রাশিয়া-ইউক্রেন: ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও প্রতিরোধের নেপথ্য কৌশল

রুশ ক্ষেপনাস্ত্র হামলায় কিয়েভের একটি দালান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ছবি: রয়টার্স
রুশ ক্ষেপনাস্ত্র হামলায় কিয়েভের একটি দালান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ছবি: রয়টার্স

ইউক্রেন যুদ্ধে স্থলভাগের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও ইউক্রেনের এ হামলা প্রতিরক্ষার সক্ষমতা।

চলতি মাসে ৯ বার রাজধানী কিয়েভসহ ইউক্রেনের কয়েকটি এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে রাশিয়া।  ইউক্রেনের দাবি এসব হামলা তারা প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু রাশিয়া হামলা অব্যাহত রেখেছে। একই সঙ্গে বহুমাত্রিক হামলা করছে রাশিয়া। ব্যবহার করছে অত্যাধুনিক ক্ষেপনাস্ত্র।

আজ বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম বিবিসি কিয়েভের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, সর্বশেষ হামলায় ইউক্রেনের বন্দর নগরী ওদেসায় অন্তত ১ ব্যক্তি নিহত ও ২ জন আহত হয়েছেন। যথারীতি, কিয়েভ কতৃপক্ষ সকল রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করার দাবি করেছে।

এর আগে সিএনএন জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হওয়া দিনভর হামলায় মোট ১৮টি ক্ষেপণাস্ত্র ও অসংখ্য ড্রোন ব্যবহার করেছে রাশিয়া।

কিয়েভের দাবি, তারা তেমন কোনো ক্ষতির স্বীকার হয়নি এবং রাশিয়ার কোনো অস্ত্রই লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে পারেনি। অপরদিকে রাশিয়া দাবি করেছে, হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র কিনঝালের আঘাতে তারা যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, ধ্বংস হয়নি প্যাট্রিয়ট— সামান্য ক্ষতি  হয়েছে, যা মেরামত করা সম্ভব।

উভয়পক্ষের দাবি কিছু পরিমাণে অতিরঞ্জিত হলেও বিশেষজ্ঞদের মতে, রাশিয়ার 'অস্বাভাবিক' ও তীব্র হামলার মুখে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কাছ থেকে পেয়েছে, যা সীমিত। রাশিয়ার কৌশল অনবরত ক্ষেপনাস্ত্র ও ড্রোন হামলা করে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মজুদ শেষ করে ফেলা। সেকারণে এত ঘনঘন হামলা চালাচ্ছে মস্কো।

মঙ্গলবারের হামলায় রাশিয়া ড্রোনের পাশাপাশি যুদ্ধবিমান থেকে কিনঝাল ক্ষেপণাস্ত্র, কৃষ্ণ সাগর থেকে কালিবার ক্ষেপণাস্ত্র ও ভূমি থেকে ইসকান্দার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, যুদ্ধ যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে শেষ পর্যন্ত যার হাতে গোলাবারুদের মজুদ থাকবে, সে পক্ষই সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে। সেভাবেই আগাচ্ছে ২ পক্ষ।

রাশিয়া মনে করছে, বারবার হামলা চালিয়ে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল ও অকেজো করে ফেলবে। আর ইউক্রেন ভাবছে, পশ্চিমা মিত্রদের কাছ থেকে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও ক্ষেপণাস্ত্রের জোগান অব্যাহত থাকবে। মোটা দাগে, এটাই ২ দেশের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও তা প্রতিহত করার কৌশল।

পশ্চিমা বিশ্লেষকদের মতে, এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে রাশিয়া, কারণ নানা বিধি-নিষেধের কারণে তারা নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির সব ধরনের উপকরণ পাচ্ছে না এবং এক পর্যায়ে তাদের মজুত শেষ হয়ে আসবে। অপরদিকে, মিত্রদের কাছ থেকে নিয়মিত অস্ত্র ও গোলাবারুদের জোগান পাচ্ছে কিয়েভ। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য উভয় দেশই ইউক্রেনকে আরও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। যদিও পশ্চিমা বিশেষজ্ঞদের এ বিশ্লেষণের বিশ্বাসযাগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, পশ্চিমারা রাশিয়ার সামরিক শক্তি ও অস্ত্র উৎপাদন সক্ষমতা বিষয়ে যে প্রচারণা চালায়, তা আসলে এক ধরণের প্রপাগান্ডা। রাশিয়ার সামরিক শক্তি ও অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা বিষয়ে পশ্চিমারা যে ধারণা দেয়, তারচেয়ে বহুগুণ বেশি। তাদের মতে যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে উভয় দেশই বিপদে পড়বে। তবে ইউক্রেনের বিপদ রাশিয়ার চেয়ে বেশি। কারণ অস্ত্রের জন্যে ইউক্রেনকে অন্যদের উপর নির্ভর করতে হবে, রাশিয়া যা নিজে উৎপাদন করতে সক্ষম।

 

Comments

The Daily Star  | English

Govt publishes gazette of 1,558 injured July fighters

Of them, 210 have been enlisted in the critically injured "B" category, while the rest fall under the "C" category of injured fighters

5h ago