বন্ধ্যা পুরুষ মশায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ গবেষণা এখনো গবেষণাগারে

বন্ধ্যা পুরুষ মশাকে কাজে লাগিয়ে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা চলছে। আশা করা হচ্ছে এর মাধ্যমে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা কমানো যাবে। গবেষণা করছেন বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি গবেষণা কমিশনের খাদ্য ও বিকিরণ জীববিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের কীট জৈবপ্রযুক্তি বিভাগের বিজ্ঞানীরা।
Dr Kajla Seheli
গবেষণাগারে ড. কাজলা সেহেলী। ছবি: সংগৃহীত

বন্ধ্যা পুরুষ মশাকে কাজে লাগিয়ে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা চলছে। আশা করা হচ্ছে এর মাধ্যমে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা কমানো যাবে। গবেষণা করছেন বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি গবেষণা কমিশনের খাদ্য ও বিকিরণ জীববিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের কীট জৈবপ্রযুক্তি বিভাগের বিজ্ঞানীরা।

এ বিষয়ে গতকাল (৪ আগস্ট) দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনের কথা হয় গবেষণা দলের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. কাজলা সেহেলীর সঙ্গে। তিনি জানান, এই সময় সাপেক্ষ গবেষণা এখনো গবেষণাগারেই রয়েছে।

ড. সেহেলী বলেন, “আমাদের পদ্ধতির নাম ‘স্টেরাইল ইনসেক্ট টেকনিক’ বা ‘মেল স্টেরাইল টেকনিক’। এর মাধ্যমে পুরুষ মশাকে রেডিয়েশন দিয়ে বন্ধ্যা করা হয়। এই পদ্ধতিতে পুরুষ মশাকে বন্ধ্যা করে ছাড়া হয় প্রকৃতিতে। সঙ্গমের ফলে স্ত্রী মশা ডিম পারলেও তা নিষিক্ত হবে না। ফলে সেই মশার কোনো বংশধর আমরা পাচ্ছি না। সংক্ষেপে এটিই হচ্ছে ‘স্টেরাইল ইনসেক্ট টেকনিক’-র মূল বিষয়।”

“বিশ্বব্যাপী এভাবেই পোকামাকড়কে বন্ধ্যা করা হয়।”

তাহলে অন্যান্য দেশেও এই কার্যক্রম রয়েছে?- “হ্যাঁ, অন্যান্য দেশেও রয়েছে। অনেকে ভুল বুঝে মনে করছেন যে আমরা এটি উদ্ভাবন করেছি। আসলে তা নয়।  বাংলাদেশ আমরা ইমপ্লিমেন্ট করেছি। এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি পদ্ধতি।”

আপনারা কবে নাগাদ এই গবেষণার কাজ শুরু করেছিলেন?- “মশাতো থাকে প্রকৃতিতে। তাই এ কাজের শুরুতে আমাদের প্রয়োজন হয় গবেষণাগারে মশার প্রতিপালন। প্রকৃতির মশাকে আমরা গবেষণাগারের আবহাওয়ায় প্রতিপালন করতে পারবো কী না সেই কাজটি সাভারে শুরু হয় ২০০৭ সালে।”

তারপর  অগ্রগতি কতটা হলো?- “আমাদের প্রথম কয়েক বছরের অগ্রগতি ছিলো মশাকে গবেষণাগারে বাঁচিয়ে রাখা। একটি স্ত্রী মশার ডিম দেওয়া থেকে শুরু করে ডিম, লার্ভা, পিউপা ও পূর্ণাঙ্গ মশা- এই চারটি পর্যায় পার করে। এই চারটি পর্যায় গবেষণাগারে প্রতিষ্ঠিত করা এবং কৃত্রিমভাবে সেগুলোকে খাবার দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা।  প্রতিটি পর্যায়ে আমাদের গবেষণা করতে হয়েছে।”

“একটি মশাকে রেডিয়েশন দিয়ে বাইরে ছেড়ে দিলাম- বিষয়টি কিন্তু তা না। তার প্রকৃতিতে বাঁচার সক্ষমতা নিয়েও গবেষণাগারে পরীক্ষা করতে হয়। আমাদের প্রথম ধাপের গবেষণা ছিলো- অধিক সংখ্যক মশা গবেষণাগারে প্রতিপালন করা। দ্বিতীয় ধাপে ছিলো- মশাকে কী পরিমাণ রেডিয়েশন দেওয়া হলে সেই একই সঙ্গে প্রকৃতিতে বেঁচে থাকতে পারবে আবার প্রজনন ক্ষমতাও হারাবে।”

গবেষণা এখন কোন পর্যায়ে রয়েছে?- “এখন আমরা গবেষণাগার থেকে সেমিফিল্ড পর্যায়ে ট্রায়াল দেওয়ার জন্যে প্রস্তুতি নিচ্ছি। যদি আমাদেরকে যথাযথ অবকাঠামো লোকবল, অর্থ দেওয়া হয় তাহলে আমরা তা শুরু করতে পারবো। আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ হচ্ছে ‘সেমিফিল্ড ট্রায়াল’। একটি ছোট এলাকার মধ্যে এই মশাগুলোকে ছাড়া।”

এ বিষয়ে সরকার বা সিটি করপোরেশন- কারো সহযোগিতা চাওয়া হয়েছিলো?- “বর্তমানে ডেঙ্গু পরিস্থিতি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। পাশাপাশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান সাভারে পরমাণু শক্তি কমিশন গত ৩ আগস্ট পরিদর্শনে এসে আমাদের ‘মশা প্রতিপালন ব্যবস্থা’ দেখে গেছেন। আমাদেরকে সুনির্দিষ্টভাবে সমস্যা ও সেগুলো দূর করতে কী কী চাই, তা প্রস্তাব আকারে দিতে বলেছেন।   সহায়তার সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।”

এই বাস্তবতায় এখন আপনাদের করণীয় কী বলে ভাবছেন?- “আমাদের করণীয় হলো, গবেষণাগারে যে প্রাত্যহিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালু রয়েছে যেগুলো চালিয়ে যাওয়া এবং এর সঙ্গে আমরা সরকারি সহযোগিতা চাওয়ার জন্যে যে প্রস্তাবিত ফরম থাকে বা কীভাবে অ্যাপ্রোচ করতে হতে তা নিজেরা বসে ঠিক করবো- এই মুহূর্তে ঠিক কী কী দরকার।”

“এ কাজে জনবল চাইতে হবে। এসব কাজে ‘স্পেশালাইড’ লোক লাগবে। মশা প্রতিপালনে অনেক লোক দরকার। বিশেষ করে মাঠ পর্যায়ে লোক দরকার। এই মুহূর্তে কতোজন বিজ্ঞানী ও কতোজন স্টাফ দরকার, কতোটুকু জায়গা দরকার সেসব ঠিক করতে হবে।”

তার মানে বেশ সময় সাপেক্ষ ব্যাপার?- “জ্বি। সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। ডেঙ্গুর এই পরিস্থিতিতে আমরা রাতারাতি এখন কিছু করতে পারছি না। আমরা সহযোগিতা পেলে এ কাজে সফল হবো।”

এই গবেষণার কাজ যদি ২০০৭ সালে শুরু হয় তাহলে এখন প্রায় ১২ বছর। এই দীর্ঘ সময়ের গবেষণাকে কতোটুকু ফলদায়ক বলে মনে করছেন?- “দেখুন, গবেষণা বিষয়টি সময় সাপেক্ষ। বিশেষ করে লাইভ স্যাম্পল নিয়ে গবেষণা আরো সময় সাপেক্ষ। যেমন, মশাকে গবেষণাগারে প্রতিষ্ঠিত করতেই চার-পাঁচ বছর লেগে গেছে। মশা কোন প্রাণীর রক্ত খাবে সেটিও গবেষণার বিষয়।”

“আমাদেরকে এমন প্রশ্ন প্রায়ই শুনতে হচ্ছে যে কেনো ১২ বছর সময় লাগছে। এটি তো অনেক দীর্ঘ সময়। কিন্তু, যারা গবেষণার সঙ্গে জড়িত তারা জানেন লাইভ স্যাম্পল নিয়ে গবেষণা করা আরো সময় সাপেক্ষ। আমরা জানি যে এ কাজে সফল হবো।”

“আমি বলতে চাই- আমরা গবেষণাগারেই রয়েছি।”

আরো পড়ুন:

বন্ধ্যা পুরুষ মশায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ হবে: দাবি বিজ্ঞানীদের

Comments

The Daily Star  | English
Bangladeshi-Americans eager to help build new Bangladesh

July uprising and some thoughts of Bangladeshi-Americans

NRBs gathered in New Jersey showed eagerness to assist in the journey of the new Bangladesh forward.

7h ago