তৃতীয় চার্লসের রাজ্যাভিষেক ঘিরে যত আয়োজন
ব্রিটেনের রাজপরিবারের ছোটখাটো প্রায় সব উৎসবই বিশ্বজুড়ে সাড়া ফেলে দেয়, আর এ তো কথা হচ্ছে তৃতীয় চার্লসের রাজ্যাভিষেক নিয়ে– জাঁকজমকের ডামাডোলটা এবার তাই একটু বেশিই। আজ ৬ মে লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবিতে আয়োজন করা হবে অনুষ্ঠানটির।
চার্চভিত্তিক ধর্ম ও সমাজব্যবস্থার প্রতীকী অবস্থান হিসেবে চলমান এই পরম্পরয়ায় সহধর্মিণী ক্যামিলার পাশে থেকে চার্লস রাজমুকুট গ্রহণ করবেন। রাজপরিবারের হিসাবনিকাশে চোখ রাখলে দেখা যায়, ১০৬৬ সাল থেকে শুরুর পর এটি হতে যাচ্ছে ৪০তম রাজতন্ত্রের উত্থান। তাই আধুনিক সময়ের উদযাপনের আমেজে থাকবে সহস্র বছরের বহু রীতিনীতিও।
মূল অনুষ্ঠানটি শুরু হবে সকাল ১১টার দিকে এবং এর কিছুক্ষণ আগেই আগমন ঘটবে রাজপরিবারের মূল সদস্য এবং স্বয়ং রাজার– যিনি নিজেই বেছে নিয়েছেন তার রাজ্যাভিষেকের আয়োজনসঙ্গীত।
যেখানে আছে মোট ১২টি নতুন গান। রাজার বাবা যুবরাজ ফিলিপের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা রাখতে সেকেলে গ্রিক সঙ্গীতও বাজানো হবে।
আনুষঙ্গিক অন্যান্য অনুষ্ঠান
মূল অনুষ্ঠান আজ হলেও এর আগে-পরে অনেকটা সময়জুড়েই চলবে উদযাপন। সপ্তাহান্তে, মে মাসের ৭ তারিখ উইন্ডসোর প্রাসাদে একটি বিশাল কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছে, যাতে থাকবেন কেটি পেরি, লিওনেল রিচির মতো বড় বড় সব শিল্পী।
অনুষ্ঠানের দুদিন পর, অর্থাৎ ৮ মে ইংল্যান্ডে ছুটির দিনও ঘোষণা করা হয়েছে। শুক্র ও শনিবারে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের বিভিন্ন ক্লাব-পাব-বার খোলা থাকবে বাড়তি ২ ঘণ্টা, যাতে সবাই রাজ্যাভিষেকের আনন্দে নিজেদের সময়টা আরও বেশি উপভোগ করতে পারেন। এই একটি অনুষ্ঠানের জের ধরে ছোট-বড় সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।
শুধু স্থানীয় জনগণই নয়, বিশ্ববাসীকে এই উদযাপনের সঙ্গে যুক্ত রাখতে বিবিসি ওয়ান ও বিবিসি বেতারে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে এই অনুষ্ঠানটি।
ব্যয়বহুল উদযাপন
এই বহুলচর্চিত রাজ্যাভিষেকটি হবে রাজকীয় সব মুকুটের সমাবেশ। যে মুকুট রাজার মাথায় চড়বে এই বিশেষ দিনে, তাও কম বিশেষ নয়– একেবারে ১৭ শতাব্দীর সেন্ট অ্যাডওয়ার্ডের মুকুট। শুধু রাজ্যাভিষেকের মুহূর্তটিতেই এর ব্যবহার করা হবে এবং ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে থেকে বেরিয়ে যাবার সময়ে রাজা পরবেন ওজনে হালকা ইম্পেরিয়াল স্টেট ক্রাউন। রাজার সহধর্মিণী, কুইন কনসোর্ট ক্যামিলাকে পরানো হবে রানি মেরির মুকুট।
এই উদযাপনের সব খরচ বহন করবে যুক্তরাজ্য সরকার এবং সত্যি বলতে, এই খরচটা একেবারেই কম নয়। বিশ্বজুড়ে এই সময়ে যখন সাধারণ মানুষেরা জীবনযাত্রা নিয়ে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি, তখন একটু সংবেদনশীল হওয়াটাও তো দরকার। তাই এই অনুষ্ঠানটিকে যুক্তরাজ্যের সরকারপক্ষ থেকে বিশ্ববাসীর কাছে এক বিশাল কূটনৈতিক সম্ভাবনা হিসেবে উপস্থাপনা করা হচ্ছে।
এই রাজ্যাভিষেক ঘিরে আমজনতার আগ্রহ প্রচুর। তাই সরাসরি দেখতে পাবার সুযোগ হারাতে চাইবেন না অনেকেই। রাজ্যাভিষেক আনুষ্ঠানের সম্প্রচার করা হবে যেখানে, সেখানে 'আগে এলে আগে পাবেন' ভিত্তিতে দর্শক-শ্রোতার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা হবে। এসব স্থানের মধ্যে রয়েছে লন্ডনের হাইড পার্ক ও গ্রিন পার্ক। ধারণক্ষমতা ফুরিয়ে গেলে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। এ ছাড়া অভিজ্ঞ সামরিক সদস্য, সমাজকর্মীসহ আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য বাকিংহাম প্রাসাদের বাইরের জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সকলকেই যে বেশ বেছে আনা হবে, এতে সন্দেহ নেই।
যুক্তরাজ্যের এই বহুল প্রতীক্ষিত রাজ্যাভিষেক উৎসবে ক্যান্টারবেরির আর্চবিশপ মুকুট পরিয়ে দেবেন রাজপরিবারের নতুন মুখপাত্র, রাজা তৃতীয় চার্লসকে। পাশে থাকবে ৭০০ বছর পুরনো এক সিংহাসন। ইংল্যান্ডের চার্চ, তার নিয়ম-নীতি, আইন-কানুন ও সার্বভৌম বিশ্বাসবোধকে সমুন্নত রাখতে রাজা নেবেন নতুন শপথ। সাধারণ পোশাক ছেড়ে রাজা গায়ে জড়াবেন এক স্বর্ণবস্ত্র, বিশেষ তেলে রাজটিকা পরবেন– যাতে থাকবে না কোনো ধরনের প্রাণিজ অংশবিশেষ। বহু বছরের ইতিহাস পেরিয়ে গণতন্ত্র কিংবা সমাজতন্ত্রের স্লোগান দেওয়া এই পৃথিবীতে ভৌগোলিক হিসেবে অদূরেই ঘটে যাবে এক রাজতন্ত্রের উদযাপন। রূপকথা নয়, বাস্তবেই।
তথ্যসূত্র: বিবিসি, দ্য কনভারসেশন
Comments