‘ভবন পুনর্গঠনকাজে নাগরিক সমাজ-বিশেষজ্ঞদেরও সম্পৃক্ত করতে হবে’

রাজধানীর চকবাজারে আগুনের ঘটনার এক মাসের মাথায় গত ২৮ মার্চ বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুন লাগার পর সরকার যেনো একটু নড়েচড়ে বসছে।সরব হয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর বিভিন্ন আশ্বাসবাণীর পর অগ্নিকাণ্ডরোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল দিয়েছেন দিকনির্দেশনা। এমন পরিস্থিতিতে আজ (২ এপ্রিল) দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনের কথা হয় বিশিষ্ট নগরপরিকল্পনাবিদ ও স্থপতি ইকবাল হাবিবের সঙ্গে।
Iqbal Habib
নগরপরিকল্পনাবিদ ও স্থপতি ইকবাল হাবিব। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর চকবাজারে আগুনের ঘটনার এক মাসের মাথায় গত ২৮ মার্চ বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুন লাগার পর সরকার যেনো একটু নড়েচড়ে বসছে।সরব হয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর বিভিন্ন আশ্বাসবাণীর পর অগ্নিকাণ্ডরোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল দিয়েছেন দিকনির্দেশনা। এমন পরিস্থিতিতে আজ (২ এপ্রিল) দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনের কথা হয় বিশিষ্ট নগরপরিকল্পনাবিদ ও স্থপতি ইকবাল হাবিবের সঙ্গে।

ইকবাল হাবিব বলেন, “একটি কথা পরিষ্কার মনে রাখতে হবে- যতোক্ষণ পর্যন্ত সরকারি সংস্থাগুলো অন্যায় কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাবে আবার সমান্তরালভাবে সেগুলো দূর করার চেষ্টা করবে- ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো ফলদায়ক পরিস্থিতি পাওয়া যাবে না। অর্থাৎ, এক দিকে নদী দূষণ করা হবে; অন্যদিকে, নদী পরিষ্কার করা হবে তাহলে তো কোনো লাভ নেই।”

তার মতে, রাজউক গুলশান-বনানী এলাকা জুড়ে আবাসিক ভবনগুলোকে বাণিজ্যিক ভবনে রূপান্তর করছে। তারা দেখছে না যে ভবনগুলোর ফায়ার সেফটি বা বিল্ডিং কোডসহ অন্যান্য যেসব বিধিবিধান রয়েছে সেগুলো যথাযথভাবে পালন করা হচ্ছে কী না। এটি একটি অসংগতি।

“আরেকটি বিষয় হলো: আমরা সব সময়ই বলছি যে একটি বিষয় নিয়ে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ করতে হয়। একটি দালান দুই ফুট ডানে গিয়েছে বা বামে গিয়েছে বা পাঁচ ফুট ওপরে উঠেছে- সেটি দেখা এখন যুক্তিযুক্ত নয়। এই মুহূর্তে জীবন বাঁচানো জরুরি।”

“এসব অনিয়ম একদিনে হয়নি” উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এগুলো রাজউকের দীর্ঘদিনের অন্যায়ের পুঞ্জিভূত ফল। আমাদের এখন মানুষ বাঁচানো প্রয়োজন। গতকালকে (১ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাও তাই ছিলো। আগুন নেভানো, আগুনের সংকেত এবং তা মোকাবেলা- এই তিনটি ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিয়ে আপাতত ভবনগুলোতে বসবাসযোগ্যতা নিশ্চিত করতে হবে।”

“সেই সঙ্গে ভূমিকম্পজনিত দুর্বলতা রয়েছে কী না তা নির্ধারণ করতে হবে। সে ক্ষেত্রেও সব ভবন বাদ দিয়ে এখন সুউচ্চ ভবন ও বাণিজ্যিক ভবনগুলোকে আগে পরীক্ষা করতে হবে। তারপর, ধীরে ধীরে সব ভবন পরীক্ষা করতে হবে।”

“গতকালকে দেখেছি বিভিন্ন সংস্থা ভবন পরিদর্শন করছে। তারা ভবনগুলোর নকশার গাফলতি পরীক্ষা করছে। এগুলো করতে বছরে পর বছর লেগে যাবে। তাই আমাদেরকে অগ্রাধিকার ঠিক করতে হবে। এই মুহূর্তে প্রধান কাজ হলো ভবনগুলোর দুর্বলতা চিহ্নিত করা। তারপর, সেগুলোর সমস্ত অনুশাসন যুক্ত করে সেগুলোকে পরিশীলিত করতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “এখন রাজউক মন্ত্রণালয়কে দোষ দিবে, মন্ত্রণালয় রাজউককে দোষ দিবে- এগুলো দেখতে দেখতে আমরা হতাশ হয়ে পড়েছি। এই অবস্থা থেকে বের হতে হবে। মন্ত্রণালয় থেকে আদেশ দিলে রাজউক তার নিয়মের হেরফের করে সেই কাজটি করে ফেলবে সেরকমের আইন কিন্তু রাজউকের নেই। মন্ত্রণালয়তো আইন এড়াতে পারে না।”

“আইনে বলা রয়েছে- বিশেষজ্ঞদের দিয়ে সমীক্ষা নির্ভর ও জনস্বার্থে যদি কোনো পরিবর্তন প্রয়োজন হয় তখন কেবল নকশার পরিবর্তন করা যাবে। তবে একজন চিঠি পাঠিয়ে দিলেন বা মন্ত্রী বলে দিলেন বলেই আইনের ব্যত্যয় করা যাবে না। এই ব্যত্যয়গুলো এখনো চলছে কেনো? মাননীয় মন্ত্রী সেই ব্যত্যয়গুলো বন্ধ করুন। পাশাপাশি এই তদন্তগুলো পরিচালনা করা হোক।”

“মানুষকে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে তিন মাস বা ছয় মাস সময় দিয়ে বলতে হবে” বলেও মনে করেন এই স্থপতি। তিনি বলেন, “নকশা অনুযায়ী ভবনগুলো ঠিক করেন। সেই সুযোগটা তাদেরকে দিতে হবে। কারণ এই চোর ধরার চেয়ে চোর যদি নিজেই ঠিক হয় তাহলে সেই সুযোগটি তাদেরকে দেওয়া যেতে পারে। আমরাতো চরমপন্থিদের অস্ত্র জমা দিয়ে তাদেরকে সৎ পথে আসতে দিয়েছি। এই প্রক্রিয়াটি সামাজিকভাবে বাংলাদেশেও গ্রহণযোগ্য সমাধান। অর্থাৎ ভবন মালিকদের তিন মাস সময় দিয়ে বলেন- যার যার ভবন দ্রুততম সময়ে ঠিক করে নেন। তা না হলে আমরা অভিযানে যাবো। তাহলে দেখা যাবে কাজ হচ্ছে।”

“যে রাজউকের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ সেই সংস্থাকে দিয়ে অভিযান চালিয়ে কোনো সুফল পাওয়া যাবে না,” বলেও মন্তব্য করেন এই নগরবিদ। বলেন, “আবারও বলছি- চোরকে দিয়ে চুরি ঠেকানো যায় না। সরকারি সংস্থার গাফলতিতেই আজকে এসব ঘটনা ঘটছে- তা সর্বজন স্বীকৃত। তাই তাকে দিয়েই এই পুনর্বিন্যাস করার সিদ্ধান্তটি ঠিক না।”

“আমি মনে করি, সরকারি সংস্থার পাশাপাশি নাগরিক সমাজ, বিশেষজ্ঞ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক- যারা কোনো দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন না তাদেরকে দিয়ে এই পুনর্গঠনের কাজটি করতে হবে। অর্থাৎ, শুধু রাজউক নয়, ভবন পুনর্গঠনকাজে নাগরিক সমাজ-বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করতে হবে,” যোগ করেন স্থপতি ইকবাল হাবিব।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

5h ago