক্ত নেতারা মঙ্গলবার ভোটগ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানান। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এই গণভোট উল্লেখিত প্রদেশগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ার অংশ হিসেবে ঘোষণার প্রক্রিয়ার অংশ। ইউক্রেন ও দেশটির মিত্ররা পরিষ্কার করেছেন, তারা গণভোটের ফল মেনে নেবেন না।

যেভাবে ভোটগ্রহণ করা হচ্ছে

ইউক্রেনের ১৫ শতাংশ ভূখণ্ড লুহানস্ক, দোনেৎস্ক, খেরসন ও ঝাপোরিঝঝিয়া প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত। শুক্রবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত এ এলাকাগুলোতে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে।

রুশ রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ মাধ্যম তাস জানিয়েছে, 'সময় স্বল্পতাও কারিগরি সুবিধার অভাবে ইলেক্ট্রনিক ভোটের পরিবর্তে প্রথাগত কাগজের ব্যালট ভিত্তিক ভোট অনুষ্ঠিত হবে।'

প্রতিবেদনে আরও জানা গেছে, কর্তৃপক্ষ প্রথম ৪ দিন ভোটারদের দরজায় দরজায় যেয়ে ভোট সংগ্রহ করবে। শুধুমাত্র শেষদিন ভোটকেন্দ্রগুলো খোলা থাকবে।

দনেৎস্কের প্রধান নির্বাচন কমিশনার ভ্লাদিমির ভিতস্কি ভোটগ্রহণের আগে একটি ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করছেন। ছবি: রয়টার্স
দনেৎস্কের প্রধান নির্বাচন কমিশনার ভ্লাদিমির ভিতস্কি ভোটগ্রহণের আগে একটি ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করছেন। ছবি: রয়টার্স

কেন এই ভোটের আয়োজন

দীর্ঘ ৭ মাস প্রতিরক্ষামূলক মনোভাব দেখানোর পর এ মাসের শুরু থেকে ইউক্রেন বড় আকারে পালটা আক্রমণ শুরু করেছে এবং বেশ কিছু দখলকৃত ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কাছে ফিরিয়ে নিয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, গণভোটের বিষয়টি মস্কো-সমর্থিত কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েক মাস ধরে আলোচনা করলেও ইউক্রেনের সাম্প্রতিক বিজয়ের ঘটনায় এ সিদ্ধান্ত তরান্বিত হয়েছে।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মঙ্গলবার ইউক্রেনে যুদ্ধ করার জন্য ৩ লাখ রিজার্ভ সেনাসমাবেশের ঘোষণা দেন। এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, রাশিয়া আবারও চলমান সংঘর্ষে এগিয়ে থাকার চেষ্টা করছে।

গণভোট প্রসঙ্গে রাশিয়ার যুক্তি, এটি এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের মত প্রকাশের সুযোগ।

রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ এ সপ্তাহে বলেন, 'অভিযানের একদম শুরু থেকে আমরা জানিয়েছি, বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দাদের তাদের নিজেদের ভাগ্য সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ এবং বর্তমান পরিস্থিতি এটাই নিশ্চিত করছে যে তারা তাদের নিজেদের ভাগ্য নিজেরাই নির্ধারণ করতে চান।'

গণভোট প্রসঙ্গে ইউক্রেন ও মিত্রদের মনোভাব

ইউক্রেন জানিয়েছে, রাশিয়া এই গণভোটের ফলকে জনগণের কণ্ঠ হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছে। পরবর্তীতে তারা এটাকে অযুহাত হিসেবে দেখিয়ে এ অঞ্চলগুলোকে নিজেদের ভূখণ্ডের অংশ করে নেবে। একইভাবে ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া অঞ্চলকেও রাশিয়া দখল করে নেয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখনও ক্রিমিয়াকে আনুষ্ঠানিকভাবে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি।

দনেৎস্কের একটি ভোটকেন্দ্র। ছবি: রয়টার্স
দনেৎস্কের একটি ভোটকেন্দ্র। ছবি: রয়টার্স

বিশেষজ্ঞরা ভাবছেন, গণভোটের মাধ্যমে এই ৪ অঞ্চলকে নিজ ভূখণ্ডের অংশ করে নেওয়ার পর যুদ্ধের তীব্রতা বাড়াতে পারে রাশিয়া। পুতিন বুধবার জানান, রাশিয়া নিজেকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য তাদের হাতে থাকা 'সব ধরনের উপায়' ব্যবহার করতে পারে। পশ্চিমের বিশ্লেষকদের মতে, এটি পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ইঙ্গিত।

পুতিন আরও বলেন, 'এটা কোনো ফাঁকা বুলি নয়।'

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামের এক পোস্টে রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ জানান, 'রুশ ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ একটি অপরাধ এবং এর বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার জন্য সব ধরনের ক্ষমতা ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে।'

আসন্ন গণভোটে রাশিয়ার পক্ষে ফলাফল আসার বিষয়টিকে অবশ্যম্ভাবী ভাবছেন সংশ্লিষ্টরা। ২০১৪ সালের গণভোটের ফল অনুযায়ী, ৯৭ শতাংশ বাসিন্দা চান ক্রিমিয়া রাশিয়ার সঙ্গে যোগ দিক। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই গণভোটকে 'সাজান' বলে অভিহিত করে এবং এর প্রতি নিন্দা জানায়।

লুহানস্কের গভর্নর সের্হেই গাইদাই বলেন, 'যদি এ সব অঞ্চলকে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়, তাহলে এ অঞ্চলের প্রতি যেকোনো আক্রমণকে তারা রাশিয়ার ওপর সরাসরি হামলা হিসেবে অভিহিত করবে এবং কোনো ধরনের বাধ্যবাধকতা ছাড়াই যুদ্ধ করতে পারবে।

বিশ্ব নেতাদের নিন্দা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ এই গণভোটের নিন্দা জানিয়েছেন। এছাড়াও ন্যাটো, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইউরোপের নিরাপত্তা ও সহযোগিতা সংস্থাও (ওএসসিই) তাদের আপত্তির কথা জানিয়েছে।

এই নির্বাচনে কোনো নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক থাকছেন না।

ইউক্রেন জানিয়েছে, এই গণভোট এটাই নির্দেশ করছে, যে রাশিয়া এখন ভীত।

বৃহস্পতিবার দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, 'রুশ নেতৃবৃন্দের যেকোনো সিদ্ধান্ত ইউক্রেনের কোন কিছুর পরিবর্তন করছে না।'

'আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো আমাদের সামনেই আছে। এগুলো হচ্ছে, দেশকে স্বাধীন করা, আমাদের জনগণের সুরক্ষা ও এসব কাজ শেষ করার জন্য সারা বিশ্বের কাছ থেকে সহায়তা জোগাড় করা', যোগ করেন জেলেনস্কি।

পুতিন জানিয়েছেন, রাশিয়া একটি 'বিশেষ সামরিক অভিযান' চালাচ্ছে, যার লক্ষ্য ইউক্রেনের সামরিক সক্ষমতা খর্ব করা, দেশটিকে উগ্র জাতীয়তাবাদ থেকে মুক্ত করা এবং রাশিয়াকে ন্যাটোর হাত থেকে রক্ষা করা।

কিয়েভ এবং পশ্চিমের মতে, রাশিয়া বিনা উসকানিতে এই অভিযান শুরু করেছে এবং তাদের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদী মনোভাবের মাধ্যমে এই দেশটিকে আবারও দখল করে নেওয়া, যাদের স্বাধীন হওয়ার ইচ্ছের কারণে ১৯৯১ সালে রুশ আধিপত্যের অবসান হয় এবং তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হয়।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

10h ago