বিশ্বকাপের আগে যে বিশ্বাসের খোঁজে বাংলাদেশ

Bangladesh Cricket Team
ফাইল ছবি: এএফপি

মাশরাফি মর্তুজা একদিন এক আড্ডায় বলছিলেন, ‘ভাই, এশিয়া কাপটা যদি জিততি পারতাম, তাইলে...’ তাহলে কেবল এশিয়া কাপটাই জেতা হতো না। সঙ্গে মিলত আসলে বিশ্বকাপে বড় কিছু করার বিশ্বাসও। সব সংস্করণ মিলিয়ে এর আগে ছয় ছয়বার ফাইনালে উঠে ছোট বড় কোন বহুজাতিক টুর্নামেন্টেরই যে শিরোপা জেতেনি বাংলাদেশ।  কয়েকবার ট্রফি জেতার খুব কাছে গিয়েও শেষ মুহূর্তের চাপ আর নেওয়া যায়নি। অদ্ভুত সব ভুলে গড়বড় করে তালগোল পাকিয়ে বেড়েছে একের পর এক আফসোস।

আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টের শিরোপা জেতা বাংলাদেশের জন্য খুব বড় কোন অর্জন হবে না। ফাইনালে প্রায় দ্বিতীয় সারির ওয়েস্ট ইন্ডিজ যে শক্তির বিচারে মাশরাফিদের থেকে অনেক পিছিয়ে তা দেখা গেছে আগের দুই ম্যাচে। এদের হারিয়ে কি আর এমন বাহাদুরি!

তবে গত বছর জানুয়ারি মাসে এরকমই প্রায় ধরে নেওয়া একটা শিরোপা যে হাতছাড়া হয়েছে ঘরের মাঠেই। এবারও সব ম্যাচ জিতে ফাইনালে যে পা হড়কাবে না, সেই নিশ্চয়তা কে দিচ্ছে?

ব্যাপারটা তাহলে কি দাঁড়াল?

কাপ জিতলে , ‘ওকে ঠিকাছে, জিতছ ভালো।’আর না জিতলে! সে তো গেল! বিশ্বাসের ঘরে বাসা-বাধা ঘুণপোকারা তো হল্লা করতে শুরু করবে। আয়ারল্যান্ডে গিয়ে বিশ্বকাপ প্রস্তুতি সারার মিশন পরিণত হতে পারে হিতে বিপরীতে।

ক্রিকেট খেলাটাই তো এমন। আপনি ব্যাটে বলের জম্পেশ প্রস্তুতি নিবেন। স্কিলের ঝালাই সারবেন একশো একশো পেয়ে। কন্ডিশনের হ্যাপায় ঠিকই মানিয়ে নেবেন শরীরকে। কিন্তু বড় মঞ্চে নেমে যদি বিশ্বাসে থেকে যায় ঘাটতি, বাকি সব দিয়েও তা পূরণ করা দুঃসাধ্য।

তারমানে আবার এই নয় যে, ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টের শিরোপা জিততে না পারলে বিশ্বকাপে গিয়ে বাংলাদেশ কিছুই করতে পারবে না। হয়ত বড় কিছুই করে ফেলতে পারে এরপরও। কিন্তু যারা খেলেন তীরে গিয়ে তরি ডুবিয়ে আসার তেতো স্মৃতি তাদের হানা দেওয়ারই কথা। বারবার ফাইনাল হাতছাড়া হওয়া তাদের মনের উপর হয়ত ফেলেছে এমন এক ছাপ, যাকে আপনি দুষ্টচক্রও বলতে পারেন। বিশ্বকাপের আগে একটা বিশ্বাস তাই পকেটে পুরে নেওয়া তাদের খুব দরকার। আর সে হিসেবে ত্রিদেশীয় সিরিজ জেতার চেয়ে বড় সুযোগ আর কি হতে পারে!

ক্রিকেটাররাও জানেন হেরে গেলে কেবল তাদের মনের খচখচানি বাড়বে, বিষয়টা এতেই মিটছে না। কানকথাও শুনতে হবে বিস্তর। হারলে বলাবলি হতে পারে, এমন পুচকে টুর্নামেন্ট জিততে না পারলে বিশ্বকাপে এদের নিয়ে আর কি বাজি!

এর আগে ২০০৯ সালে দেশে ত্রিদেশীয় এক টুর্নামেন্টে শ্রীলঙ্কাকে বাগে পেয়েও শেষ ওভারের গোলমাল পুড়িয়েছিল। ২০১২ সালে এশিয়া কাপ ফাইনালে দেশেই পাকিস্তানের কাছে ওই শেষ ওভারের হতাশা, ২ রানের হার। ২০১৬ সালে আবার এশিয়া কাপ। এবার টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ভারতের কাছে ট্রফি হাতছাড়া। সর্বশেষ গেল বছর ওয়ানডে এশিয়া কাপেও বাংলাদেশকে শেষ ওভারের হতাশায় পুড়িয়েছে ভারত। এর আগে গত বছর জানুয়ারিতে ফেভারিট হয়েও শ্রীলঙ্কার কাছে ফাইনালে নাস্তানাবুদ হওয়া আছে। আছে সে বছরই নিদহাস কাপ টি-টোয়েন্টিতে ভারতের কাছে শেষ বলে ছক্কা খেয়ে কেঁদে মরার ঘটনা।

এই ক’বছর এতগুলো তেতো স্মৃতি যাদের আছে। ফাইনাল আর শেষ ওভার শব্দ শুনলেও তাদের বুকে ধড়ফড় করার কথা।

তবে এবার বুকে সাহস রাখারও যথেষ্ট কারণ আছে। ফাইনালের আগে বাংলাদেশ দলের হালচাল বেশ রমরমাই। প্রথম পছন্দের একাদশ  টুর্নামেন্টে ভালোই নৈপুণ্য দেখিয়ে দিয়েছে। রিজার্ভ বেঞ্চ ঝালিয়ে নেওয়া হয়েছিল আইরিশদের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে। সেখানেও অপেক্ষমাণরা নেমে নিজেদের সামর্থ্যের আওয়াজ চড়া করেছেন।

তামিম ইকবালের সঙ্গে ওপেনিং জুটিতে দুই ম্যাচেই ভালো জুটি পেয়েছেন সৌম্য সরকার। নিজেও দুই ফিফটি করে জায়গা পোক্ত করার দাবি জানিয়েছেন। লিটন দাস নেমেও পেয়েছেন বড় জুটি। নান্দনিক ব্যাটিংয়ে রান তুলেছেন তিনিও। তিনিও যে সৌম্যের চেয়ে কম না, দেখিয়েছেন ভালোই।

মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ, মোহাম্মদ মিঠুনরা যা সুযোগ পেয়েছেন ব্যাটিংয়ে। তাতে ফিনিশিংয়ের সমস্যা আছে বটে তবে ছন্দহীনতার কোন আভাস নেই কারো।

মোস্তাফিজুর রহমানের পারফরম্যান্স নিয়ে প্রথম ম্যাচে যা ফিসফিসানি ছিল তা উড়ে গেছে পরের ম্যাচেই। নিজের শান-শওকত দেখিয়ে দিয়ে বিশ্রামের গেছেন শেষ ম্যাচে। আনকোরা আবু জায়েদ বিশ্বকাপ স্কোয়াডে কেন, এই প্রশ্ন জোরালো হওয়ার আগেই সে ম্যাচে পাঁচ উইকেট নিয়ে থামিয়েছেন  জায়েদ নিজে। প্রথম দুই ম্যাচে মাশরাফি, সাকিব, মিরাজ করে দেখিয়েছেন আসল জায়গায় কি করতে প্রস্তুত তারা।

সবই তাল মিলিয়ে চলছে। শেই হোপ, জেসন হোল্ডাররা কাজটা সহজ করতে দিবেন না নিশ্চিত। তবে সময়, পরিস্থিতি আর সামর্থ্য বলছে এবার আর পা পিচলে পড়ে যাওয়ার কথা না বাংলাদেশের।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh women's football team qualify for Asian Cup

Bangladesh women's football team made history as they qualified for the AFC Women's Asian Cup for the first time. 

27m ago