‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ’ ঠেকাতে যে তথ্য গোপন করেছিলেন আইজেনহাওয়ার

এটি ‘টপ গান’ সিনেমার কোনো দৃশ্য নয়। এমনকি ঘটনাটি ঘটেছিল ‘টপ গান’-অভিনেতা টম ক্রুজের জন্মেরও ১০ বছর আগে, ১৯৫২ সালের নভেম্বরে ও কোরীয় উপদ্বীপের ইয়ালু নদীর কাছে। এ ঘটনার নায়ক বৈমানিক রয়েস উইলিয়ামস।
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ
রয়েস উইলিয়ামস। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

এটি 'টপ গান' সিনেমার কোনো দৃশ্য নয়। এমনকি ঘটনাটি ঘটেছিল 'টপ গান'-অভিনেতা টম ক্রুজের জন্মেরও ১০ বছর আগে, ১৯৫২ সালের নভেম্বরে ও কোরীয় উপদ্বীপের ইয়ালু নদীর কাছে। এ ঘটনার নায়ক বৈমানিক রয়েস উইলিয়ামস।

এখন উইলিয়ামসের বয়স ৯৭ বছর। কিংবদন্তিতে পরিণত হওয়া সেই সাবেক মার্কিন নেভাল অ্যাভিয়েটর জানিয়েছেন সেদিনের সেই ভয়ঙ্কর ঘটনার কথা, যা বিশ্ববাসীকে 'তৃতীয় মহাযুদ্ধে'র দিকে প্রায় ঠেলে দিয়েছিল।

গতকাল শুক্রবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়ে বলা হয়, ক্যালিফোর্নিয়ায় উইলিয়ামসকে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান 'নেভি ক্রস' দেওয়া হয়েছে।

গতকালের সেই অনুষ্ঠানে নেভি সেক্রেটারি কার্লোস দেল টোরো বলেন, 'এটা পরিষ্কার যে উইলিয়ামস যা করেছিলেন তা সত্যিই অসাধারণ ছিল। এ কারণেই তাকে এ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে।'

সেদিনের সেই ২৭ বছর বয়সী উইলিয়ামসের সঙ্গে আরও ৩ পাইলটকে যুদ্ধবিমানসহ উত্তর কোরিয়া ও চীনের মাঝমাঝি ইয়ালু নদীর কাছে নজরদারির জন্য পাঠানো হয়েছিল। এর উত্তরপূর্বে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের রুশ প্রজাতন্ত্রের সীমান্ত। কোরীয় যুদ্ধে উত্তর কোরিয়াকে সমর্থন দেয় সোভিয়েত ইউনিয়ন।

১৯৫২ সালের ১৮ নভেম্বর উইলিয়ামস তার ৩ সহকর্মীর সঙ্গে আকাশে উড়েছিলেন এফ৯এফ প্যানথার যুদ্ধবিমান নিয়ে। মার্কিন নৌবাহিনী কোরীয় যুদ্ধে প্রথম এ ধরনের যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে।

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ
এফ৯এফ প্যানথার যুদ্ধবিমান। ছবি: ইউএস নেভির সৌজন্যে

উত্তর কোরিয়ার উপকূল থেকে প্রায় ১০০ মাইল দূরে জাপান সাগর হিসেবে পরিচিত পূর্ব সাগরে টহল দেওয়া ইউএসএস অরিসকানি যুদ্ধবিমান বহনকারী জাহাজ থেকে উড়েছিলেন উইলিয়ামস।

যখন মার্কিন নৌবাহিনীর ৪ যুদ্ধবিমান টহলের জন্য আকাশে উড়াল দেয় তখন তাদের দলনেতা উড়োজাহাজের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তার উইংম্যানকে নিয়ে রণতরীতে ফিরে আসেন। আকাশে থাকেন উইলিয়ামস ও তার উইংম্যান।

আচমকা তারা দেখতে পান সোভিয়েত ইউনিয়নের ৭টি মিগ-১৫ যুদ্ধবিমান মার্কিন টাস্ক ফোর্সের দিকে ধেয়ে আসছে। উইলিয়ামস ও তার উইংম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয় তারা যেন মিগ ও মার্কিন টাস্ক ফোর্সের মাঝখানে অবস্থান নেন।

সেদিনের স্মৃতিচারণ করে উইলিয়ামস বলেন, এমন পরিস্থিতিতে ৪টি মিগ যুদ্ধবিমান থেকে তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়।

এরপর তার ছোড়া গোলা গিয়ে লাগে এক মিগের 'লেজে'।

এক পর্যায়ে মার্কিন কমান্ডাররা উইলিয়ামসকে নির্দেশ দেন সোভিয়েতদের সঙ্গে লড়াইয়ে না যেতে।

উইলিয়ামস জানতেন সোভিয়েত যুদ্ধবিমানগুলো তার যুদ্ধবিমানের চেয়ে দ্রুতগামী। তাই পালাতে গেলে তারা তাকে ধরে ফেলবে।

উইলিয়ামসের ভাষায়, 'সে সময় মিগ-১৫ ছিল বিশ্বের সবচেয়ে সেরা যুদ্ধবিমান। আমার যুদ্ধবিমানটি ভূমি থেকে আকাশে যুদ্ধ করতে পারদর্শী, তবে ডগ ফাইটের জন্য নয়।'

তিনি আরও বলেন, 'আমার যুদ্ধবিমানটি স্বয়ংক্রিয় ছিল। মিগও তাই। আমার উন্নত প্রশিক্ষণ আছে। তাদেরও আছে। তবে হঠাৎ তারা ভুল করে বসে।'

উইলিয়ামস দেখতে পান একটি মিগ তার দিকে আসছে। কিন্তু সেখান থেকে কেউ গুলি ছুড়ছেন না। তিনি বুঝতে পারেন, তার ছোড়া গোলায় সেই মিগের পাইলট নিহত হয়েছেন।

এমন সময় ডান পাশ দিয়ে তার সামনে এগিয়ে আসে আরও একটি মিগ। গোলা ছোড়েন উইলিয়ামস। থেকে যায় আরও একটি মিগ। উইলিয়ামস তখন যুদ্ধবিমান নিয়ে আকাশে 'রোলার কোস্টারে'র মতো উপর-নিচ হয়ে উড়তে থাকেন। আর সেই মিগ থেকে তাকে লক্ষ্য করে ক্রমাগত গুলি ছোড়া হয়।

এমন পর্যায়ে 'যুদ্ধে' যোগ দেন উইলিয়ামের উইংম্যান। পতন হয় সেই মিগেরও।

ইউএস নেভি মেমোরিয়ালের ওয়েবসাইটের বরাত দিয়ে সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, সেদিন ৩০ মিনিটে উইলিয়ামস ২০ মিলিমিটারের ৭৬০ রাউন্ড কামানের গোলা ছুড়েছিলেন।

সোভিয়েত পাইলটদের গুলিতে উইলিয়ামসের যুদ্ধবিমানের রাডার ও উইং কন্ট্রোল সারফেস অকেজো হয়ে গিয়েছিল।

উইলিয়ামস যখন তার যুদ্ধবিমান নিয়ে বিমানবাহী রণতরীতে ফিরে আসেন তখন তার সহকর্মীরা সেই যুদ্ধবিমানের গায়ে ২৬৩টি ছিদ্র পেয়েছিলেন।

নেভি মেমোরিয়ালের ওয়েবসাইটে আরও বলা হয়, উইলিয়ামসের যুদ্ধবিমানটির অবস্থা এতই খারাপ ছিল যে, তা সাগরে ফেলে দেওয়া হয়।

উইলিয়ামসের এই বীরত্বের কাহিনি শুনেছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোয়াইট ডি আইজেনহাওয়ার। তখন উইলিয়ামসকে বলা হয় বিষয়টি গোপন রাখতে। কেননা, এই ঘটনা 'তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ' উসকে দিতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English
World Bank’s senior official speaks on lending culture in Bangladesh

Banks mostly gave loans to their owners rather than creditworthy borrowers

Bangladesh’s banking sector was not well-managed in recent years. Banks mostly gave loans to their owners, rather than to creditworthy entities. Consequently, several banks are now in difficulty.

13h ago