এক গাপটিলের সঙ্গেই পেরে উঠল না বাংলাদেশ

Martin Guptill
ছবি: এএফপি

ভেন্যু বদলেছে, আবহাওয়ার পরিস্থিতি বদলেছে। কিন্তু ম্যাচের দৃশ্যপটে বদল খুব সামান্য। খানিকটা এদিক সেদিক করে হুবহু যেন আগের ম্যাচেরই ছবি। নেপিয়ার থেকে ক্রাইস্টচার্চ। হতাশা থেকে বেরুতে পারেনি বাংলাদেশ। বরং নিমজ্জিত হয়েছে আরও গভীর হতাশায়। নিউজিল্যান্ডের মাঠে স্বাগতিকদের সঙ্গে পেরে না উঠার তিক্ত ইতিহাস হয়েছে আরও ভারি।

শনিবার ক্রাইস্টচার্চে হেগলি ওভালে তাপমাত্রা ছিল বেশ কম, বইছিল শীতল হাওয়া। এমন পরিস্থিতি ব্যাট করতে যাওয়া বিপদ। কিন্তু টস হেরে বাংলাদেশকে করতে হয়েছে তাই। আগে ব্যাটিং করে মাত্র ২২৬ রান জড়ো হওয়ার পরই তাই ম্যাচের ফল অনুমেয় হয়ে পড়ে। বেলা বাড়লে ব্যাট করার জন্য দারুণ উইকেটে এই রান যে কিছুই নয় ৮৩ বল হাতে রেখে ম্যাচ জিতে তা দেখিয়েছে নিউজিল্যান্ড।

বাংলাদেশকে প্রায় গুঁড়িয়ে দিয়ে তারা জিতেছে ৮ উইকেটে। প্রথম ম্যাচের ফলও ছিল তাই। প্রথম ম্যাচের মতো পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে এবারও সেঞ্চুরি করে বাংলাদেশকে তুড়ি মেরে উড়িয়েছেন মার্টিন গাপটিল। এবার ৮৮ বলে ১১৮ রান করে ম্যাচ সেরা হয়েছেন তিনি।

সকালের ঘন্টাখানেক পরিস্থিতি ছিল বিরূপ। এটা কাটিয়ে দিতে পারলে মিলত ভালো কিছু। কিন্তু তা আর হয়নি। নিউজিল্যান্ডের মাঠে নেমে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের যা হয়। সেটাই হয়েছে আরেকবার। পেস-স্যুয়িংয়ে কাঁপাকাঁপি এদিনও চলেছে। দৃষ্টিকটুভাবে আউটের মিছিলও থামেনি। 

প্রথম ম্যাচে ১ রানে আউট হয়েছিলেন লিটন দাস, এদিনও তাই। তামিম ইকবাল করেছিলেন ৫ রান, এদিনও তাই। সেদিনও সৌম্য সরকারের সাবলীল শুরু থামে বাজে শটে, আজও তাই।  মিল আছে মুশফিকুর রহিমের বেলাতেও। সেদিন স্টাম্পে বল টেনে বোল্ড হয়েছিল। ১ রানে একবার জীবন পেয়েও এবারও তার ইনিংস শেষ হয়েছে এভাবেই।

এত ভুল করতে থাকলে ডুবে মরা কেউ ঠেকাতে পারে না। তবু ফের চেষ্টা করেছিলেন মোহাম্মদ মিঠুন। বড় মিলটা এখানেই। আগের ম্যাচের মতো আবারও দলের বিপর্যয়ে ত্রাতা হতে দেখা গেছে এই তরুণ ব্যাটসম্যানকে।

৪৮ রানে ৩ উইকেট পড়ার পর উঠেছিলেন। যখন ফিরেন তখন দলের রান ১৬৮। এরমাঝে ৬৯ বলে মিঠুন ৭ চার আর ১ ছক্কায় করেন ৫৭।  উইকেট ছিল ব্যাট করার জন্য বেশ ভালো। ক্রিজে গিয়েই হয়ত বুঝেছিলেন তিনি। কিন্তু দলের পরিস্থিতি যা ছিল তাতে দ্রুত রান বাড়ানো ছিল মুশকিল। মিঠুন তাই রয়েসয়ে খেলেছেন। ঝোপ বুঝে কোপ মারার মতো একদম আয়ত্তে বল পেলে তবেই উড়িয়েছেন। ৬ষ্ঠ উইকেটে সাব্বির রহমানের সঙ্গে এমন করেই গড়েন ৭৫ রানের জুটি।

লেগ স্পিনার টেড অ্যাস্টলকে ছক্কা মেরে ফিফটিতে পৌঁছার পর বেশিক্ষণ টেকেননি। পেশিতে টান পড়ে অস্বস্তিতে পড়েছিলেন, ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে ওই লেগ স্পিনারের বলেই বোল্ড হয়ে ফেরেন।

মাঝেসাঝে বাউন্ডারি আর প্রায়ই ডট বলের পসরা সাজিয়ে সাব্বির তবু দেখাচ্ছিলেন আশা। অনেকদিন থেকে ফিফটির দেখা না পাওয়া এই ব্যাটসম্যান দিচ্ছিলেন ভালো কিছুর আভাস। ৪৩ রান করে তিনি থেমেছেন নিজের দোষেই। ফার্গুসেনের পেসে পয়েন্টে লোপ্পা ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় তার সংগ্রাম।

এই দুজনের ব্যাটে পাওয়া রান নিয়ে যেন বিন্দুমাত্র লড়াইও করা যায় না বোলাররা প্রমাণে ব্যস্ত ছিলেন তা। শরীরী ভাষায় ছিল না বারুদ। গাপটিলের ডানা মেলার সঙ্গে বাংলাদেশের আরও নিস্তেজ হওয়ার দশা।

৭৫ বলে ১৬তম সেঞ্চুরি করা এই ব্যাটসম্যান কোন বোলারকেই পাত্তা দেননি। আগের ম্যাচে অপরাজিত থেকে খেলা শেষ করেছিলেন। এদিন আউট হয়েছেন। তবে তার আগে ৮৮ বলে ১১৮ রানের ইনিংসে ১৪ চার আর ৪ ছক্কায় সব উত্তেজনা মাটি করে দিয়ে যান। রান পেয়েছেন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনও। শেষ ম্যাচে বিশ্রাম নেওয়ার আগে ৬৫ রানে অপরাজিত থেকে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছেন।

স্বাগতিকদের এই দাপটের পর ২০ ফেব্রুয়ারি ডানেডিনে শেষ ওয়ানডে পরিণত হয়েছে কেবল নিয়মরক্ষার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ৪৯.৪ ওভারে ২২৬   (তামিম ৫ , লিটন ১, সৌম্য ২২, মুশফিক ২৪, মিঠুন, মাহমুদউল্লাহ ৭, সাব্বির ৪৩, মিরাজ ১৬, সাইফুদ্দিন ১০, মাশরাফি ১৩, মোস্তাফিজ  ৫* ; হেনরি ১/৩০,  বোল্ট ১/৪৯, গ্র্যান্ডহোম ১/২৫, ফার্গুসেন ৩/৪৩, অ্যাস্টল ২/৫২, নিশাম ২/২১)

নিউজিল্যান্ড : ৩৬.১ ওভারে ২২৯/২ (গাপটিল ১১৮, নিকোলাস ১৪, উইলিয়ামসন ৬৫* , টেইলর ২১* ; মাশরাফি ০/৩৭, সাইফুদ্দিন ০/৪৪, মিরাজ ০/৪২, মোস্তাফিজ ২/৪২, সাব্বির ০/২৮, সৌম্য ০/১০, মাহমুদউল্লাহ ০/২৫)

ফল: নিউজিল্যান্ড ৮ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মার্টিন গাপটিল।

সিরিজ: নিউজিল্যান্ড ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয়ী।

 

Comments

The Daily Star  | English

US urges China to keep Iran from shutting key trade route

JD Vance says US at war with Iran's nuclear programme, not Iran

1d ago