আবু জায়েদ, লিটনরা আওয়াজ দিয়ে রাখলেন

টুর্নামেন্টের বিচারে ম্যাচটা গুরুত্বহীন। কিন্তু বিশ্বকাপের প্রস্তুতি মাথায় রাখলে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কয়েকজনকে যে বাজিয়ে দেখার দরকার ছিল খুব। তাতে আবু জায়েদ রাহি আর লিটন দাস নিজেদের অতি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে আলো ছড়িয়েছেন। আবু জায়েদ তো পাঁচ উইকেট নিয়ে নিজের সুতোর উপর ঝুলতে থাকা বিশ্বকাপের জায়গাটা অনেকটা শক্ত ভিতেই নিয়ে গেছেন। আর লিটন দাস দেখিয়েছেন ওপেনিংয়ে তিনিও সৌম্য সরকারের চেয়ে খুব কম কিছু না।
Abu jayed -Liton Das
ছবি: এএফপি

টুর্নামেন্টের বিচারে ম্যাচটা গুরুত্বহীন। কিন্তু বিশ্বকাপের প্রস্তুতি মাথায় রাখলে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কয়েকজনকে যে বাজিয়ে দেখার দরকার ছিল খুব।  তাতে আবু জায়েদ রাহি আর লিটন দাস নিজেদের অতি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে আলো ছড়িয়েছেন। আবু জায়েদ তো পাঁচ উইকেট নিয়ে নিজের সুতোর উপর ঝুলতে থাকা বিশ্বকাপের জায়গাটা অনেকটা শক্ত ভিতেই নিয়ে গেছেন। আর লিটন দাস দেখিয়েছেন ওপেনিংয়ে তিনিও সৌম্য সরকারের চেয়ে খুব কম কিছু না।

এই দুজনের নিজেদের দেখানোর দিনে বাংলাদেশ জিতেছে অনায়াসে। আগে ব্যাটিং নিয়ে পল স্টার্লিংয়ের সেঞ্চুরি আর উইলিয়াম পোর্টারফিল্ডের প্রায় সেঞ্চুরিতে ২৯২ করেও স্বস্তিতে থাকার উপায় ছিল না আইরিশদের। ব্যাটিং বান্ধব উইকেট, একপাশে ছোট বাউন্ডারি মিলিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে বুকের পাটা দেখানো ছিল বেশ কঠিন। পারেওনি তারা। টপ অর্ডারের প্রথম তিন জনের ফিফটিতে বাংলাদেশ ওই লক্ষ্য পেরিয়ে জিতেছে ৬ উইকেটে। হাতে তখনো বাকি ছিল ৪২ বল।

২৯৩ রানের লক্ষ্যে দুই ওপেনারই রানে বলে পাল্লা দিয়ে তুলে ফেলেন ১১৭ রান। ৫৩ বলে ৫৭ করে তামিম ইকবাল ফেরায় ভাঙে জুটি। রয়েসয়ে দায়িত্ব নিয়ে খেলতে থাকা লিটন নিজের রক্ষণ শক্ত রেখে খেলতে থাকেন চোখ ধাঁধানো সব শট। কোন রকমের জড়তা ছাড়া তরতরিয়ে বাড়াচ্ছিলেন রান।  নান্দনিক ব্যাটিংয়ের দ্যুতি ছড়িয়ে এগুচ্ছিলেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় তিন অঙ্কের দিকে।

কিন্তু ম্যাকার্থির স্লো ইয়র্কারে গড়বড় করে থামেন ৬৭ বলে ৭৬ করে। তাতে অবশ্য অসুবিধায় পড়েনি দল। তিন নম্বরে নেমে সাকিব আল হাসান আরও একবার দেখিয়েছেন এই পজিশনে তার কার্যকারিতা। সাকিব হয়ত করতে পারতেন আরও অনেক রান। কিন্তু পীঠের চোটে ৫১ বলে ৫০ করে মাঠ ছাড়তে হয়েছে তাকে। ফাইনালের আগে সাকিবের এভাবে মাঠ ছাড়া মোটেও সুখকর নয়। বাংলাদেশের ‘সুখী’ ম্যাচে এটাই একমাত্র ‘দুঃখী’ ছবি। সাকিবের চোট আসলেই কতটা গুরুতর তা এখন কিছুটা উদ্বেগের প্রশ্নও বটে।

সাকিবের মাঠ ছাড়ার আগেই একটা দারুণ ইনিংসের আভাস দিয়ে ফেরেন মুশফিকুর রহিম। ৩৩ বলে ৫ চারে ৩৫ করে মুশফিক ক্যাচ দিয়েছেন একদম বাজে শটে। লেগ স্টাম্পের বাইরের বল অকারণে ব্যাট লাগিয়ে ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে।

বোলিংয়ে জুতসই অবদান রাখলেও মোহাম্মদ মিঠুনের জায়গায় সুযোগ পেয়ে মোসাদ্দেক হোসেন হতাশ করেছেন ব্যাটিংয়ে। খোঁচা মারার এই দোষ বিশ্বকাপে সেরা একাদশে আসার ক্ষেত্রে তাকে নেতিবাচক পয়েন্ট যোগ করবে। তবে ২৯ বলে ৩৫ করে ব্যাটিং অনুশীলন সেরে ম্যাচটা শেষ করতে অসুবিধে হয়নি মাহমুদউল্লাহর।

সবচেয়ে মজার কথা তৃতীয় ম্যাচে গিয়ে এই প্রথম বল খেলার সুযোগ পেয়েছেন সাব্বির রহমান। ছক্কা মেরে ম্যাচ জয়ী শটটাও তার ব্যাট থেকে। তবে মাত্র ১০ বল খেলার সুযোগ পাওয়ায় সাব্বিরের অতৃপ্তি রয়েই গেল।

এর আগে আইরিশ ইনিংসে তোপ দাগিয়ে নায়ক ছিলেন  আবু জায়েদ। নতুন বল হাতে দ্বিতীয় ম্যাচ নেমেছিলেন। অভিষেকে উইকেটশূণ্য থাকা, বিবর্ণ বোলিং করায় প্রচণ্ড চাপ ছিল তার উপর। তাসকিন আহমেদের দলে ঢুকে যাওয়ার গুঞ্জনও তার জন্য ছিল বাড়তি হ্যাপা। সবটাই তিনি উড়িয়েছেন স্যুয়িংয়ের মুন্সিয়ানায়। শুরুতে বেশ কবারই ভুগিয়েছেন আইরিশদের। ৬ ওভারের প্রথম স্পেলে অনেকগুলো ভাল বল করলেও উইকেট পেয়েছেন বেশ বাজে এক বলে, আলগা বল দিয়ে মারও খেয়েছেন।

তবে শেষটায় দেখা গেছে তার ঝলক। স্লগ ওভারে মারমুখি আইরিশরা জায়েদের বুদ্ধির কাছেই উলটো মার খেয়েছে। পোর্টারফিল্ডকে ওয়াইডলেন্থে বল করে টেনে মেরে ফাঁদে ফেলেছেন জায়েদ। স্টার্লিং আর কেভিন ও’ব্রায়েনকে স্লোয়ারে কাবু করেছেন। গ্যারি উইলসনকে আউট করে তো তুলে নিয়েছেন পাঁচ উইকেট। এর আগে লিস্ট-এ ক্যারিয়ারেও যা ছিল না তার ঝুলিতে।

জায়েদের এমন নৈপুণ্য তাসকিনের জন্য হয়ত মন খারাপের কারণ। বিশ্বকাপ দলে অদল বদলের সম্ভাবনা যে বেশ কঠিন করে দিয়েছেন তিনি। আর হ্যাঁ জায়েদ আর লিটনের পারফরম্যান্সে ফাইনালের একাদশ গড়াও তো কঠিন হয়ে গেল। শুক্রবার ফাইনালে  সৌম্য আর মোস্তাফিজ ফিরলে কারা বাইরে যাচ্ছেন, সে প্রশ্নও এখন ছোট না।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

আয়ারল্যান্ড: ৫০ ওভারে ২৯২/৮ (স্টার্লিং ১৩০, ম্যাককলাম ৫, বালবার্নি ২০, পোর্টারফিল্ড ৯৪, ও’ব্রায়েন ৩, অ্যাডায়ার ১১, উইলসন ১২, ডকরেল ৪, ম্যাককার্থি ১* আবু জায়েদ ৫/৫৮, রুবেল ১/৪১, সাইফ ২/৪৩, মোসাদ্দেক ০/৩২, সাকিব ০/৬৫, মাশরাফি ০/৪৭)

বাংলাদেশ: ৪৩ ওভারে ২৯৪/৪ (তামিম ৫৭, লিটন ৭৬, সাকিব ৫০ আহত অবসর, মুশফিক ৩৫, মাহমুদউল্লাহ ৩৫*, মোসাদ্দেক ১৪, সাব্বির ৭*; অ্যাডায়ার ১/৫২, ম্যাককার্থি ১/৬১, লিটল ০/৬৭, র‍্যানকিন ২/৪৮, ডকরেল ০/৫৭)

ফল: বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী

Comments

The Daily Star  | English

Abu Sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

13h ago